FIFA World Cup 2022

বিশ্বকাপের ফাইনালে মেসির আর্জেন্টিনা, আক্রমণাত্মক খেলতে গিয়ে ডুবল মদ্রিচের ক্রোয়েশিয়া

সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়াকে ৩-০ গোলে হারিয়েছে আর্জেন্টিনা। দুরন্ত খেললেন লিয়োনেল মেসি। একটি গোল করলেন। বাকি দু’টি গোল আলভারেসের। বিশ্বকাপ জিততে আর এক ধাপ বাকি মেসির।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২২ ০২:২৫
Share:

সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে আর্জেন্টিনার দুই গোলদাতা লিয়োনেল মেসি ও ইউলিয়ান আলভারেস। ছবি: রয়টার্স

লড়াইটা ছিল এলএম১০ বনাম এলএম১০-এর। লিয়োনেল মেসি বনাম লুকা মদ্রিচের। দুই দলের দুই সেরা ফুটবলারের। সেই লড়াইয়ে মদ্রিচকে হারালেন মেসি। ক্রোয়েশিয়ার হয়ে সব থেকে ভাল ফুটবলটা যদিও খেললেন সেই মদ্রিচই। কিন্তু ফুটবলে গোলটাই সব। সেখানে মেসি গোল করলেন, গোল করালেন। ৩-০ গোলে ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়ে বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠল আর্জেন্টিনা। দলের প্রথম গোল পেনাল্টি থেকে করলেন মেসি। বাকি দু’টি গোল ইউলিয়ান আলভারেসের।

Advertisement

ব্রাজিলের বিরুদ্ধে রক্ষণাত্মক খেলে বাজিমাত করেছিল ক্রোয়েশিয়া। কিন্তু আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেললেন জ্লাটকো দালিচের ছেলেরা। সেখানেই ভুল করল ক্রোয়েশিয়া। প্রথম ৩০ মিনিট বলের দখল বেশি রাখলেও, গোলের সুযোগ বেশি তৈরি করলেও গোলের মুখ খুলতে পারল না তারা। অন্য দিকে প্রথম ৩০ মিনিট কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও প্রথমার্ধের শেষ ১৫ মিনিটে খেলার ছবিটাই বদলে দিল আর্জেন্টিনা। জোড়া গোল করে এগিয়ে গেলেন মেসিরা। সেখান থেকে আর ফিরতে পারল না ক্রোয়েশিয়া। এ বারের বিশ্বকাপের সব থেকে ভাল ফুটবল সেমিফাইনালে খেললেন মেসিরা। আক্রমণ থেকে রক্ষণ, মেসিরা ১০০-য় ১০০। বিশ্বকাপে নিজেদের রেকর্ড অক্ষত রাখল আর্জেন্টিনা। ছ’বার সেমিফাইনাল খেলে ছ’বারই জিতল তারা।

মেসিকে অন্য দলের মতো ক্রোয়েশিয়াও জোনাল মার্কিংয়ে রেখেছিল। তিনি বল ধরলেই তিন থেকে চার জন ফুটবলার ছুটে আসছিলেন। কিন্তু তার পরেও মেসিকে বেশি ক্ষণ আটকে রাখতে পারলেন না তাঁরা। তার একটা কারণ হতে পারে ব্রাজিলের বিরুদ্ধে ম্যাচ খেলার ধকল। যত সময় এগোল, তত ছিটকে ছিটকে বেরলেন মেসি। গোলের সুযোগ তৈরি করলেন। গোল করলেন। গোল করালেন। আবার রক্ষণকেও সাহায্য করলেন। ৯০ মিনিট সমানে পরিশ্রম করলেন। বুঝিয়ে দিলেন, নিজের শেষ বিশ্বকাপকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য সব কিছু করতে তৈরি তিনি।

Advertisement

খেলার শুরুটা অবশ্য ভাল করেছিল ক্রোয়েশিয়া। কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিলের বিরুদ্ধে রক্ষণাত্মক পরিকল্পনা করে নেমেছিলেন লুকা মদ্রিচরা। কিন্তু আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক ফুটবল শুরু করেন তাঁরা। ক্রোয়েশিয়া প্রেসিং ফুটবল খেলছিল। মেসিদের পায়ে বল থাকলেই তাড়া করছিলেন মদ্রিচরা। ফলে বলের দখল বেশি রাখতে পারছিল না আর্জেন্টিনা। দুই প্রান্ত ব্যবহার করে আক্রমণে উঠছিল ক্রোয়েশিয়া। কিন্তু সজাগ ছিল আর্জেন্টিনার রক্ষণ। ফলে গোলের মুখ খুলতে পারেনি ক্রোয়েশিয়া।

