ইংল্যান্ডের ক্লাব লিভারপুল কিনতে চাইছেন মুকেশ অম্বানী। ফাইল ছবি
বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবল ক্লাব লিভারপুল কি এ বার যেতে পারে মুকেশ অম্বানীর হাতে? তেমনই সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ইংল্যান্ডের সংবাদপত্র ‘দ্য মিরর’-এর খবর অনুযায়ী, ভারতের এই কোটিপতি ব্যবসায়ী ইতিমধ্যেই ক্লাব কেনার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়ে খোঁজখবর নিয়েছেন। প্রসঙ্গত, আইপিএলে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স দলের মালিক মুকেশ অম্বানী। তাঁর স্ত্রী নীতা অম্বানী এবং ছেলেকে প্রতি ম্যাচেই গ্যালারিতে হাজির থাকতে দেখা যায়। অন্য দিকে, আইএসএল যারা চালায়, সেই ফুটবল স্পোর্টস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডেরও মালিক অম্বানীর সংস্থা। ফলে খেলাধুলোর দল কেনা অম্বানীর কাছে নতুন কোনও বিষয় নয়।
এই মুহূর্তে লিভারপুলের মালিক আমেরিকার সংস্থা ফেনওয়ে স্পোর্টস গ্রুপ (এফএসজি)। কিন্তু গত কয়েক দিন ধরেই ক্লাব বিক্রি করে দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে তারা। আকর্ষণীয় প্রস্তাব নিয়ে তারা বিভিন্ন সংস্থার দরজায় দরজায় ঘুরছে। তাতেই অম্বানী আগ্রহ দেখিয়েছেন। জানা গিয়েছে, ৪ বিলিয়ন পাউন্ডে (ভারতীয় মুদ্রায় ৩৮ হাজার ১১৯ কোটি টাকা) লিভারপুল বিক্রি করে দিতে পারে এফএসজি। শেয়ার নয়, সরাসরি ক্লাব বিক্রি করার দিকেই আগ্রহ দেখিয়েছে তারা।
লিভারপুল কিনতে অম্বানীর কোনও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক ফোর্বসের তৈরি করা ধনীদের তালিকায় অষ্টম স্থানে রয়েছেন। তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ ৯৪ বিলিয়ন পাউন্ড (ভারতীয় মুদ্রায় ৮ লক্ষ ৯৫ হাজার ৭৯২ কোটি)। ফলে নিজের সম্পত্তির সামান্য অংশই যাবে লিভারপুলের পিছনে ব্যয় করতে।
তার থেকে বড় ব্যাপার, অম্বানী নিজে ক্রীড়াপ্রেমী। অতীতে ভারত এবং মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিভিন্ন ম্যাচে তাঁকে গ্যালারিতে হাজির থাকতে দেখা গিয়েছে। তাঁর দল মুম্বই ইন্ডিয়ান্স পাঁচ বার জিতেছে আইপিএল। সেই দলেই খেলেন এখন ভারতের জাতীয় দলের অধিনায়ক রোহিত শর্মা। জাতীয় দলের বোলার যশপ্রীত বুমরা, ঈশান কিশানও মুম্বইয়ের ক্রিকেটার। অন্য দিকে, ২০১৪ সালে চালু হওয়ার পর আইএসএল এই মুহূর্তে দেশের এক নম্বর ফুটবল লিগ। ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান-সহ ভারতের সব বড় দলই এই লিগে খেলে। রিলায়্যান্সের নিজস্ব ফুটবল স্কুলও রয়েছে। খুদে ফুটবলারদের নিয়ে একটি লিগও চালায় তারা।
লিভারপুল কিনতে চাওয়ার পিছনে অন্য একটি কারণও রয়েছে। ভারতে ইপিএলের জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি। ক্লাবগুলির মধ্যে জনপ্রিয়তার নিরিখে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের পরেই রয়েছে লিভারপুল। বড় শহরগুলির প্রায় প্রতিটিতেই লিভারপুলের একটি ফ্যান ক্লাব রয়েছে। কলকাতাও তার ব্যতিক্রম নয়। ফলে লিভারপুল কিনতে পারলে ভারতের বাজার যে অনেকখানি ধরা যাবে, সেটা ভালই জানেন অম্বানী। অন্য দিকে, ভারতের এই শিল্পপতিকে ক্লাব বিক্রি করলে এই দেশ এবং এশিয়ার বাজার অনেকটা ধরতে পারবে লিভারপুলের সঙ্গে জড়িত স্পনসররাও।
অনেক দিন ধরেই লিভারপুলের মালিকানা হস্তান্তর নিয়ে ঝামেলা চলছে। এফএসজি-র উপরে ক্ষুব্ধ সমর্থকরা। অনেকেই দাবি করছেন, ক্লাব মালিকানা নিয়ে অভ্যন্তরীণ ঝামেলা চলার কারণেই এ বারের ট্রান্সফারে যথেষ্ট পরিমাণ খরচ করতে পারেনি লিভারপুল। ফলে কোচ য়ুর্গেন ক্লপ যে ফুটবলারদের চেয়েছিলেন, তাঁদের নেওয়া যায়নি।
আপাতত অম্বানীকে লড়তে হবে দুবাই, বাহরাইন, আমেরিকার বিভিন্ন কোটিপতি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে। কাদের প্রস্তাব ভাল তা জানতে এফএসজি-র তরফে ইতিমধ্যেই এক বিখ্যাত অর্থনৈতিক সংস্থাকে নিয়োগ করা হয়েছে। তারা রিপোর্ট দিলেই চুক্তি হয়ে যাবে।
ইংল্যান্ডের অন্যতম সফল ক্লাব লিভারপুল। ঘরোয়া লিগ তারা জিতেছে ১৯ বার। শুধু ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড (২০) তাদের আগে রয়েছে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছে ৬ বার। ইংল্যান্ডের ক্লাবগুলির মধ্যে সর্বোচ্চ। গত বারও ফাইনালে ওঠে তারা। হেরেছে রিয়াল মাদ্রিদের কাছে।