ইস্টবেঙ্গলের সমর্থকেরা। — প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
ডুরান্ড কাপে আচমকাই বর্ণবিদ্বেষের অভিযোগ ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের বিরুদ্ধে। গত মঙ্গলবার ডুরান্ডের সেমিফাইনালে নর্থইস্ট ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে খেলা ছিল লাল-হলুদের। সেই ম্যাচে নর্থইস্টকে সমর্থন করতে যুবভারতীতে গিয়েছিলেন উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির প্রচুর সমর্থক। তাঁদের মধ্যে অনেকেই যাদবপুর, প্রেসিডেন্সির মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন। অভিযোগ, ইস্টবেঙ্গলের সমর্থকদের একাংশ তাঁদের অনবরত বর্ণবিদ্বেষী আক্রমণ করে গিয়েছেন। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ ছ’জনকে গ্রেফতার করেছে।
বুধবার থেকেই এই ঘটনা নিয়ে তোলপাড় ময়দানের ফুটবল। সমাজমাধ্যমে এ ধরনের টুকরো টুকরো ঘটনার ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়েছে। তবে সেই ভিডিয়োগুলির সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন। ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, লাল-হলুদ জার্সি পরা একাধিক সমর্থক উত্তর-পূর্বের সমর্থকদের উদ্দেশে বিভিন্ন মন্তব্য করছেন। তার মধ্যে কিছু আপত্তিকর, অশালীন মন্তব্যও ছিল।
প্রেসিডেন্সির এক ছাত্রীর অভিযোগ, তাঁদের উদ্দেশ করে করোনা, মোমো, চাউমিন ইত্যাদি বিভিন্ন নামে ডাকা হয়েছে। এমনকী কারও কারওকে ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয় যে নর্থইস্টের ওই সমর্থকেরা পুলিশকে ডাকতে বাধ্য হন। গ্যালারিতে এসে ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং স্থানীয় পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দেয়।
ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে নর্থইস্ট এগিয়ে যাওয়া থেকেই ঝামেলার শুরু। নর্থইস্টের সমর্থকেরা স্বাভাবিক ভাবেই দলের গোলের পর উচ্ছ্বাস করছিলেন। তা ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের একাংশ মেনে নিতে পারেননি। শুরু হয় গালিগালাজ এবং বর্ণবিদ্বেষী মন্তব্য। ইট, পাটকেল, জুতো নর্থইস্ট সমর্থকদের দিকে ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়। ম্যাচের পরে পুলিশের তিনটি গাড়িতে সেই সমর্থকদের বাড়ি ফেরানো হয়।
পুলিশের দাবি, গ্রেফতার করা ছয় সমর্থকের মধ্যে একজন মত্ত ছিলেন। ঘটনায় জড়িত ছিলেন দু’জন হকারও। পুলিশের কাছে সরকারি ভাবে নর্থইস্টের তরফে কোনও অভিযোগ জানানো হয়নি। কিন্তু আয়োজকদের জানানো হয়েছে। এক বিবৃতিতে নর্থইস্ট জানিয়েছে, ফুটবলে বর্ণবিদ্বেষের কোনও জায়গা নেই। এ ধরনের আচরণের কড়া নিন্দা করছে তারা। সব সময়ে সমর্থকদের পাশে থাকার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
ব্যাপারটা হালকা ভাবে নিচ্ছে না ইস্টবেঙ্গলও। তাদের তরফেও বিবৃতি দিয়ে বর্ণবিদ্বেষী আক্রমণের তীব্র প্রতিবাদ করা হয়েছে। ইস্টবেঙ্গলের অনেক সমর্থকও ক্ষিপ্ত। কারও দাবি, সমর্থকেরা দেশের যে কোনও প্রান্ত থেকেই আসতে পারেন। কিন্তু তাঁদের ছোট করা বা বর্ণবিদ্বেষী আক্রমণ করার অধিকার কারও নেই। যে লাল-হলুদ সমর্থকেরা এর পিছনে জড়িত, তাঁদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেওয়ার দাবি তুলেছেন ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদেরই আর একটি অংশ।
এআইএফএফের সেক্রেটারি জেনারেল শাজি প্রভাকরণ কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। বলেছেন, “খুব খারাপ লাগছে এ ধরনের অভিযোগ শুনে। আমরা বিষয়টাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। এ ধরনের ঘটনা কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। ভারতীয় ফুটবল থেকে এ জিনিস সবার আগে বাদ দিতে হবে।”