ফাইল চিত্র।
থিবো কুর্তুয়া গোলের নীচে অপ্রতিরোধ্য না হয়ে উঠলে শনিবার প্যারিস থেকে হয়তো চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ট্রফি নিয়ে ফিরত লিভারপুল। যদিও মহম্মদ সালাহদের গুরু য়ুর্গেন ক্লপ ফাইনালে আরও একবার রিয়ালের কাছে হারে আদৌ হতাশ হচ্ছেন না। উল্টে জানিয়ে দিয়েছেন, ‘দ্য রেডস’ নিজেদের শক্তি বাড়িয়ে পরের বার প্রত্যাঘাত করবে। হুঙ্কারের ভঙ্গিতে তিনি ঘোষণা করেন, পরের বার ইস্তানবুলে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালও লিভারপুল খেলবে এবং এখন থেকেই যেন তাঁর দলের জন্য হোটেল বুক করে রাখা হয়।
সাংবাদিক সম্মেলনে ক্লপ বলেন, ‘‘ফাইনালে ওঠাও তো কম বড় কৃতিত্ব নয়। হতে পারে যে কাঙ্ক্ষিত ফল প্রাপ্য ছিল, সেই লক্ষ্যে দল পৌঁছতে পারেনি, কিন্তু তাতে এই লড়াই মূল্যহীন হতে পারে না।’’ যোগ করেন, ‘‘মনের মধ্যে অদ্ভুত একটা বিশ্বাস তৈরি হয়ে গিয়েছে যে, আগামী বছর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে আবারও খেলবে লিভারপুল। এই দলের জার্সি পরে যারা মাঠে নামে, তাদের লড়াকু মানসিকতা সম্পর্কে এখনও কারও পূর্ণ ধারণা তৈরি হয়নি। আগামী বছর অনেক বেশি শক্তিশালী এব পরিণত হয়ে এই মঞ্চে ফিরে আসবে লিভারপুল। আমি তো বলব, সামনের বছর ফাইনাল হবে ইস্তানবুলে। এখন থেকেই লিভারপুল দলের জন্য একটা হোটেল বুক করে রাখা হোক।’’
এ দিকে, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল কেন্দ্র করে শনিবার প্যারিস কার্যত যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল। বৈধ টিকিট না থাকা সত্ত্বেও অসংখ্য লিভারপুল সমর্থক স্টেডিয়ামে প্রবেশ করার চেষ্টা করাতেই এত বড় বিপত্তি!
যে ঘটনা নিয়ে ফ্রান্সের আভ্যন্তরীণ মন্ত্রী জের দারমেঁ তোপ দেগেছেন লিভারপুল সমর্থকদের দিকে। তিনি জানান, লিভারপুলের ভক্তরা বিনা টিকিটে স্টেডিয়ামে প্রবেশের চেষ্টা করায় ঝামেলার সূত্রপাত হয়েছিল। যে কারণে ফাইনাল ম্যাচ শুরু হয় নির্ধারিত সময়ের ৩৫ মিনিট পরে!
অনভিপ্রেত এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দর্শকদের প্রতি সহানুভূতি দেখিয়েছে ইউরোপীয় ফুটবলের নিয়ামক সংস্থা। তাদের বক্তব্য, বহু ফুটবলপ্রেমী নিজের অজান্তে জাল টিকিট কিনে নেওয়ায় এত বড় বিপত্তি ঘটেছে। যে টিকিট প্রবেশদ্বারে রাখা যন্ত্র গ্রাহ্য না করায় তাঁরা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। উয়েফা জানিয়েছে, সেই বিষয় নিয়ে তদন্ত করা হবে। রবিবার লিভারপুল ক্লাবও এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘‘স্টেডিয়ামের বাইরে যে ভাবে হেনস্তা করা হয়েছে আমাদের ক্লাবের সমর্থকদের, তা অত্যন্ত অপমানজনক বলে মনে করা হচ্ছে। নিরাপত্তাও ঠিক ছিল না। তা নিয়ে আমরা নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।’’
ক্লপের কোচিংয়ে লিভারপুল এই নিয়ে তিন বার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল খেলল। প্রথম বার ২০১৭-’১৮ সালে তারা রিয়ালের কাছেই হার মানে। কিন্তু পরের মরসুমে টটেনহ্যাম হটস্পারকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় ক্লপের দল। সেই প্রসঙ্গ টেনে লিভারপুল ম্যানেজার বলেছেন, ‘‘সে ভাবে দেখলে ফাইনালে আমরা ভাল ফুটবল খেলেছি, কিন্তু সেটা কোনও সময়েই নিখুঁত ছিল না। রিয়াল অনেক বুদ্ধি করে যেমন পাল্টা আক্রমণে উঠেছে, তেমনই আমাদের লম্বা বলের আক্রমণগুলো নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছে। আর কুর্তুয়া গোলের নীচে যেরকম দুর্ভেদ্য হয়ে উঠেছিল, সেটাই ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দেয়।’’
যদিও নিজের দলের ফুটবল নিয়ে কোনও অভিযোগ নেই ক্লপের। তিনি বলেছেন, ‘‘০-১ পিছিয়ে পড়ার পরেও ফুটবলাররা হাল ছাড়েনি। বিশেষ করে, পাল্টা আক্রমণে আমরা বেশ কয়েকবার রিয়াল রক্ষণকে চাপে ফেলে দিয়েছি। তবে এক একটা ম্যাচে ভাল খেলেও ফল পাওয়া যায না। এই ম্যাচ সেই তালিকাতেই থাকবে।’’
সোমবার লিভারপুল ক্লাব এই মরসুমে লিগ কাপ এব এফএ কাপ জয়ের উৎসব পালন করবে। ক্লপ বলেন, ‘‘কাল সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরে এই হতাশাও অনেক কমে যাবে।’’ যোগ করেন, ‘‘ফুটবলাররাও বুঝতে পারবে, এই ব্যর্থতায় কোনও কিছু শেষ হয়ে যাচ্ছে না। এখনও পর্যন্ত ওরা যা করেছে, সেই কৃতিত্ব ওদের থেকে কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। বরং উৎসব পালনের মধ্যে দিয়ে ওরা নতুন মরসুমে আরও কিছু ভাল করার শপথ নিবে। ওদের থেকে সেই প্রতিশ্রুতি চাই।’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।