পর্তুগালের ফুটবলে সাদা কার্ডের ব্যবহার শুরু করলেন এক মহিলা রেফারি। ছবি: টুইটার।
অভিনব ঘটনার সাক্ষী থাকলেন ফুটবলপ্রেমীরা। ঘটনাটি ঘটল স্পোর্টিং লিসবন বনাম বেনফিকার মহিলাদের ডার্বিতে। ম্যাচের বিরতির সামান্য আগে রেফারি পকেট থেকে হঠাৎই বার করলেন কার্ড। সেই কার্ডের রং লাল বা হলুদ নয়। সাদা। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর দেশ তৈরি করল নতুন উদাহরণ।
ফুটবল ম্যাচে হলুদ বা লাল কার্ডের ব্যবহার অজানা নয়। সাদা কার্ড দেখা যায়নি কখনও। গত কাতার বিশ্বকাপেও এমন ঘটনা ঘটেনি। তা হলে কি রেফারি ভুল করে কার্ডের বদলে অন্য কিছু বার করেছিলেন তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে? না, ম্যাচের পর্তুগিজ মহিলা রেফারি ক্যাটারিনা ক্যাম্পোস কোনও ভুল করেননি। তিনি সচেতন ভাবেই সাদা কার্ড বের করেন ফেয়ার প্লে-র প্রতীক হিসাবে। প্রথমার্ধের শেষ দিকে তখন ঘরের মাঠে ৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে ছিল বেনফিকা। প্রিয় দল বড় ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ায় স্পোর্টিং লিসবনের এক সমর্থক অসুস্থ বোধ করছিলেন গ্যালারিতে। অন্য দর্শকরা আয়োজকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তা দেখে সঙ্গে সঙ্গে ছুটে যান দু’দলের মেডিক্যাল স্টাফরা। তাঁরা যৌথ ভাবে চিকিৎসা করেন ওই সমর্থকের। চিকিৎসায় অনেকটাই ভাল অনুভব করেন তিনি। দু’দলের মেডিক্যাল স্টাফদের ভূমিকার প্রশংসা করার জন্য রেফারি পকেট থেকে সাদা কার্ড বের করেন এবং সেটি মেডিক্যাল স্টাফদের দেখান। শান্তির রং হিসাবে তিনি বেছে নিয়েছেন সাদা। মাঠের লড়াইয়ের বাইরে পারস্পরিক সৌজন্য, ভ্রাতৃত্বের এই ঘটনাকে কুর্নিশ করেন মাঠে উপস্থিত সব দর্শক।
হলুদ বা লাল কার্ড ব্যবহার করে রেফারিরা সাধারণত ফুটবলার-সহ কোচ বা দলের অন্যদের শাস্তি দেন। সাদা কার্ডের অর্থ সম্পূর্ণ বিপরীত। এই কার্ড ব্যবহার করা হয়েছে খেলোয়াড়ি মানসিকতার প্রশংসা করার জন্য। ফুটবলের ইতিহাসে এমন ঘটনা প্রথম। ক্যাম্পোস বলেছেন, ফুটবলের মূল্যবোধ বাড়াতেই তিনি এই কাজ করেছেন। তাঁর দাবি, এর সঙ্গে ফুটবলের নিয়মভঙ্গের কোনও বিষয় নেই।
এমন কিছুর জন্য অবশ্য প্রস্তুত ছিলেন না কেউই। প্রথমে কিছুটা বিস্মিত হন দু’দলের মেডিক্যাল স্টাফরা। তাঁরা বুঝতে পারছিলেন না কী অন্যায় করেছেন। কারণ, ফুটবলে কার্ড মানেই শাস্তি। এত দিন ধরে সেই ধারণাই তৈরি হয়েছে সকলের মধ্যে। প্রথমে মনে করা হয়েছিল, ভাল করতে গিয়ে রেফারির কোপে পড়েছেন মেডিক্যাল স্টাফরা। রেফারি নিশ্চয়ই হলুদ বা লাল কার্ড দেখাতে চেয়েছিলেন। পরে বিষয়টি বোঝার পর অনেকে মহিলা রেফারির প্রশংসা করেছেন।
পকেট থেকে সাদা কার্ড বার করছেন রেফারি। ছবি: টুইটার।
অধিকাংশ ফুটবলপ্রেমী প্রশংসা করলেও সমালোচনা করেছেন কেউ কেউ। তাঁদের দাবি, ফুটবলের নিয়মের বাইরে গিয়ে এমন কিছু করার দরকার ছিল না। রেফারি অকারণ বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছেন। কেউ আবার বলেছেন, মাঠের বাইরের ঘটনার জন্য খেলার সময় নষ্ট করার কোনও অর্থ হয় না। প্রশংসা বা সমালোচনা যাই হোক, ফুটবলের নতুন ভাবনার জন্ম দিলেন পর্তুগালের মহিলা রেফারি ক্যাম্পোস। যে ভাবনার পিছনে রয়েছে পর্তুগালের ফুটবল সংস্থার সমর্থন।