ISL 2021-22

Laxmikant Kattimani: গোল করে খলনায়ক থেকে গোল বাঁচিয়ে নায়ক, স্বপ্নপূরণ আইএসএল ফাইনালে সেরা হওয়া গোলরক্ষক কাট্টিমানির

মার্কেজ বলেছেন, ‘‘স্টিমাচ ওকে জাতীয় দলে ডাকবেন কি না জানি না। গত দু’বছর ওর উন্নতি দেখে বলতে পারি, এখন ও ভারতের অন্যতম সেরা গোলকিপার।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০২২ ১৩:৩৫
Share:

টাইব্রেকারে দুর্ভেদ্য কাট্টিমানি। ছবি: টুইটার থেকে

ক্রিকেটের উইকেটরক্ষক আর ফুটবলের গোলরক্ষক। দু’টি ভূমিকাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আবার দু’টি কাজই ‘থ্যাঙ্কলেস জব’।

উইকেটের পিছনে ক্যাচ ধরা এবং বার পোস্টে দাঁড়িয়ে গোল বাঁচানোর মধ্যে যেন কোনও কৃতিত্বই নেই। এই কাজের জন্যই তো রাখা হয় তাঁদের। অথচ গোল খেলে বা ক্যাচ ধরতে না পারলেই দোষ। উইকেটরক্ষকদের তবু ব্যাট হাতে সামাল দেওয়ার সুযোগ থাকে। গোলরক্ষকদের সে সুযোগও নেই।

Advertisement

এমন কঠিন দায়িত্ব সামলেও গোলরক্ষকরা কখনও কখনও ম্যাচের সেরার পুরস্কার ছিনিয়ে নেন। যেমন রবিবার আইএসএল ফাইনালে হায়দরাবাদ এফসি-র লক্ষ্মীকান্ত কাট্টিমানি। টাইব্রেকারে তাঁর দুরন্ত পারফরম্যান্স হায়দরাবাদ এফসি-কে প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন করল। এর পর অন্য কাউকে ম্যাচের সেরা বেছে নেওয়ার সুযোগ ছিল না।

গোয়ায় জন্ম এই গোলরক্ষকের নায়ক হয়ে ওঠার পথ কিন্তু সহজ ছিল না। বরং ২০০৮ সালে ভাস্কো ক্লাবে পেশাদার ফুটবল জীবন শুরু করা কাট্টিমানি নায়ক হয়েছেন খলনায়ক থেকে। হ্যাঁ খলনায়ক। ওই যে গোল খেলেই যত দোষ! ২০১৪ সালের আইএসএল ফাইনালে ছিলেন এফসি গোয়ার দুর্গ রক্ষার দায়িত্বে। গোল বাঁচাতে গিয়ে নিজের গোলেই বল ঢুকিয়ে দেন। ৩-২ ব্যবধানে জিতে চ্যাম্পিয়ন হয় চেন্নাইয়ান এফসি।

Advertisement

১৯৯৯ সালে ক্রিকেট বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার হার্সেল গিবস স্লিপে স্টিভ ওয়ার ক্যাচ ধরার পর উৎসব করতে গিয়ে বল ফেলে দেন হাত থেকে। বেঁচে যান স্টিভ। সে সময় স্টিভ নাকি গিবসকে উদ্দেশ্য করে বলে ছিলেন, ‘‘ওহে তুমি যে বিশ্বকাপটাই ফেলে দিলে হাত থেকে।’’

২০১৪ আইএসএল ফাইনালে কাট্টিমানির নিজের গোলে বল ঢুকিয়ে দেওয়াও অনেকটা সে রকম। ওই ঘটনার পর নিজের শহর, রাজ্যে কার্যত খলনায়ক হয়ে যান কাট্টিমানি। তিনি ছিলেন মূলত ডেম্পোর ফুটবলার। লোনে গোয়া নিয়েছিল তাঁকে। পরের বছর ফের ডেম্পোর হয়ে খেলেন আই লিগের দ্বিতীয় ডিভিশনে। গোয়ার ক্লাবকে প্রথম ডিভিশনে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন। ভাল পারফরম্যান্সের জেরে পরের মরশুমে তাঁর সামনে খুলে যায় আইএসএলের দরজা। গোয়ার হয়েই মাঠে নামেন। ২০১৮-১৯ মরসুম পর্যন্ত গোয়ার হয়েই খেলেছেন ৩২ বছরের গোলরক্ষক। মাঝে এক বছর ২০১৭ সালে লোনে মুম্বই এফসি-র হয়ে খেলেন। ২০১৯-২০ মরসুমে যোগ দেন হায়দরাবাদ এফসি-তে।

২০১৪-র সেই ঘটনা সম্ভবত এখনও ভুলতে পারেননি কাট্টিমানি। না হলে ফাইনালের পর তিনি কেন বলবেন, ‘‘আমার স্বপ্ন ছিল এই মাঠে কোনও বড় সাফল্য পাওয়া। সেই স্বপ্নই পূরণ হল। পুরো দলের জন্য আমি খুব খুশি।’’

উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন হায়দরাবাদের কোচ ম্যানুয়েল মার্কেজও। তিনি বলেছেন, ‘‘কাট্টিমানি এই মুহূর্তে সেরা গোলরক্ষক। শুধু গোলে নয়, বক্সের বাইরেও দারুণ খেলে। স্টিমাচ ওকে ভারতীয় দলে ডাকবেন কি না, জানি না। তবে গত দু’বছর ওর উন্নতি দেখে বলতে পারি, এই মুহূর্তে ও ভারতের অন্যতম সেরা গোলকিপার।’’

২০১৪ সালে খলনায়ক থেকে এবার নায়ক। টাইব্রেকারে তাঁর দুরন্ত সেভের প্রশংসা করছেন সকলেই। কিন্তু অবাক নন প্রাক্তন গোলরক্ষক তনুময় বসু। অনূর্ধ্ব ১৯, ২৩ জাতীয় দলে গোলরক্ষক কোচ ছিলেন তনুময়। তখন কাট্টিমানিকে পেয়েছিলেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘আইএসএল ফাইনাল বলে হৈ চৈ বেশি হচ্ছে। কাট্টিমানি কিন্তু আগেও অনেক পেনাল্টি বাঁচিয়েছে। ওর মধ্যে লড়াই করার দারুণ মানসিকতা রয়েছে ছোট থেকেই। অনুমান ক্ষমতাও দুর্দান্ত। ওর মতো রিফ্লেক্স দেশে খুব কম গোলরক্ষকের রয়েছে। পুরো প্রতিযোগিতায় ধারাবাহিক ভাবে ভাল খেলেছে। মোহনবাগানের বিরুদ্ধেও ওর পারফরম্যান্স কিন্তু দারুণ ছিল।’’

অন্য প্রাক্তন গোলরক্ষকরাও প্রশংসা করছেন কাট্টিমানির। ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘কাট্টিমানির অনুমান ক্ষমতা বেশ ভাল। ছেলেটা জিরো থেকে হিরো হয়ে গেল। কেরল ব্লাস্টার্সের ফুটবলাররা টাইব্রেকারে খুব ভাল শট মারতে পারেনি। তা হলেও কাট্টিমানির প্রশংসা করতেই হবে।’’ কাট্টিমানির পারফরম্যান্সের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করছেন অতনু ভট্টাচার্য। তিনি সোজাসুজি বলছেন, ‘‘ফাইনালে কেরল ব্লাস্টার্স অনেক ভাল খেলেছে। কাট্টিমানির জন্যই চ্যাম্পিয়ন হল হায়দরাবাদ। ফাইনালের মতো ম্যাচ, গ্যালারি ভর্তি দর্শক। তার মধ্যে অন্তত চারটি নিশ্চিত গোল বাঁচিয়েছে কাট্টিমানি। দুর্দান্ত পারফরম্যান্স। এত দিন ধরে দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলছে। অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েছে ফাইনালে। যে ভাবে রি-কিক সেভ করেছে সেটা তো অসাধারণ।’’ এতদিন তেমন খেলার সুযোগ না পেলেও এবার জাতীয় দলের প্রথম একাদশে কাট্টিমানির সুযোগ পাওয়া উচিত বলে মনে করেন তনুময়, অতনুরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement