প্রস্তুতি: উদ্বেগের মধ্যেই অনুশীলন শুরু শ্রীলঙ্কার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
শ্রীলঙ্কার ব্লু স্টার এসসির ফুটবলারদের প্রায় সকলেই নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের। গত কয়েক মাস ধরে চলতে থাকা প্রবল আর্থিক সঙ্কটে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত সকলে। যন্ত্রণা ভুলতে ফুটবলই এখন অস্ত্র ব্লু স্টারের ফুটবলারদের।
এটিকে-মোহনবাগানের বিরুদ্ধে এএফসি কাপের প্রাক-যোগ্যতা অর্জন পর্বের ম্যাচে খেলতে রবিবার সকালেই কলকাতায় এসেছেন তাঁরা। টিম হোটেলের কফি শপে গিয়ে যে বসবেন, সেই ঝুঁকিও কেউ নিতে পারছেন না। পকেটে যে সামান্য কিছু অর্থ রয়েছে। যা কলম্বো ছাড়ার আগে শ্রীলঙ্কা সরকার ও ফুটবল ফেডারেশনের তরফে দেওয়া হয় ফুটবলারদের। সেই সঙ্গে সতর্ক করে দেওয়া হয়, খুব প্রয়োজন না হলে কেউ যেন তা খরচ না করেন।
কলকাতা বিমানবন্দরে নেমে ব্লু স্টারের কোচ বান্দা সামারাকোন জানতে পারেন, বেশ কয়েকজন ফুটবলারের কিট পাওয়া যাচ্ছে না। খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, বিমান সংস্থার ভুলেই তা রয়ে গিয়েছে চেন্নাইয়ে। কেউ কেউ তাঁকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন, কলকাতা থেকেই নতুন বুট, জার্সি কিনে অনুশীলন করার জন্য। শুনেই আঁতকে উঠেছিলেন টিম ম্যানেজার। সঙ্গে সামান্য কিছু অর্থ রয়েছে। কোনও মতেই তা খরচ করার ঝুঁকি নেওয়া যাবে না। শেষ পর্যন্ত সন্ধ্যায় যুবভারতীতে স্টেডিয়াম সংলগ্ন মাঠে অনুশীলনে নামার আগেই চেন্নাই থেকে কলকাতায় চলে আসে খোয়া যাওয়া কিট ব্যাগগুলি। স্বস্তি ফেরে ব্লু স্টার শিবিরে। বান্দা বলছিলেন, ‘‘ভুল করেছে বিমান সংস্থার কর্মীরাই। ওঁরা কয়েক জনের ব্যাগে ভুল ট্যাগ লাগিয়েছিলেন। পরে অবশ্য সব ব্যাগ ফেরত পাই।’’
শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ আর্থিক সঙ্কটের কারণ কী? হতাশ ব্লু স্টারের কোচ নিজের দেশের সরকারকে কাঠগড়ায় তুলে বললেন, ‘‘শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি প্রায় পুরোটাই কৃষির উপরে নির্ভরশীল। বিদেশে আমরা কৃষিজপণ্য রফতানি করি। করোনা অতিমারির ধাক্কায় যা ব্যাপক হারে হ্রাস পেয়েছে। কৃষিজপণ্য ছাড়া বাকি সব কিছুই আমাদের আমদানি করতে হয় বিদেশ থেকে।এর ফলে ঋণের বোঝা অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গিয়েছে। হু হু করে নেমে গিয়েছে শ্রীলঙ্কার মুদ্রার দাম।”
আরও বলেন, “আমাদের দেশের সরকার ঠিক সময়ে যদি পদক্ষেপ করত, তা হলে এই অবস্থা হত না। সরকারের ভুল নীতির জন্যই অর্থনৈতিক ভারসাম্য পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ভয়ঙ্কর মুদ্রাস্ফীতি হয়েছে। খাদ্য থেকে জ্বালানি, সব কিছুর জন্য হাহাকার চলছে। খরচ বাঁচাতে দিনের অধিকাংশ সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হচ্ছে। ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি আমাদের দেশে।’’
ব্লু স্টারের অধিকাংশ ফুটবলারই তরুণ। দলে তিন জন বিদেশি রয়েছেন। ঘানার প্রিন্স বোয়াদু ও আইজ্যাক আদেভু এবং নাইজিরিয়ার ওমবেবে।গত ৫ এপ্রিল কাঠমান্ডুতে নেপালের মাচিন্দ্রাকে ২-১ গোলে হারিয়েছে ব্লু স্টার। গোল করেছিলেন আব্দুল মহম্মদ ইহসান ও স্নেহাল সন্দেশ।
দেশের এই প্রবল আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে ফুটবলাররা কী ভাবে খেলায় মনঃসংযোগ করছেন? বান্দা বললেন, ‘‘আমাদের দলের অধিকাংশ ফুটবলার নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের। সকলেরই অবস্থা খুব খারাপ। ফুটবলকে আশ্রয় করেই ওরা যন্ত্রণা ভুলছে। দেশের সম্মানরক্ষার জন্য ওরা নিজেদের উজাড় করে দিতে মরিয়া।’’
রবিবার সন্ধ্যায় যুবভারতীতে ব্লু স্টার যেখানে অনুশীলন করছিল, পাশের মাঠেই প্রস্তুতিতে ব্যস্ত ছিলেন রয় কৃষ্ণরা। অনুশীলনের ফাঁকে বিপক্ষকে মেপে নিলেন ব্লু স্টারের কোচ ও ফুটবলাররা।