৩৩ মিনিটের মাথায় খেলার গতির বিপরীতে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। বক্সের মধ্যে আলভারেসকে ফাউল করেন ক্রোয়েশিয়ার গোলরক্ষক লিভাকোভিচ। পেনাল্টি দেন রেফারি। স্পট থেকে গোল করতে ভুল করেননি মেসি। গোলরক্ষকের বাঁ দিক দিয়ে জালে জড়িয়ে দেন তিনি। এ বারের বিশ্বকাপে নিজের পঞ্চম গোল করে ফেললেন মেসি। সেই সঙ্গে বিশ্বকাপে ১১ গোল করে আর্জেন্টিনার হয়ে সর্বাধিক গোলদাতা হলেন তিনি। ৬ মিনিট পরে বিস্ময় গোল আরভারেসের। প্রতি আক্রমণ থেকে নিজেদের অর্ধে বল ধরে প্রায় ৫০ গজ দৌড়ে যান তিনি। বক্সের বাইরে তিন ডিফেন্ডারকে চমকে দিয়ে বক্সে ঢোকেন। লিভাকোভিচকে পরাস্ত করে গোল করেন আলভারেস। তবে সেই গোলের ক্ষেত্রে ক্রোয়েশিয়ার ডিফেন্ডারদের ভুল চোখে পড়ার মতো। একা ঢুকে গোল করেন আলভারেস। তাঁকে আটকাতে পারেননি ক্রোয়েশিয়ার ডিফেন্ডাররা।

প্রথমার্ধে আরও একটি গোল করতে পারত আর্জেন্টিনা। ৪২ মিনিটের মাথায় মেসির কর্নার থেকে জোরালো হেড করেন অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার। কোনও রকমে সেই বল বাঁচান লিভাকোভিচ। প্রথমার্ধে আর গোল আসেনি। ২-০ এগিয়ে সাজঘরে যান মেসিরা।

দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়ায় ক্রোয়েশিয়া। আক্রমণে লোক বাড়িয়ে দেন কোচ দালিচ। কিন্তু নিজেদের রক্ষণ মজবুত রাখে আর্জেন্টিনা। ফলে গোলের মুখ খুলতে পারেনি ক্রোয়েশিয়া। রক্ষণাত্মক খেললেও হঠাৎই প্রতি আক্রমণ থেকে উঠছিল আর্জেন্টিনা। সময় যত গড়াচ্ছিল, চাপ তত বাড়ছিল ক্রোয়েশিয়ার উপর। লিসান্দ্রো মার্তিনেসকে নামিয়ে তিন ব্যাকে চলে যান আর্জেন্টিনার কোচ লিয়োনেল স্কালোনি। রক্ষণ আরও মজবুত করে দেন তিনি।

৭০ মিনিটের মাথায় আর্জেন্টিনার হয়ে ম্যাচের দ্বিতীয় গোল করেন আলভারেস। তবে গোলটি যত না তাঁর, তার থেকে অনেক বেশি মেসির। ডান প্রান্তে সাইড লাইনের কাছে বল ধরে ডিফেন্ডারকে ঘাড়ের কাছে নিয়ে এগিয়ে যান মেসি। পায়ের কাজ দেখাতে দেখাতে বক্সে ঢোকেন। তার পরে বল রাখেন অরক্ষিত আলভারেসের কাছে। ডান পায়ে গোল করে ব্যবধান বাড়ান আলভারেস।

৮০ মিনিটের মাথায় মদ্রিচকে তুলে নেন কোচ দালিচ। নিজের শেষ বিশ্বকাপ থেকে খালি হাতেই ফিরতে হল তাঁকে। আগের বার ফাইনালে গিয়ে হেরেছিলেন। এ বার সেমিফাইনালেই শেষ হয়ে গেল লড়াই। বাকি সময়টা অনেক চেষ্টা করেও গোল শোধ করতে পারেনি ক্রোয়েশিয়া। ৩-০ গোলে জিতে ফাইনালে পা দিলেন মেসিরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement