FIFA World Cup 2022

হ্যারি কেনের পেনাল্টি ফস্কানোই কাল হল ইংল্যান্ডের, কেন এমন ভুল হয় বড় ফুটবলারদের?

এই বিশ্বকাপেই পেনাল্টি ফস্কাতে দেখা গিয়েছিল লিয়োনেল মেসিকে। একাধিক পেনাল্টি বাঁচিয়েছেন বিভিন্ন গোলরক্ষক। বড় ফুটবলারদের কেন এমন সহজ সুযোগ নষ্ট করতে দেখা যায়?

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২২ ১৫:৩৯
Share:

গোলপোস্টের মাথার উপর দিয়ে বল গ্যালারিতে পাঠিয়ে দিলেন হ্যারি কেন। ছবি: পিটিআই

ফ্রান্সের বিরুদ্ধে শেষ মুহূর্তে পেনাল্টি ফস্কে দু’হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলেন হ্যারি কেন। ইংল্যান্ডের অধিনায়ক জানতেন কী ভুল করলেন। বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ওঠার পথটাই তিনি বন্ধ করে দিলেন। সহজতম সুযোগটাকে গোলপোস্টের মাথার উপর দিয়ে গ্যালারিতে পাঠিয়ে দিলেন হ্যারি কেন। তাঁর মতো ফুটবলারের থেকে এমন ভুল আশা করেননি অনেকেই, কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, বড় ফুটবলারদের এমন হয়েই থাকে। এই বিশ্বকাপেই পেনাল্টি ফস্কাতে দেখা গিয়েছে লিয়োনেল মেসিকে। একাধিক পেনাল্টি বাঁচিয়েছেন বিভিন্ন গোলরক্ষক। বড় ফুটবলারদের কেন এমন সহজ সুযোগ নষ্ট করতে দেখা যায়?

Advertisement

এ বারের বিশ্বকাপে এখনও পর্যন্ত চারটি ম্যাচ টাইব্রেকার পর্যন্ত গড়িয়েছে। এর মধ্যে প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে জাপান বনাম ক্রোয়েশিয়া এবং মরক্কো বনাম স্পেন ম্যাচ ছিল। কোয়ার্টার ফাইনালে নেদারল্যান্ডস বনাম আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিল বনাম ক্রোয়েশিয়া ম্যাচও টাইব্রেকার পর্যন্ত গিয়েছিল। হ্যারি কেন যদিও ম্যাচের মধ্যে পেনাল্টি পেয়েছিলেন। জাপান-ক্রোয়েশিয়া ম্যাচে ডমিনিক লিভাকোভিচ তিনটি শট বাঁচিয়েছিলেন। স্পেনের প্রাক্তন কোচ লুই এনরিকে প্রি-কোয়ার্টারে নামার আগে জানিয়েছিলেন যে, তাঁর দল ১০০০টি পেনাল্টি মারার অনুশীলন করেছে। কিন্তু মাঠে সেটার ফল পাওয়া যায়নি। মরক্কোর বিরুদ্ধে হেরেই যায় স্পেন। পাবলো সারাবিয়াকে নামানো হয়েছিল পেনাল্টি মারার জন্যই। কিন্তু তিনি ব্যর্থ হন। পোস্টে মারেন সারাবিয়া। কার্লোস সোলের এবং সের্জিয়ো বুস্কেৎসের শট বাঁচিয়ে দেন মরক্কোর গোলরক্ষক।

যে পেনাল্টিগুলি আটকে গিয়েছে তার বেশির ভাগই মারা হয়েছে মন্থর গতিতে। ধীর গতির পেনাল্টি সহজেই আটকে দিয়েছেন গোলরক্ষকরা। এমন পেনাল্টি মারা নিয়ে উঠতে শুরু করেছে প্রশ্ন। কেন এত খারাপ পেনাল্টি মারতে দেখা যাচ্ছে এ বারের বিশ্বকাপে? তথ্য বিশ্লেষক সংস্থা নিয়েলসেন গ্রেসনোট শেষ পাঁচটি বিশ্বকাপে মারা পেনাল্টিগুলো নিয়ে বিশ্লেষণ করে। তাদের তথ্য অনুযায়ী, নীচের দিকে মারা পেনাল্টিগুলির মধ্যে ডান দিকে আটকে গিয়েছে ৫০ শতাংশ এবং বাঁ দিকে আটকে গিয়েছে ৬৮ শতাংশ। কিন্তু উপর দিকে মারা পেনাল্টির যেগুলি গোল পোস্টের মধ্যে ছিল তার ১০০ শতাংশই গোল হয়েছে। সেটা মাঝের দিকে মারা হোক বা ধারের দিকে।

Advertisement

ইংল্যান্ডের প্রাক্তন তারকা অ্যালান শিয়েরার পেনাল্টিতে দক্ষ ছিলেন। তাঁর মারা বেশির ভাগ পেনাল্টি থাকত উপরের দিকে। তাই গোলরক্ষক লাফালেও বলের কাছে পৌঁছতে পারতেন না। তথ্য বলছে, উপরের দিকে মারলে পেনাল্টিতে গোল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কিন্তু বেশির ভাগ ফুটবলাররাই নীচের দিকে মারেন। উপরের দিকে মারার একটা সমস্যা আছে। বল লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বেশি। শনিবার রাতে যেমন হ্যারি কেনের হল। তাঁর মারা প্রথম পেনাল্টি ঠিক জায়গায় থাকলেও, শেষ পেনাল্টি চলে যায় মাঠের বাইরে। গোল পোস্টের মাথার উপর দিয়ে।

এটা জানার পরেও কেন ফুটবলাররা নীচের দিকেই পেনাল্টি মারতে যান? সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ম্যাট মিলার ডিকস (পোর্টসমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষতা অর্জন বিষয়ের প্রবীণ অধ্যাপক) বলেন, “উপর দিকে পেনাল্টি মারলে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, তাই নীচের দিকে মারাই শ্রেয় মনে করেন ফুটবলাররা। মাটিতে মারলে কোনও ভাবেই গোলের বাইরে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। কিন্তু উপরে মারলে ভয় থাকে গোল পোস্টের মাথার উপর দিয়ে চলে যাবে। তাই চাপ কম থাকলে উপর দিকে মারেন ফুটবলাররা, অন্য সময় নীচের দিকে মারতেই পছন্দ করেন তাঁরা।”

ফুটবলারদের শরীরী ভাষার উপরেও নির্ভর করে পেনাল্টি ভাল মারতে পারবেন কি না। ছবি: রয়টার্স

ফুটবলারদের শরীরী ভাষার উপরেও নির্ভর করে পেনাল্টি ভাল মারতে পারবেন কি না। জাপানের ফুটবলাররা পেনাল্টি মারতে যাওয়ার আগে কেমন একটা ভয়ে ভয়ে ছিলেন। তাঁদের চোখে মুখে চাপ ছিল স্পষ্ট। গোলরক্ষকের উপর চাপ সৃষ্টি করতে গিয়েও অনেক সময় ফুটবলাররা চাপে পড়ে যান। ম্যাট বলেন, “খারাপ মারা পেনাল্টিগুলোর মধ্যে দুটো এমন ছিল যেখানে ফুটবলার খুব ধীরে বলের দিকে এগোচ্ছিলেন শট মারার আগে। দেখে নিতে চাইছিলেন গোলরক্ষক কোন দিকে লাফ মারার ইঙ্গিত দেন। কিন্তু গোলরক্ষক নিজের জায়গায় স্থির ছিলেন। তার ফলে ফুটবলারটি আর জোরে বল মারতে পারেননি। গোলরক্ষকও খুব সহজে বল ধরে নেন।”

শট মারতে যাওয়ার সময়টাকে খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন ম্যাট। তিনি বলেন, “পেনাল্টি মারার পরিস্থিতিটা খুব চাপের। গবেষণায় দেখা গিয়েছে শট মারা নয়, শট মারার আগে কোথায় দাঁড়িয়ে আছেন এবং সেখান থেকে কী ভাবে শট মারার জন্য এগিয়ে আসছেন সেটা গুরুত্বপূর্ণ। সেটার জন্য তৈরি না হতে পারলে মুশকিল। ওই সময় যদি মনে দ্বিধা থাকে তা হলে গোল করা খুব কঠিন হয়ে যায়। কারণ আগে থেকে যদি ভাবা না থাকে কোথায় শট মারব, তা হলে শেষ মুহূর্তে সেটা ভেবে গোল করা সহজ নয়। জাতীয় দল এবং ক্লাবগুলিতে মনোবিদ থাকেন। তাঁদের উচিত ফুটবলারদের ওই পরিস্থিতির জন্য তৈরি করে রাখা।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement