আর্লিং হালান্ড। ছবি টুইটার
একেই বলে বাপের ব্যাটা!
২৩ বছর আগে ম্যাঞ্চেস্টার সিটির হয়ে সই করেছিলেন আলফ-ইংগ হালান্ড। কিছু দিন আগে একই ক্লাবে সই করলেন তাঁর ছেলে আর্লিং হালান্ড। একটা বৃত্ত যেন সম্পূর্ণ হল। বাবা-ছেলের একই ক্লাবে খেলার নজির আগেও অনেক রয়েছে। কিন্তু হালান্ডের ব্যাপারটি আলাদা। ছোট থেকেই সিটির ভক্ত ছিলেন হালান্ড। ছোটবেলায় সিটির জার্সি পরে তাঁর তোলা ছবি হঠাৎই ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। পুরনো স্মৃতি রোমন্থন করে উত্তেজিত হালান্ড নিজেও। ক্লাবের তরফে বিশেষ জার্সি পেয়েছেন হালান্ড, যা তুলে দিয়েছেন তাঁর বাবা। পিছনে লেখা ‘ড্যাড’। জার্সির নম্বর ১৫, যা তাঁর বাবা পরতেন।
হালান্ডের জন্মের এক মাস আগে, ২০০০-এর জুলাইয়ে ম্যাঞ্চেস্টার সিটিতে যোগ দেন আলফ। এখনকার সিটির যে অবস্থা, তখন পরিস্থিতি ছিল তার থেকে অনেক আলাদা। দ্বিতীয়, এমনকি তৃতীয় ডিভিশনেও নেমে যেতে হয়েছে সিটিকে। আলফ আসার পরে দু’বার প্রথম ডিভিশনে ওঠে সিটি। তখনকার ইংল্যান্ডের ফুটবলে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড, আর্সেনাল, লিভারপুল, চেলসির দাপট। তাদের চোখে চোখ রেখে কথা বলতে থাকে সিটি।
তখন সিটির কোচ জো রয়েল। তাঁর প্রথম লক্ষ্যই ছিলেন আলফ। তত দিনে নটিংহ্যাম ফরেস্ট, লিডসে খেলে ফেলেছেন আলফ। সিটিতে যোগ দিয়েই তিনি পান বালঁ দ্যর জয়ী জর্জ উইয়া এবং পাওলো ওয়ানচপকে। অধিনায়কত্বের দায়িত্বও দেওয়া হয়েছিল আলফকে। সেই ম্যাচে আলফের পুরনো ক্লাব লিডসকে হারায় সিটি।
শোনা যায়, ম্যান ইউ তারকা রয় কিনের জন্যেই নাকি শেষ হয়ে গিয়েছিল আলফের ফুটবলজীবন। লিডসে থাকার সময় থেকেই কিনের সঙ্গে লড়াই শুরু আলফের। ১৯৯৭ সালে একটি ম্যাচে হালান্ডকে ট্যাকল করতে গিয়ে কিনের লিগামেন্ট ছিঁড়ে যায়। হালান্ড অভিযোগ করেন, কিন চোট পাওয়ার অভিনয় করছেন। তখন থেকেই রেষারেষি শুরু। কিন প্রতিশোধ নেন পরে। সিটিতে খেলার সময় বল কাড়তে গিয়ে সোজা আলফের হাঁটুতে পা চালিয়ে দেন কিন। রেফারি সেটা বুঝতে পারেননি। ২০০২ সালে আত্মজীবনীতে সে কথা লেখার পর কিনকে পাঁচ ম্যাচ নির্বাসিত করে ইপিএল। তবে চোট সারিয়ে উঠে আর পুরনো ছন্দে খেলতে পারেননি আলফ। দেশের হয়ে ৩৪টি ম্যাচ খেলেছেন। সিটির হয়ে ১৮১টি।
সিটির হয়ে খেলার সময় আলফ
বাবার মুখে ছোট থেকেই সিটির নাম শুনে অল্প বয়সেই ভক্ত হয়ে যান হালান্ড। ২০০৮ সালে লিগ কাপের ফাইনালে সিটির জার্সি পরে দেখা যায় ছোট হালান্ডকে। তাঁর যখন তিন বছর বয়স, তখনই দেশে ফিরে যান আলফ। হালান্ডের ফুটবলজীবন শুরু নরওয়েতেই। ১০ বছর বয়সে যোগ দেন ব্রাইনের যুব অ্যাকাডেমিতে। ১৬ বছর পূর্ণ হওয়ার তিন মাসে পেশাদার ফুটবলে অভিষেক হয় তাঁর। এর পর যোগ দেন মলডেতে। অস্ট্রিয়ার ক্লাব সালজবুর্গ তাঁকে কিনে নেয়।
ফুটবল খেলা শুরু হওয়ার সময় একটা জিনিস হালান্ডের সঙ্গে সমার্থক হয়ে যায় — গোল। যে ক্লাবেই গিয়েছেন ভুরি ভুরি গোল করেছেন। সালজবুর্গের হয়ে ২২ ম্যাচে ২৮ গোল করার পর যোগ দেন ডর্টমুন্ডে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে তাঁর গোলের বন্যা দেখে দেরি করেনি ডর্টমুন্ড। নরওয়ের ফুটবলারকে সই করানো হয়। ২০১৯-২০ মরসুমে ৪০ ম্যাচে ৪৪ গোল করেন। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে কনিষ্ঠতম ফুটবলার হিসাবে ২০টি গোল করার নজির রয়েছে তাঁর। গত মরসুমে ভুগেছেন চোট-আঘাতে। তাতেও ৩০টি ম্যাচে ২৯টি গোল করেছেন। দেশের হয়ে এখনও ২২টি ম্যাচে ২০টি গোল করেছেন।
ইপিএলের সূচি ঘোষণা হয়েছে বৃহস্পতিবার। তবে হালান্ড কবে খেলতে নামবেন সেটাই সব জায়গায় চর্চার বিষয়। ইপিএলের অন্যতম সেরা মূল্যবান ফুটবলার হয়ে ওঠার পথে তিনি। সিটিতে কি তিনি বাবার মতোই সাফল্য পাবেন তিনি? সময়ই বলবে।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।