ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত মরক্কোয় চলছে উদ্ধারকাজ। ছবি: টুইটার
ভূমিকম্পের জেরে বিধ্বস্ত মরক্কো। হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। এই পরিস্থিতিতে সেখানে ফুটবল ম্যাচ বাতিল করা হয়েছে। ভূমিকম্পের সময় মরক্কোর ছিলেন ব্রাজিলের অনূর্ধ্ব-২৩ দলের ফুটবলারেরা। যদিও তাঁরা সুরক্ষিত রয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে বিশ্বের সবার কাছে সাহায্যের আবেদন করেছেন মরক্কোর ফুটবলার আশরফ হাকিমি।
মরক্কোর হয়ে বিশ্বকাপ খেলা হাকিমি সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, ‘‘খুব কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি আমরা। এই সময় একসঙ্গে চলতে হবে। একে অপরকে সাহায্য করতে হবে। যাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন তাঁদের পরিবারকে সমবেদনা। সবার কাছে অনুরোধ, মরক্কোর এই কঠিন পরিস্থিতিতে আমাদের পাশে থাকুন।’’
শনিবার রাতে ২০২৪ সালের আফ্রিকা কাপ অফ নেশন্সের যোগ্যতা অর্জন পর্বের খেলা ছিল মরক্কো ও লাইবেরিয়ার মধ্যে। সেই ম্যাচ বাতিল করেছে রয়্যাল মরোক্কান ফুটবল ফেডারেশন। পরবর্তী সময়ে কবে সেই খেলা হবে তা জানিয়ে দেওয়া হবে।
প্যারিস অলিম্পিক্সের যোগ্যতা অর্জনের জন্য মরক্কোতে প্রস্তুতি নিচ্ছে ব্রাজিলের অনূর্ধ্ব-২৩ ফুটবল দল। ভূমিকম্পের সময় ফুটবলারেরা হোটেলেই ছিলেন। ভূমিকম্প শুরু হতেই ফুটবলারদের ঘর থেকে বার করে সুরক্ষিত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। ফুটবলারেরা সুরক্ষিত থাকলেও আতঙ্কে রয়েছেন। তাঁদের দেশে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা করেছে ব্রাজিলের ফুটবল ফেডারেশন।
মরক্কোর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ভূমিকম্পে মারা গিয়েছেন ১০৩৭ জন। আহত অন্তত ১২০০ জন। তাঁদের মধ্যে ৭২১ জনের অবস্থা সঙ্কটজনক। তাই মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে পারে বলে আশঙ্কা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, সে দেশের স্থানীয় সময় রাত ১১টা ১১ মিনিটে ভূমিকম্প হয়। ১৯ মিনিট পর হয় আর একটি আফটারশক। সেই কম্পনের মাত্রা ছিল ৪.৯। রিখটার স্কেলে ভূকম্পনের মাত্রা ছিল ৬.৮। আমেরিকার ভূতত্ত্ব সর্বেক্ষণ বিভাগ জানিয়েছে, ভূমিকম্পের কেন্দ্র পর্যটন শহর মারাক্কেশ থেকে ৭১ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে হাই অ্যাটলাস পর্বতে। ভূপৃষ্ঠ থেকে ১৮.৫ কিলোমিটার গভীরে রয়েছে সেই কেন্দ্র। ভূমিকম্পের কেন্দ্র প্রত্যন্ত হাই অ্যাটলাস পর্বতে হলেও তার প্রভাব পড়েছে বহু দূর পর্যন্ত। ভয়ঙ্কর ক্ষতিগ্রস্ত মারাক্কেশ শহর। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল থেকে প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার দূরে রাজধানী রাবাতেও কম্পন অনুভূত হয়েছে। কাসাব্লাঙ্কা, ইসাউইরা শহরেও কম্পন অনুভূত হয়েছে।
ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মারাক্কেশের মেদিনা এলাকা। ১০৭০-৭২ সাল নাগাদ এর পত্তন হয়েছিল। এখানে রয়েছে বেশ কিছু ঐতিহাসিক স্তম্ভ, সৌধ, যা ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই মেদিনাকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের তকমা দিয়েছে ইউনেস্কো। এর আগে মরক্কোয় শেষ বার বড়সড় ভূমিকম্প হয়েছিল ২০০৪ সালে। ভূকম্পনের মাত্রা ছিল ৬.৩। কেন্দ্র ছিল বন্দর শহর আল হোসেইমা। মারা গিয়েছিলেন ৬০০ জন। মরক্কোর ইতিহাসে সব থেকে ভয়ঙ্কর ভূমিকম্প হয়েছিল ১৯৬০ সালে। দেশের পশ্চিমের শহর আগাদিরে ছিল কেন্দ্র। সে সময় মারা গিয়েছিলেন অন্তত ১২ হাজার মানুষ। ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেড্রো স্যাঞ্চেজ, ফরাসি প্রধানমন্ত্রী ইমানুয়েল মাকরঁ, ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জও।