Irfan Pathan

Irfan Pathan: দিদিকে সেলাম জানিয়ে শহরে এসে ইরফান বললেন, মহমেডানকে আইএসএলে দেখতে চাই

এর আগে ক্রিকেটার হিসেবে অনেক বার তিনি এ শহরে এসেছেন। এ বার এলেন মহমেডানের দূত হিসেবে। কলকাতায় এসেই মাতিয়ে দিলেন ইরফান পাঠান।

Advertisement

অভীক রায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০২২ ২১:১৯
Share:

মহমেডান ক্লাবে ইরফান। রয়েছেন রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস এবং মনোজ তিওয়ারিও। নিজস্ব চিত্র

এর আগে ক্রিকেটার হিসেবে অনেক বার তিনি এ শহরে এসেছেন। এ বার এলেন মহমেডানের দূত হিসেবে। কলকাতায় এসেই মাতিয়ে দিলেন ইরফান পাঠান। সোমবার সন্ধেয় সমর্থকদের সঙ্গে বসে মহমেডানের ম্যাচের লাইভ স্ট্রিমিং দেখলেন তিনি। দেদার নিজস্বীর আবদার মেটালেন। তার আগে সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়ে দিলেন, মহমেডানকে অদূর ভবিষ্যতে আইএসএলে খেলতে দেখতে চান।
ক্রিকেটার হলেও ইরফানের উদ্দেশে প্রথম প্রশ্নই ভেসে এসেছিল রাজনীতি নিয়ে। সাম্প্রতিক কালে অনেক প্রাক্তন খেলোয়াড়ই রাজনীতিতে এসেছেন। তাঁকেও কি সেই ভূমিকায় দেখা যাবে? ইরফান বললেন, “অনেকের কাছ থেকেই প্রস্তাব এসেছে। কিন্তু আমি যাইনি। হ্যাঁ, ইচ্ছে রয়েছে এটুকু বলতে পারি। দেশের মানুষের উদ্দেশে কিছু করার স্বপ্ন আমার অনেক দিনই রয়েছে। ২০১৫ থেকেই প্রস্তাব আসছে। তবে এখনই কিছু ভাবতে চাই না।’ এর কিছু ক্ষণ পরেই তিনি বলেন, “দিদিকে আমার সেলাম। ওঁর কথা অনেক শুনেছি।”

Advertisement

এর পরেই ইরফানের মুখে মহমেডান। বলেছেন, “মহমেডানকে অবশ্যই আইএসএলে দেখতে চাই। তবে এখন যে ভাবে সাফল্য পাচ্ছে, সেটা নিয়েও আমি খুশি। টানা চারটে ম্যাচ জিতে গত ম্যাচে হারল। মার্কাস জোসেফকে দেখুন, কী দারুণ খেলছে। এই যে ছন্দটা রয়েছে, চাই ক্লাব এই ছন্দটাই ধরে রাখুক। জাতীয় লিগ জিততে দেখতে চাই। আইএসএল নিয়ে নিশ্চয়ই ক্লাবের কোনও পরিকল্পনা রয়েছে। চাই পরের বার এসে যেন স্টেডিয়ামে বসে মহমেডান আইএসএল খেলছে, এটা দেখতে পারি।”

তিনি আরও বলেছেন, “গোটা দেশে এমন কোনও ফুটবলপ্রেমী নেই যে মহমেডানের নাম শোনেনি। কলকাতায় আসছি ১৪-১৫ বছর বয়স থেকে। তার আগে থেকেই মহমেডানের নাম শুনেছি। এই ক্লাবের ১৩১ বছর বয়স। স্বাধীনতার আগে এই ক্লাবের কী ভূমিকা ছিল আমরা সবাই জানি। তাই এমন ঐতিহ্যশালী ক্লাবের দূত হতে পেরে আমি গর্বিত।”

Advertisement

সোমবার মহমেডানের অনুষ্ঠানে ইরফান ছাড়াও হাজির ছিলেন কেকেআরের আইপিএল জয়ী প্রাক্তন ক্রিকেটার মনবিন্দর বিসলা, রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মনোজ তিওয়ারি এবং মহমেডান ক্লাবের কর্মকর্তারা।

মহমেডান মাঠে খেলা দেখছেন ইরফান। নিজস্ব চিত্র

ইরফান যেখানে হাজির, সেখানে ক্রিকেট নিয়ে কথা তো উঠবেই। ভারতীয় ক্রিকেটের প্রসঙ্গও এল। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টেস্টে হ্যাটট্রিক করা ইরফান সাফ জানালেন, ভারতে প্রতিভার কোনও অভাব নেই। ঠিক সময় এই দলের প্রত্যেকে জ্বলে ওঠার ক্ষমতা রাখেন। বলেছেন, “দুনিয়ার সেরা বোলিং লাইন-আপ হওয়ার ক্ষমতা আমাদের দলের বোলারদের রয়েছে। মাঝে অনেক কথা শুনছিলাম বোলারদের নিয়ে। আমার ধারনা, বড় ট্রফি না জেতা পর্যন্ত ওদের নিয়ে কথা উঠবেই। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্তও হয়তো বোলারদের নিয়ে সমালোচনা শুনতে পারেন। কিন্তু ভারতীয় বোলারদের যে প্রতিভা রয়েছে, সেটা বোধ হয় বিশ্বের কোনও দলের কাছে নেই।”

