ছবি টুইটার।
এই ডার্বির আগে আমি বলেছিলাম, এটিকে-মোহনবাগানের যে আক্রমণশক্তি, তার বিরুদ্ধে কেবল রক্ষণ করেই হার বাঁচানো যাবে না। লাল-হলুদ বাহিনী সেই ভুলটাই করে হেরে বসল।
আমি নিজে গোলকিপার ছিলাম। তাই জানি আক্রমণে জোরদার এই ধরনের প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে রক্ষণ মজবুত করতে গেলে গোলকিপারকে দায়িত্ব নিতে হয়। সেটাও হতে দেখলাম না। গত তিন বছরে আইএসএল ও আই লিগ মিলিয়ে টানা পাঁচ বার সবুজ-মেরুনের কাছে হেরে যন্ত্রণা আরও বাড়াল এসসি ইস্টবেঙ্গল। আমাদের সময়ে এ রকম হলে তাঁবুতে সমর্থকদের রোষ আছড়ে পড়ত। এখন দেখছি কর্তা, লগ্নিকারী সবাই চুপ।
এই ম্যাচে দরকার ছিল রক্ষণের পাশাপাশি দ্রুত প্রতি-আক্রমণে বিপক্ষের রক্ষণে হানা দিয়ে কাজের কাজ গোলটা করে আসতে হবে। কিন্তু ২৫ মিনিটে মার্সেলো রিবেইরো ও ৮০ মিনিটে হামতে সহজ গোলের সুযোগ নষ্ট করে বিপত্তি বাড়াল।
ন’মিনিটে রাইট ব্যাক অঙ্কিত মুখোপাধ্যায় চোট পেয়ে উঠে গেল। বুঝে পাই না, দলের ফিটনেসের অবস্থা কোন অবস্থায়? অমরজিতকে নামানো হল, অথচ সে ওই জায়গার ফুটবলারই নয়। লিস্টন কোলাসো ও হুগো বুমোস গোটা ম্যাচে এসসি ইস্টবেঙ্গলের ওই রাইট ব্যাকের জায়গাটাকেই বেছে নিল। একটা পেনাল্টিও হল অমরজিতের জন্য। ভাগ্য ভাল, ডেভিড উইলিয়ামস পেনাল্টিটা বাইরে মেরেছে। লিস্টনের শট কখনও ক্রসপিসে লাগল, কখনও হীরা মণ্ডল গোললাইন থেকে ফেরাল।
আধুনিক ফুটবলে উইং হাই ও উইং ব্যাক যদি সচল না হয়, তা হলে ম্যাচ জেতার আশা না করাই ভাল। লাল-হলুদের উইং হাফেরা বিপক্ষকে আমাদের রক্ষণে এসে দাপাতে দিয়েছে। আর উইং ব্যাকেরা ওভারল্যাপেই যেতে পারেনি। সে কারণেই কেবল ডিফেন্স করে ম্যাচ বাঁচানো যায়নি। আর কোচ কেন উইং হাফে রফিককে শুরু থেকে নামালেন না তাও বোঝা গেল না। এটিকে-মোহনবাগান যখন লাল-হলুদ রক্ষণে একের পর আক্রমণ শানাচ্ছে, তখন দরকার ছিল বলটা ধরে খেলার গতিটা মন্থর করে বুমোসদের ছন্দ নষ্ট করা। সেই বল ধরে খেলার ফুটবলার কোথায়?
তবে এর মধ্যে দু’জন আমার চোখ টানল। প্রথম জন, এটিকে-মোহনবাগানের কিয়ান নাসিরি। আমার বন্ধু জামশেদের ছেলেটা শান্ত মাথায় দু’পায়ে যে ভাবে গোল করে ডার্বিতে হ্যাটট্রিক করে নায়ক হল, তা কুর্নিশ করার যোগ্য। ওকে জন্মাতে দেখেছি। ছেলেটা মাথা ঠান্ডা রেখে কোনও দিকে মন না দিয়ে খেলে গেলে অনেক দূর যাবে। দ্বিতীয় জন এসসি ইস্টবেঙ্গলের লেফ্ট ব্যাক হীরা মণ্ডল। ছেলেটার অনেক সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে, কিন্তু হৃদয় দিয়ে দলের জন্য লড়তে পিছপা নয়।
এ বারের মতো ডার্বি শেষ। আশা করি, আগামী বছর যে প্রতিযোগিতায় খেলি না কেন, ক্লাব ও লগ্নিকারীদের লড়াইয়ের ফল ভোগ না করে দল। দল গড়তে না জানলে সেই দায়িত্ব না নেওয়াই শ্রেয়। আর যদি এ রকমই সবার শেষে দল গড়ে আইএসএল খেলার রাস্তা খোঁজা হয়, তা হলে আই লিগ, কলকাতা লিগ খেলুক আমার ইস্টবেঙ্গল। এ ভাবে আইএসএলে লজ্জা বাড়ানোর কোনও মানে হয় না।
এটিকে-মোহনবাগান: অমরিন্দর সিংহ, প্রবীর দাস, প্রীতম কোটাল, তিরি, শুভাশিস বসু,কার্ল ম্যাকহিউ, দীপক টাংরি (কিয়ান নাসিরি), মনবীর সিংহ, হুগো বুমোস, লিস্টন কোলাসো, ডেভিড উইলিয়ামস (লেনি রদ্রিগেস)।
এসসি ইস্টবেঙ্গল: অরিন্দম ভট্টাচার্য, অঙ্কিত মুখোপাধ্যায় (অমরজিৎ কিয়াম), আদিল খান, ফ্রানিয়ো পর্চে, হীরা মণ্ডল, নওরেম সিংহ (সেম্বোই হাওকিপ), ড্যারেন সিডোয়েল (মহম্মদ রফিক), সৌরভ দাস, ওয়াহেংবাম লুয়াং, আন্তোনিয়ো পেরোসেভিচ (শুভ ঘোষ), মার্সেলো রিবেইরো (লালরিনলিয়ানা হামতে)।