ইস্টবেঙ্গল নিয়ে কথা বললেন স্টিভন কনস্ট্যান্টাইন। নিজস্ব চিত্র
পুজো শেষ হলেই আইএসএল খেলতে নেমে পড়বে ইস্টবেঙ্গল। উদ্বোধনী ম্যাচে আগামী ৭ অক্টোবর তাদের প্রতিপক্ষ কেরল ব্লাস্টার্স। তার আগে ষষ্ঠীর দিনে নিউ টাউনের হোটেলে নির্বাচিত সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বললেন ইস্টবেঙ্গলের কোচ স্টিভন কনস্ট্যান্টাইন। সাক্ষী ছিল আনন্দবাজার অনলাইনও।
কখনও হালকা মেজাজে, কখনও আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে দেখা গেল ইস্টবেঙ্গল কোচকে। খুব বেশি দিন হল দলকে হাতে পাননি। এর মধ্যেই সমর্থকদের বিরাট কিছু প্রত্যাশা করতে বারণ করলেন তিনি। ব্রিটিশ কোচ সাফ বলেছেন, “একটা নতুন দল নিয়ে খেলতে নামছি। বাকিদের থেকে আমরা অন্তত দু’মাস পিছিয়ে। যদি প্লে-অফের যোগ্যতা অর্জন করতে পারি, তা হলে সেটা অলৌকিক ব্যাপার হবে।” গত দু’বছর ইস্টবেঙ্গল সাফল্য পায়নি। এ বার সেই ব্যর্থতা ঘুচবে? প্রশ্ন উঠতেই আবার আক্রমণাত্মক কনস্ট্যান্টাইন। বললেন, “শুধু দু’বছর আইএসএলে ব্যর্থতাকেই দেখছেন। তার আগে ১৮ বছরে কী করেছে ইস্টবেঙ্গল? এক বারও আই লিগ জিততে পারেনি। তাই গত ২০ বছর ধরেই ওদের পারফরম্যান্স ভাল নয়।”
আরও বেশ কিছু বিষয় নিয়ে কথা বললেন কনস্ট্যান্টাইন:
প্রথম ম্যাচ নিয়ে: যে কোনও ম্যাচই আমাদের কাছে কঠিন। আমরা দেরি করে অনুশীলন শুরু করেছি। কঠিন মরসুম হতে চলেছে। দল কতটা তৈরি, এটা প্রথম ম্যাচের পর বলতে পারব। আমরা কিছু প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছি। অনেক বিষয়ে উন্নতি করেছি। কেরল দলটা ভাল। কোচও অভিজ্ঞ। দু’-তিন জন নতুন ফুটবলারকে ওরা নিয়েছে। ফলে কঠিন লড়াই হবে। কেরলে ভরা মাঠে খেলতে হবে ভেবে ভয় পাচ্ছি না। এখানে খেললেও ভর্তি স্টেডিয়ামে খেলতে হবে আমাদের। তবে আমরা জিততেই যাচ্ছি।
দলের প্রস্তুতি সম্পর্কে: আমি কখনওই পুরোপুরি তৃপ্ত হই না। ডুরান্ড কাপে আমরা একটা ম্যাচে জিতেছি। কিন্তু ওই প্রতিযোগিতা আমাদের কাছে চারটে প্রদর্শনী ম্যাচেই মতোই ছিল। আমি চেষ্টাই করিনি পরের পর্বের যোগ্যতা অর্জন করার। মাত্র দু’সপ্তাহের প্রস্তুতি নিয়ে সেটা করাও সম্ভব ছিল না। প্রথম ১১ দিন শুধু দৌড় করিয়েছি ফুটবলারদের। কৌশল, পরিকল্পনা নিয়ে কোনও কথাই বলিনি। নিজেদের ফিট রাখাই আসল উদ্দেশ্য ছিল। এখনও সেটা চলছে। আরও সময় পেলে ডুরান্ড কাপে গুরুত্ব দিয়ে দেখতাম। একটা ট্রফি ছাড়া আমার কাছে ডুরান্ড কাপের কোনও গুরুত্ব নেই। ওখানে খেললে এএফসি-তেও যাওয়া যায় না। বিরাট টাকা পুরস্কারও পাওয়া যায় না।
আইএসএল সম্পর্কে: আমার মনে হয় আইএসএলে অন্তত ১২টা দল থাকা দরকার। সঙ্গে অবনমন-উত্তরণ থাকতে হবে। যদি ১২টা দল থাকে, তা হলে হোম-অ্যাওয়ে মিলিয়ে ২২টা ম্যাচ হবে। এর পর প্রথম ছয় দল এবং শেষ দল নিয়ে হোম এবং অ্যাওয়ে ফরম্যাটে খেলা আয়োজন করা যেতে পারে। তা হলে আরও ১০টা ম্যাচ পাওয়া যাবে। তা হলে ৩২টা প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ হবে। এএফসি চায় প্রতিটা ক্লাব ২৭টা ম্যাচ খেলুক। ডুরান্ড কাপে চারটে অর্থহীন ম্যাচ রাখার কোনও মানেই হয় না। অনেকেই রিজার্ভ দল পাঠিয়েছে। অনেকে অংশগ্রহণই করেনি। উদ্দেশ্যটাই ব্যর্থ হয়েছে। প্রত্যেক সপ্তাহে নিয়ম করে খেলতে হবে। এ বারের সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল, সপ্তাহান্তে খেলতে হবে। ফুটবলটা এ ভাবেই হয়। বিদেশের দিকে তাকালে বুঝবেন, ওখানে খেলা হয় সপ্তাহের শেষে। ফলে আমার কাছে এই পদক্ষেপ খুবই ভাল। তবে দলের ওঠানামা থাকতেই হবে। ভারতীয় ফুটবলের উন্নতির জন্যে এটা দরকার।
কোচই কি ইস্টবেঙ্গলের আসল তারকা: আমি তো আর মাঠে নেমে খেলছি না। আমার দলে ফুটবলাররাই তারকা। আমি ওদের খেলার সুযোগ দিই। সঠিক জায়গায় সঠিক সময়ে ফুটবলারদের খেলানোই আমার কাজ। আমার দলে কোনও জায়গায় বিদেশি ফুটবলার খেলে মানে সেখানে কোনও ভারতীয় সুযোগ পাবে না, তা হয় না। ভারতীয়রাও ওই জায়গায় জন্যে লড়াই করতে পারে। ভাল খেললে বিদেশিকে সরিয়ে ওকেই খেলাব।
কলকাতা লিগে কেন রিজার্ভ দল খেলানো হচ্ছে: আমি চাই রিজার্ভ দলে প্রত্যেকে বাঙালি হোক। প্রত্যেকের বয়স ২৩-এর কম হোক। যদি এ ধরনের প্রতিযোগিতায় ওরা ভাল খেলে, তা হলে ভবিষ্যতে সিনিয়র দলে নিতেই পারি। এ ভাবেই ফুটবলারদের তৈরি করে। ইউরোপে ১০-১১ বছর বয়স থেকে ফুটবলার তৈরির কাজ শুরু হয়ে যায়। এখানে সেটা তৈরি হচ্ছে ২৩ বছরে এসে। আমার যখন ১২ বছর বয়স ছিল এবং স্কুলে পড়তাম, তখন বছরে ৭০টা ম্যাচ খেলতাম।
দল সম্পর্কে: আমার দলে প্রতিভার কোনও অভাব নেই। যারা আছে তাদের নিয়ে খুশি। এর মধ্যে অনেকেই রয়েছে যারা হয়তো এ বার আইএসএল খেলার সুযোগই পেত না। ওদের কাছে সুযোগ রয়েছে এটা প্রমাণ করার যে, ওদের আগের ক্লাবগুলো ছেড়ে দিয়ে কতটা ভুল করেছে।
গোল করার সমস্যা প্রসঙ্গে: আমরা প্রস্তুতি ম্যাচে অনেক গোল করেছি। আশা করছি আইএসএলেও সে ভাবেই গোল পাব। আসলে এটা একটা প্রক্রিয়া। রাতারাতি সব বদলে দেওয়া সম্ভব নয়। কেরল থেকে গোল না ফিরলে সেটা খুব ভাল। যদি গোল করতে পারি, তা হলে দারুণ হবে।
কলকাতা ডার্বি প্রসঙ্গে: আপাতত আমার মাথায় শুধুই কেরল ব্লাস্টার্স। ডার্বি নিয়ে ভাবছিই না।
জাতীয় দলের থেকে ক্লাবে কোচিং করানো কতটা আলাদা: জাতীয় দলে কোচিং করানো গর্বের ব্যাপার। কিন্তু কোনও ম্যাচে হারলে খুব খারাপ লাগে। কারণ পরের ম্যাচ জেতার জন্য অনেক সময় দু’মাস অপেক্ষা করতে হয়। এটাই মূল সমস্যা। ক্লাবে কোচিং করালে প্রতি সপ্তাহে একটা করে ম্যাচ থাকে। ফলে ব্যস্ত থাকা যায়। ফুটবলারদের সঙ্গে অনেকটা সময় কাটানো যায়। তা ছাড়া, জাতীয় দলে থাকলে ফুটবলারদের বুঝে উঠতেই অনেক সময় চলে যায়।