সফল: লিভারপুলের দ্বিতীয় গোল করার পরে সালাহ। রয়টার্স
চ্যাম্পিয়ন্স লিগ
লিভারপুল ২ রেঞ্জার্স ০
ইন্টার মিলান ১ বার্সেলোনা ০
আয়াখ্স ১ নাপোলি ৬
অবশেষে স্বস্তি ফিরল য়ুর্গেন ক্লপের দলে। ঘরের মাঠ অ্যানফিল্ডে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ম্যাচে দাপুটে জয় ছিনিয়ে নিল লিভারপুল। ২-০ গোলে রেঞ্জার্সকে হারিয়ে নক-আউটের পর্বের দিকেও পা বাড়িয়ে রাখল তারা।
পাশাপাশি ইন্টার মিলানের কাছে হারের পরে বার্সেলোনার ম্যানেজার জ়াভি অভিযোগ করলেন, তাঁরা চরম অবিচারের শিকার। মঙ্গলবার রাতে ইন্টার মিলানের মাঠে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ম্যাচে এক গোলেহেরেছে বার্সা।
মঙ্গলবার রেঞ্জার্সের প্রচুর সমর্থক অ্যানফিল্ডে জড়ো হয়েছিলেন প্রিয় দলের জন্য গলা ফাটাতে। তাদের সামনে উত্তেজক ফুটবল খেলতে পারেনি স্কটিশ দলটি। বরং আরও বড় ব্যবধানে জেতা উচিত ছিল লিভারপুলের। মাত্র ৭ মিনিটেই দুর্দান্ত ফ্রি-কিক থেকে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন ট্রেন্ট আলেকজান্ডার-আর্নল্ড। দ্বিতীয়ার্ধের ৮ মিনিটে পেনাল্টি থেকে দ্বিতীয় গোল করেন মহম্মদ সালাহ।
গ্রুপ ‘এ’-তে রেঞ্জার্স এখনও প্রথম পয়েন্ট পাওয়ার অপেক্ষায়। আয়াখ্সের থেকে তিন পয়েন্টে এগিয়ে লিভারপুল এখন দ্বিতীয় স্থানে। ৩ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট তাদের। শীর্ষে নাপোলি। ৩ ম্যাচে ৯ পয়েন্ট। মঙ্গলবার রাতে নাপোলি ৬-১ ব্যবধানে উড়িয়ে দেয় আয়াখ্সকে। এক গোলে পিছিয়ে পড়েও দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন ঘটায় দিয়েগো মারাদোনার স্মৃতিজড়িতইটালীয় ক্লাবটি।
১৯৬৪-র পরে এত বড় ব্যবধানে কোনও প্রতিযোগিতাতেই হারেনি আয়াখ্স। মহম্মদ কুদুসের গোলে এগিয়ে গিয়েছিল ডাচ দল। তখন কেউ ভাবেনি, পাল্টা গোলের ঝড়ের মুখে পড়তে চলেছে তারা। জিয়াকোমো রাসপাদোরি প্রথমে সমতা ফেরান। তার পর প্রথমার্ধেই ৩-১ করে ফেলেন জিয়োভান্নি দি লোরেঞ্জো এবং পেতর জিয়োলেনস্কি। দ্বিতীয়ার্ধে তাঁর দ্বিতীয় গোলটি করে রাসপাদোরি, পরের গোলটি সাজিয়ে দেন কিভিচা ভারাশেলিয়ার জন্য। ৮১ মিনিটে শেষ গোলটি করেন সিমিয়োনে। এ বছরে অপ্রতিরোধ্য গতিতে ছুটছে নাপোলি। ইটালীয় লিগে এবং চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রুপে তারা শীর্ষে রয়েছে।
বড় ব্যবধানে জিতেছে বায়ার্ন মিউনিখও। জার্মানির ক্লাব ৫-০ হারিয়েছে ভিক্টোরিয়া পিয়োজ়েন-কে। জোড়া গোল করে নায়ক লেরয় সানে। অন্যান্য গোলদাতা সের্গে ন্যাব্রি, সাদিয়ো মানে এবং এরিক-ম্যাক্সিম ছুপো মোতিং। দলের দুই প্রধান ফুটবলার জোশুয়া খিমিচ এবং টমাস মুলার কোভিড আক্রান্ত হয়ে ছিটকে যাওয়ার উদ্বেগের মধ্যেই এই জয় মনোবল বাড়াবে বায়ার্নের। লেয়নডস্কিকে হারানোর পরে চলতি মরসুমে তাদের ছন্দে ব্যাঘাত ঘটেছে। সেই ধাক্কা সামলে ওঠার সাহস দিতে পারে এই বড় জয়।
বার্সেলোনার বিরুদ্ধে প্রথমার্ধের স্টপেজ টাইমে হাকান চালহানোলুর গোলে জেতে ইন্টার। এর পর দ্বিতীয়ার্ধে বার্সার পেদ্রি গোল শোধ করলেও ভিডিয়ো অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারির (ভার) মাধ্যমে তা বাতিল করে দেওয়া হয়। আনসু ফাতি হ্যান্ডবল করেছিলেন বলেই এমন সিদ্ধান্ত। এই পরাজয়ের ফলে গ্রুপ ‘সি’-তে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বার্সা। ইন্টারের থেকে তিন পয়েন্টে পিছিয়ে এবং এ বারও চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায়ের আশঙ্কা রয়েছে জাভির দলের।
সান সিরোতে মঙ্গলবার রাতটাই ছিল ভার বিতর্কের। তার মধ্যে সব চেয়ে উল্লেখযোগ্য অবশ্যই ৬৭ মিনিটে পেদ্রির গোল নাকচ হওয়া। ভিড়ের মধ্যে আনসু ফাতি হাত তুলে ছিলেন এবং পেদ্রির শট তাঁর আঙুলে লাগে। ভারের মাধ্যমে গোল বাতিল হয়।
জাভি তর্ক জুড়ে দেন রেফারির সঙ্গে, তাঁকে সেই কারণে কার্ডও দেখতে হয়। পরে বার্সা কিংবদন্তি বলেন, ‘‘রেফারির উচিত ব্যাখ্যা করা যে, কেন তিনি এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। তাতে পুরো ব্যাপারটায় অনেক বেশি মানবিকতা যোগ করা যেতে পারে।’’ যোগ করেন, ‘‘আজ আমি সত্যিই অসন্তুষ্ট। আমার মতে, চূড়ান্ত অবিচার পেলাম আমরা।’’
এই ম্যাচে বেশি চাপে ছিলেন অবশ্য জাভির প্রতিপক্ষ ম্যানেজার সিমোনে ইনজাঘি। ‘সেরি আ’-তে নবম স্থানে রয়েছে ইন্টার। আট ম্যাচের চারটিতে হেরেছে। দুরন্ত ছন্দে থাকা রবার্ট লেয়নডস্কিকে আটকানোর অগ্নিপরীক্ষাও ছিল সিমোনের সামনে। কিন্তু পরিস্থিতি পাল্টে গেল ম্যাচ জেতার পরে। এখন উল্টে চাপে পড়ে গেল বার্সেলোনাই। যারা লেয়নডস্কিকে পেয়ে টগবগে ঘোড়ার মতোই ছুটছিল।
জাভি জানেন, আট দিনের মধ্যে ঘরের মাঠে ইন্টারের সঙ্গে ফিরতি ম্যাচের উপরে নির্ভর করছে তাঁদের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ভবিষ্যৎ, ‘‘আমাদের সামনে এখন তিনটি ফাইনাল। এই ম্যাচটা হারলাম কিন্তু সামনের তিনটির মধ্যে দু’টি ঘরের মাঠে। তিনটিই ফাইনাল।’’ যোগ করেন, ‘‘আরও তীব্রতা দেখাতে হবে আমাদের। আত্মসমালোচনাও দরকার। প্রথমার্ধে ভাল খেলতে পারিনি আমরা। তবে যা ঘটল, তাতে আমরা ক্ষুব্ধও।’’