লিওনেল মেসি। ছবি: রয়টার্স।
বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখার অগ্নিপরীক্ষা।
লিয়োনেল মেসির সামনে কিংবদন্তি দিয়েগো মারাদোনাকে স্পর্শ করার শেষ সুযোগ।
বিশ্বকাপে ৩৬ বছরের অভিশাপ থেকে মুক্ত হওয়ার উদগ্র বাসনা।
পর্তুগালকে জিতিয়ে হাসছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো।
সাম্বার ঝড়ে সার্বিয়াকে উড়িয়ে দিয়ে গোড়ালির চোট, গ্রুপ পর্বে পরের দু’টি ম্যাচে খেলতে না পারার যন্ত্রণার মধ্যেও মুখে তৃপ্তির হাসি নেমার দা সিলভা সিলভা স্যান্টোস জুনিয়রের।
হাসি নেই মেসির মুখে। অথচ তিনি বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফুটবলার। বাঁ পায়ের জাদুতে সম্মোহিত করে রাখেন কোটি কোটি ভক্তকে। সেই ২০০৬ সালে প্রথম বিশ্বকাপ থেকে স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণা নিয়ে মাঠ ছাড়ার যে পর্বের সূচনা হয়েছিল, তা এই কাতারেও রক্তচক্ষু দেখাচ্ছে মেসিকে।
ভামোস...ভামোস...আর্জেন্টিনা। অর্থাৎ এগিয়ে চলো আর্জেন্টিনা। মেক্সিকোর বিরুদ্ধে মরণ-বাঁচন ম্যাচের আগে আর্জেন্টিনীয়দের প্রিয় এই স্লোগান শোনা গেল না! উল্টে দেখা গেল, শুক্রবার বিকেলে কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ে মেসিদের অনুশীলন মাঠের বাইরে মারাদোনার ছবি দেওয়া নীল-সাদা পতাকা নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিন যুবক। কালো কালিতে স্প্যানিশে যা লেখা রয়েছে, বাংলায় তার অর্থ, ‘‘আমাদের আবেগকে সম্মান করো।’’ বিশ্বকাপের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখার জন্য আকুল আর্তি মেসিদের কাছে।
নভেম্বরের কাতারে সন্ধে নামে দ্রুত। বিকেল সাড়ে চারটেতেই অস্ত যায় সূর্য। তার উপরে শুক্রবার সকাল থেকেই হাওয়া বইছে। বেশ একটা শিরশিরে ভাব। আবহাওয়া পরিবর্তনের মতোই বদলে গিয়েছে আর্জেন্টিনা শিবিরের ছবি। কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলেদের হস্টেলে থাকেন মেসিরা। আশ্রমের পরিবেশ।অনুশীলন শেষ করে ফিরেই সামনের খেজুর গাছের সারি দেওয়া রাস্তায় হাঁটতে বেরোতেন ফুটবলাররা। প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের কাছে হারের পর থেকে অনুশীলন করতে যাওয়া ছাড়া নাকি আর ঘরের বাইরেই বেরোচ্ছেন না আর্জেন্টিনার ফুটবলাররা। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক আধিকারিকের দশ বছরের ছেলে বাবার কাছে আবদার করেছিল, মেসির অটোগ্রাফ এনে দেওয়ার জন্য। গত তিন ধরে অটোগ্রাফের খাতা সঙ্গে নিয়ে ঘুরেও দেখা পাননি মেসির।
হস্টেলের মূল প্রবেশদ্বারের সামনে এত দিন সকাল থেকেই মেসি লেখা জার্সি পরে হাজির হয়ে গান গাইতেন কয়েক জন আর্জেন্টিনীয়। গত দু’দিন ধরে তাঁদেরও দেখা নেই।প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের কাছে হারলেও আর্জেন্টিনার শেষ ষোলোয় যোগ্যতা অর্জনের সম্ভাবনা তো এখনও শেষ হয়ে যায়নি। শনিবার মেক্সিকোর বিরুদ্ধে জিতলেই পরিস্থিতি বদলে যাবে। এমনকি ড্র করলেও আশা বেঁচে থাকবে শেষ ষোলোয় ওঠার। তা হলে কেন এত আতঙ্ক? নাকি ফুটবলারদের উপরে আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন তাঁরা? মারাদোনার দ্বিতীয় প্রয়াণদিবসের সন্ধেয় মেসিদের অনুশীলন দেখতে দেখতে আর্জেন্টিনার সাংবাদিক আলেখান্দ্রো মার্তিনেস বলেই ফেললেন, ‘‘মনেপ্রাণে চাই আর্জেন্টিনা কাল জিতুক। কিন্তু প্রতিপক্ষ মেক্সিকো বলেই চিন্তা হচ্ছে।’’
শুক্রবার বিকেলে সাংবাদিক বৈঠকে স্কালোনি দাবি করেছেন, তিনি একেবারেই চাপে নেই। বলেছেন, ‘‘এই সংক্রান্ত বিষয়ে আমাদের কোনও কথাই হয়নি। চাপেও নেই আমরা। নিজেদের উপরে যথেষ্ট আস্থা রয়েছে আমাদের। তাই জেতা ছাড়া অন্য কিছু ভাবছি না।’’ যোগ করেছেন, ‘‘দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে যে কোনও মূল্যে ঘুরে দাঁড়াতে হয়। আমার ফুটবলাররা তা খুব ভালই জানে। ওরা তৈরিও।’’
ঘুরে দাঁড়ানোর অপেক্ষায় মেসিও!