কলকাতায় এলেও সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে এখনও কথা হয়নি। তবে ইরফানের আশা, খুব শীঘ্রই কথা হবে। বললেন, “দাদা খুবই ব্যস্ত মানুষ। তবে নিয়মিত ওর সঙ্গে কথা হয়। এই তো বেঙ্গালুরু টেস্টে গিয়েও দেখা হয়েছিল আমাদের। অনেক কথা হল।” সৌরভের অধীনে তিনি যেমন খেলেছেন, তেমনই আর এক জনকেও খুব কাছ থেকে দেখেছেন ইরফান। তিনি রাহুল দ্রাবিড়। ভারতীয় দলের বর্তমান কোচ। প্রাক্তন সতীর্থের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ইরফান।

বলেছেন, “দ্রাবিড়ের কথা যত বলব কম বলা হবে। রান তাড়া করে জেতার ক্ষেত্রে এখনও ওর রেকর্ড সব থেকে ভাল। ১৭টা ম্যাচে রান তাড়া করে জিতেছিলাম আমরা। ওর ভাবনাচিন্তা অন্য উচ্চতার। নিজের মতামত স্পষ্ট করে জানাতে পারে ও। বিরাট-রোহিত-দ্রাবিড়ের জুটি আমাদের আগামিদিনে অনেক সাফল্য দিতে চলেছে। আগামী দুটো বছর খুব গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে।”

এই প্রসঙ্গে দ্রাবিড়ের কর্মপদ্ধতির একটি উদাহরণ দিয়েছেন ইরফান। বলেছেন, “সম্প্রতি আমি একটি জায়গায় কোচিং শিখতে গিয়েছিলাম। সেখানে আমাদের শিক্ষক ছিল রাহুল। যে ভাবে সবাইকে এক নজরে দেখত, সেটা অনবদ্য। ওখানে মূলত প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলা প্রাক্তনরাই ছিল। সেখানে আমি দেশের হয়ে পৌনে দুশোর উপর ম্যাচ খেলেছি। কিন্তু অবাক হয়ে দেখতাম, আমার মতো সমান মনোযোগ বাকিরাও পেত। কাউকে আলাদা করে দেখত না রাহুল। ওর পেশাদারিত্ব অন্য রকম।”

প্রশ্ন উঠেছিল ঋদ্ধিমান সাহা বনাম বোর্ডকে নিয়েও। ইরফান তা গুরুত্ব দিতে চাননি। তবে টেস্ট দলে ঋদ্ধিমানের জায়গা যিনি কেড়ে নিয়েছেন, সেই ঋষভ পন্থের প্রশংসা করলেন। বলেছেন, “জাতীয় দলে ঋদ্ধি ফিরতে পারবে কিনা জানি না। তবে আইপিএলে এখনও ওর অনেক কিছু দেওয়ার রয়েছে। ওর বদলে যে এসেছে, সেই পন্থ কিন্তু অনেক বড় ক্রিকেটার হিসেবে নিজেকে এক দিন প্রতিষ্ঠিত করবে। হয়তো ও ক্রিকেট ছাড়ার সময়ে সর্বকালের সেরা উইকেটকিপার হিসেবেও শেষ করতে পারে।”

কলকাতায় ইরফানের সেরা স্মৃতি কী? প্রাক্তন অলরাউন্ডার তুলে আনলেন ন’বছর আগের একটি আইপিএল ম্যাচের কথা। ওই ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল সানরাইজার্স হায়দরাবাদ এবং কলকাতা নাইট রাইডার্স। ইরফান বললেন, “আমি হায়দরাবাদ দলে থাকলেও ওই ম্যাচে খেলিনি। কিন্তু আমার ভাই ইউসুফ কলকাতার হয়ে খেলছিল। ও ব্যাট করতে নামার আগে হঠাৎ দেখলাম কোচকে কিছু একটা বলছে। তার পরেই মাঠে গিয়ে তাণ্ডবনৃত্য শুরু করল। ডেল স্টেনের মতো বোলারকে পিটিয়ে এক ওভারে ২৭ রান নিল। অর্ধশতরান করে একার হাতেই কলকাতাকে জিতিয়ে লিগ তালিকায় আরও উপরে তুলে দিল। আমি ম্যাচের পর ওকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, কী বলেছিলি তখন কোচকে? ও কোচকে বলেছিল, হয় ১ বলে ফিরব, না হলে দলকে জিতিয়েই ফিরব। ওই মুহূর্তটা হৃদয়ে গেঁথে রয়েছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement