মুখ দেখে বোঝা না গেলেও শুক্রবার মৃদু স্বরে জাতীয় সঙ্গীত গাইলেন ইরানের ফুটবলাররা। ছবি: রয়টার্স
ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে জাতীয় সঙ্গীতে গলা মেলাননি ইরানের ফুটবলাররা। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচে জাতীয় সঙ্গীত গাইতে দেখা গেল তাঁদের। শুক্রবার ওয়েলসের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপের দ্বিতীয় ম্যাচে খেলতে নেমেছিল ইরান। সেই ম্যাচে নিজেদের জাতীয় সঙ্গীতের সময় ইরানের প্রত্যেক ফুটবলারেরই ঠোঁট নড়তে দেখা গেল। এর পরেই প্রশ্ন উঠেছে, সে দেশের সরকারের চাপেই কি মাথা নোয়ালেন ফুটবলাররা?
মাহশা আমিনির হত্যা এবং দেশে হিজাব বিরোধী আন্দোলনের প্রতিবাদে প্রথম ম্যাচে জাতীয় সঙ্গীত গাননি ইরানের ফুটবলাররা। অনেকেই মনে করেছিলেন, দ্বিতীয় ম্যাচেও তাঁদের প্রতিবাদী মনোভাব বজায় থাকবে। কিন্তু এ দিন আর পুরনো দৃশ্য দেখা যায়নি। স্টেডিয়ামে জাতীয় সঙ্গীত বেজে ওঠার সময় প্রত্যেককেই ঠোঁট নাড়াতে দেখা যায়। যদিও সশব্দে নয়, মৃদু স্বরেই জাতীয় সঙ্গীত গাইলেন ফুটবলাররা।
প্রথম ম্যাচে ফুটবলারদের প্রতিবাদ দেখেই ইরান সরকারের তরফ থেকে পাল্টা হুঁশিয়ারি দেওয়া শুরু হয়ে যায়। সে দেশের সরকারের একাধিক মন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দেন, পরের ম্যাচে একই জিনিস দেখা গেলে দেশে ফেরার পর কড়া শাস্তির মুখে পড়বেন ফুটবলাররা। এমনকি, গ্রেফতারও করা হতে পারে। ইতিমধ্যেই সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খুলে গ্রেফতার হয়েছেন ইরানের প্রাক্তন ফুটবলার। এখনকার জাতীয় দলের ফুটবলারদেরও একই হাল হতে পারে। মনে করা হচ্ছে, শাস্তির ভয়েই এই ম্যাচে জাতীয় সঙ্গীতে গলা মিলিয়েছেন ফুটবলাররা।
মাঠে থাকা ইরানের সমর্থকরা অবশ্য প্রতিবাদ জানানোর সুযোগ এ দিনও ছাড়েননি। জাতীয় সঙ্গীত চলার সময় তীব্র ব্যাঙ্গাত্মক শিসে ভরিয়ে দেন তারা। পতাকা নাড়িয়ে এবং নারীদের স্বাধীনতার দাবিতে একাধিক পোস্টারও দেখা যায় মাঠে। অনেক মহিলা সমর্থকই কান্নায় ভেঙে পড়েন এ দিন। পুরুষ সমর্থকদেরও কাঁদতে দেখা যায়। এক মহিলা মাহশা আমিনির নাম লেখা জার্সি পরে এসেছিলেন। মুখ এমন ভাবে রাঙিয়েছিলেন, যাতে বোঝা যায় চোখ দিয়ে রক্ত পড়ছে। আসলে পুরোটাই প্রতিবাদী সুর। মাঠের বাইরেও এই প্রতিবাদ দেখা গিয়েছে।
ইরানে কোনও ফুটবল ম্যাচে মহিলাদের প্রবেশাধিকার নেই। কিন্তু কাতারে সেই নিয়ম নেই। ফলে খেলা দেখতে অনেক মহিলাই এসেছেন। যাঁরাই এসেছেন প্রত্যেকেই সরকারের বিরুদ্ধে কোনও না কোনও ভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছেন।