ব্যর্থ: কাট্টিমণিকে একা পেয়েও গোল করতে পারেননি জনি। টুইটার
অনবদ্য খেলে সেমিফাইনালের দ্বিতীয় পর্বে হায়দরাবাদ এফসিকে ১-০ গোলে হারিয়েও স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণা নিয়ে বুধবার রাতে মাঠ ছেড়েছিলেন এটিকে-মোহনবাগানের ফুটবলাররা। দুই পর্ব মিলিয়ে ৩-২ গোলে জিতে অষ্টম আইএসএলের ফাইনালে প্রথমবার উঠলেন বার্তোলোমেউ ওগবেচেরা।
তীরে এসে এ ভাবে তরী ডোবায় হতাশ মোহনবাগানের প্রাক্তনরাও। সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলছিলেন, ‘‘চলতি আইএসএলে সেরা ম্যাচটা বুধবারই খেলেছিল রয় কৃষ্ণরা। জিতলেও ফাইনাল উঠতে পারল না ওরা। কারণ, প্রথম পর্বের ম্যাচের ফলটাই পার্থক্য গড়ে দিয়েছিল। তা ছাড়া অসংখ্য গোলও নষ্ট হয়েছে। অন্তত চার-পাঁচ গোলে জেতা উচিত ছিল। সেই সঙ্গে রেফারির ভুল সিদ্ধান্তের শিকারও হয়েছে দল।’’ কী ভাবে? সত্যজিতের ব্যাখ্যা, ‘‘ম্যাচের ২২ মিনিটে ওদের পেনাল্টি বক্সের মধ্যে ওগবেচের হাতে বল লেগেছিল। অবধারিত পেনাল্টি। অথচ রেফারি দিলেন না। ৮৪ মিনিটে কৃষ্ণ বল ধরার সঙ্গে সঙ্গে লাইন্সম্যান অফসাইডের নির্দেশ দিয়েছিলেন। টিভিতে বারবার দেখলাম, কোনও মতেই অফসাইডে ছিল না ও। তখন গোলটা হলেই দুই পর্ব মিলিয়ে ৩-৩ হয়ে যেত।’’ যোগ করলেন, ‘‘বুধবারের ম্যাচে শুরু থেকেই আধিপত্য ছিল মোহনবাগানের। অসাধারণ খেলেছে ফুটবলাররা। ফাইনালে উঠতে না পারাটা দুর্ভাগ্যজনক। প্রথম পর্বের ম্যাচে যদি ১-৩ গোলে না হারত, তা হলে এ ভাবে শূন্য হাতে ফিরতে
হত না।’’
হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে প্রথম পর্বে ১-৩ গোলে হারের কারণ কী? সত্যজিতের কথায়, ‘‘খেলা দেখে আমার মনে হয়েছিল, ফুটবলারদের মনঃসংযোগ করতে হয়তো সমস্যা হচ্ছিল। সেই তাগিদটা দেখিনি ওদের খেলার মধ্যে। আমার মনে হয়, ওরা একশো শতাংশ দিতে পারেনি সে দিন। হয়তো কিছুটা চাপেও ছিল।’’
সত্যজিতের সঙ্গে একমত মোহনবাগানের আর এক ‘ঘরের ছেলে’ শিশির ঘোষও। বললেন, ‘‘প্রথম পর্বের হারটাই মোহনবাগানের ছিটকে যাওয়ার প্রধান কারণ। আগের ম্যাচে শুরুতে এগিয়ে যাওয়ার পরে ছন্দটা ধরে রাখতে পারেনি। দ্বিতীয়ার্ধে এত খারাপ খেলল যে, হায়দরাবাদ পরপর দু’টো গোল করে দেয়। ফাইনালে ওঠার সম্ভাবনা তখনই ক্ষীণ হয়ে গিয়েছিল।’’
বুধবার হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে সব বিভাগেই এগিয়ে ছিলেন হুগো বুমোসরা। ৫৮ শতাংশ বল ছিল তাঁদের দখলে। পুরো ম্যাচে ৪৩৫টি পাস খেলেছিলেন কৃষ্ণরা। বিপক্ষের গোল লক্ষ্য করে আটটি নির্ভুল শট মেরেছিলেন মোহনবাগানের ফুটবলাররা। শিশির বলছেন, ‘‘অসংখ্য গোল নষ্ট করার মূল্য দিতে হল মোহনবাগানকে। আমার মনে হয়েছে, দুই প্রান্ত দিয়ে আক্রমণ আরও বেশি করা উচিত ছিল। কারণ, হায়দরাবাদের অন্তত সাত-আট জন ফুটবলার রক্ষণে নেমে গিয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে মাঝখান দিয়ে বল নিয়ে গিয়ে গোল করা অনেক বেশি কঠিন। তা ছাড়া কৃষ্ণের সঙ্গে ডেভিড উইলিয়ামসকে শুরু থেকে খেলানো উচিত ছিল।’’
অধিনায়ক প্রীতম কোটাল ম্যাচ শেষ হওয়ার চব্বিশ ঘণ্টা পরেও হতাশা কাটিয়ে উঠতে পারেননি। বললেন, ‘‘এই মরসুমে আমাদের অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। আইএসএলে দুর্দান্ত শুরু করেছিলাম। তার পরে খারাপ সময়ের সম্মুখীন হয়েছিলাম। কোচ পরিবর্তন হয়। নতুন কোচের রণনীতির সঙ্গে যখন মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি, তখনই করোনা থাবা বসায়। যা আমাদের ছন্দ কিছুটা হলেও নষ্ট করে দিয়েছিল।’’ যোগ করলেন, ‘‘জামশেদপুরের কাছে হেরে শিল্ড হাতছাড়া হওয়ার প্রভাবও পড়েছিল দলের উপরে। তা সত্ত্বেও বুধবার রাতে সেরা ফুটবল আমরা খেলেছিলাম। ফাইনালে উঠতে না পারাটা দুর্ভাগ্যজনক। এএফসি কাপে ভাল ফল করাই এখন প্রধান
লক্ষ্য আমাদের।’’
বিপর্যস্ত মোহনবাগান কোচ জুয়ান ফেরান্দোও। তিনি বলেছেন, ‘‘আমি বিধ্বস্ত। প্রচণ্ড হতাশও। এর আগে আমরা লিগ টেবলের শীর্ষ স্থান হারিয়েছি। এ বার সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিলাম।’’ জুয়ানেরও পাখির চোখ এএফসি কাপে ভাল ফল করা। বলেছেন, ‘‘পাঁচ-ছয় দিন পর থেকে কাজ শুরু করতে চাই। সামনে এ বার আরও কঠিন লড়াই।’’
স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণার মধ্যেই মোহনবাগানে বুমোসের ভবিষ্যৎ নিয়ে ধোঁয়াশা বাড়ছে। সূত্রের খবর, চিনের দ্বিতীয় ডিভিশন লিগের সিচুয়ান জিউনিউ এফসিতে তাঁর খেলতে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। গত মরসুমে মুম্বই সিটি এফসিকে আইএসএলে চ্যাম্পিয়ন করা কোচ সের্খিয়ো লোবেরা পুরনো ছাত্রকে নিতে মরিয়া।