কিয়ানের ছোটবেলা নিয়ে প্রাক্তন কোচ ছবি টুইটার
ডার্বিতে নতুন নায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ হয়েছে কিয়ান নাসিরির। শনিবার আইএসএল-এর কলকাতা ডার্বিতে হ্যাটট্রিক করে নায়কের মর্যাদা পাচ্ছেন প্রাক্তন ফুটবলার জামশিদ নাসিরির ছেলে। ডার্বিতে পঞ্চম হ্যাটট্রিকের নজির গড়লেন তিনি। এত কম বয়সে কেউ এর আগে হ্যাটট্রিক করেননি।
অথচ, বছর দুয়েক আগে একটি সিদ্ধান্ত আজ সত্যি হয়ে গেলে সবুজ-মেরুন জার্সিতে খেলার কথাই নয় কিয়ানের। এত দিনে হয়ত অন্য কোনও ক্লাবের হয়ে খেলতে দেখা যেত তাঁকে। মোহনবাগান যুব দলের প্রাক্তন কোচ নাসিম আলি জানালেন, বছর দুয়েক আগে আর একটু হলেই জর্জ টেলিগ্রাফে সই করে ফেলেছিলেন নাসিম। শেষ মুহূর্তে বাবা এবং তৎকালীন মোহনবাগানের ফুটবল সচিব বিদেশ বসুর কথায় সিদ্ধান্ত বদলান।
কী হয়েছিল সেই সময়? আনন্দবাজার অনলাইনকে নাসিম জানালেন, “তখন মোহনবাগানের অনূর্ধ্ব-১৯ দল একটি টিভি চ্যানেল আয়োজিত ফুটবল প্রতিযোগিতায় খেলছে। আমি সেই দলের কোচ। দলে ছিল কিয়ানও। সেমিফাইনাল ম্যাচের আগের দিন এসে হঠাৎই বলল, ও জর্জের অনুশীলনে যাবে। সেই সময় ময়দানের কোনও ভাল ক্লাবের হয়ে খেলার নেশা ওর মধ্যে চেপে বসেছিল। বলেছিল, জর্জের অনুশীলনে না গেলে ওরা ওকে সই করাবে না। তাই আজ ও অনুশীলন করবে না।”
নাসিমের সংযোজন, “আমি একটু অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। স্বাভাবিক ভাবেই, দলের একটা ভাল ফুটবলার এ ভাবে চলে গেলে যে কোনও কোচ ঘাবড়ে যাবে। আমি তখনই বিদেশদা এবং জামশিদের সঙ্গে কথা বলি। ওরাই পর দিন এসে কিয়ানকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে মোহনবাগানে রেখে দেন। বলেন, এখানেই ওর ভবিষ্যৎ। এখানে খেলা চালিয়ে গেলে ভবিষ্যতে সিনিয়র দলের দরজাও ওর জন্যে খুলে যাবে। আমরাই ওকে সে ব্যাপারে সাহায্য করব।”
তখনকার মতো সে কথা মেনে নেন কিয়ান। ওই একটা সিদ্ধান্তই তাঁর জীবন বদলে দেয়। সেই ফুটবল লিগে ভাল খেলার পর মোহনবাগান কর্তারা নাসিমকে জানান, যুব দলের কিছু ফুটবলারকে সিনিয়র দলে পাঠাতে। গোয়ায় দলের প্রাক-মরসুমে যোগ দিতেন তাঁরা। কিবু ভিকুনার সেই মোহনবাগান দলে মোট ছ’জনকে পাঠানো হয়েছিল। সেখান থেকেই কিবু বেছে নেন কিয়ান, শেখ সাহিল, শুভ ঘোষ এবং দীপ সাহাকে। সাহিল এবং শুভ ঘোষ আগেই ডার্বিতে খেলে নজর কেড়েছিলেন। এ বার নায়ক হয়ে গেলেন কিয়ানও।
সেই ৯-১০ বছর থেকে কিয়ানকে দেখছেন নাসিম। তাঁর কোন বিষয়টা আলাদা করে নজরে পড়েছে তাঁর? নাসিম বললেন, “ওর টেকনিকটা খুব ভাল। পাশাপাশি বল নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। লিস্টন কোলাসোকে সবাই দেখেছেন কী ভাবে ডান দিকে বল নিয়ে কাট করে ভেতরে ঢুকে এসে দ্বিতীয় পোস্টে বল রাখে। সেই একই কাজ করে কিয়ানও। ও ডান পায়ের ফুটবলার। শরীরের পজিশনও ঠিক জায়গায় রাখতে পারে।”
বাবা জামশিদের ভূমিকাও অস্বীকার করছেন না নাসিম। বলেছেন, “বাবা ফুটবলার হওয়ায় উনিই ছেলেকে সব থেকে ভাল গাইড করেছেন। খেলার সময় ক্রমাগত উৎসাহিত করতে। আমরা কোচ থাকাকালীন কোনও দিন উনি বলেননি ছেলেকে এটা করাও, ওটা করাও। আমাদের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। আমরা যেটা চাইতাম, সেটাই করাতাম কিয়ানকে দিয়ে। উনি কোনও দিন বাধা দিতেন না।”