রবিবার মুখোমুখি হচ্ছে দুই প্রধান। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
রাত পোহালেই কলকাতা ডার্বি। আড়াই বছর পর আবার শহরে ফিরছে এই ম্যাচ। উত্তেজনা ইতিমধ্যেই তুঙ্গে। সন্ধেয় ভারত-পাকিস্তানের মহারণ থাকলেও ফুটবলপ্রেমীদের তাতে কোনও উৎসাহ নেই। ময়দানে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে টিকিটের হাহাকার। বিক্ষোভ, পথ অবরোধও বাকি নেই।
তবে ম্যাচের দিকে তাকালে পরিস্থিতি একটু হলেও গম্ভীর। ডুরান্ড কাপে ডার্বির মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে দুই প্রধানই জয়ের মুখ দেখেনি। এটিকে মোহনবাগান তবু প্রস্তুতি ম্যাচে মহমেডানকে হারিয়েছে। ইমামি ইস্টবেঙ্গল প্রস্তুতি ম্যাচেও জিততে পারেনি। যে তিনটি ম্যাচ লাল-হলুদ এখনও পর্যন্ত খেলেছে, একটিতেও গোল করতে পারেনি। ডুরান্ডে সবুজ-মেরুন চার গোল খেলেও দিয়েছে তিনটি। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, ডার্বির আগে দুই প্রধানের প্রথম একাদশ কেমন হবে? কে হতে পারেন কালো ঘোড়া? কে বাজি মারবেন এই ম্যাচে?
প্রথম একাদশ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, দুই প্রধানেই গোল করার লোকের অভাব। রয় কৃষ্ণ এবং ডেভিড উইলিয়ামসের মতো দুই প্রধান স্ট্রাইকারকে ছেড়ে দেওয়ার মাশুল গুনতে হচ্ছে এটিকে মোহনবাগানকে। গোল করার জন্য লিস্টন কোলাসো, কিয়ান নাসিরি, মনবীর সিংহের উপরে ভরসা রাখছেন কোচ জুয়ান ফেরান্দো। কেউই এখনও আস্থা অর্জন করতে পারেননি। মাঝেমাঝে গোল করেন জনি কাউকোও। তবে তিনি মূলত মিডফিল্ডের ফুটবলার। বলের জোগান দেওয়া তাঁর কাজ। তাঁর উপরে পুরোপুরি গোল করার ভরসা করা যায় না।
গত বারের ডার্বিতে পরিবর্ত হিসাবে নেমে হ্যাটট্রিক করে রাতারাতি প্রচারের আলোয় চলে এসেছিলেন প্রাক্তন ফুটবলার জামশিদ নাসিরির ছেলে কিয়ান। ডুরান্ডেও তিনি খেলেছেন। তবে এই ডার্বিতেও প্রথম একাদশে তাঁর থাকার সম্ভাবনা নেই। মনবীর সিংহকে ফরোয়ার্ডে খেলানো হতে পারে। তাঁর সঙ্গী হতে পারেন কাউকো বা হুগো বুমোস। এক জন খেললে অপর জন মাঝমাঠে খেলবেন। এ ছাড়া মাঝমাঠে লিস্টন, কার্ল ম্যাকহিউ এবং আশিক কুরুনিয়ান খেলতে পারেন। রক্ষণ নিয়ে খুব বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন না ফেরান্দো। সেখানে শুভাশিস বসু, ফ্লোরেন্তিন পোগবা, প্রীতম কোটাল এবং আশিস রাই খেলবেন। গোলে অবশ্যই বিশাল কাইত।
বেশি সমস্যায় পড়বে ইস্টবেঙ্গল। একে তো গোল পাচ্ছে না তারা, তার উপর গোল করতে পারেন এমন কাউকে খুঁজেও পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতি ম্যাচের পরেই কপালের ভাঁজ চওড়া হচ্ছে কোচ স্টিভন কনস্ট্যান্টাইনের। যে দুই ফুটবলারকে আক্রমণভাগে খেলাচ্ছেন তিনি, তাঁদের সুযোগ নষ্টের বহর দেখে হতাশ সমর্থকরা। ভিপি সুহের ভাল করে বল নিয়ন্ত্রণই করতে পারছেন না। অন্য দিকে সুমিত পাসি হাত মেলানোর দূরত্ব থেকে গোল নষ্ট করছেন। শক্তিশালী এটিকে মোহনবাগান রক্ষণের সামনে তাঁরা কী ভাবে গোল করবেন, তাই নিয়ে চিন্তা রয়েছে।
ইমামি ইস্টবেঙ্গলকে আশা জাগাতে পারে রক্ষণ এবং মাঝমাঠ। রক্ষণে জেরি লালরিনজুয়ালা এবং লালচুংনুঙ্গা ভালই খেলছেন। বাঁ দিক থেকে তুহিন দাস নজর কেড়েছেন। কারালাম্বোস কিরিয়াকুকে এখনও ফিট মনে হয়নি। তিনি যদি ডার্বিতে ভাল খেলতে পারেন, তা হলে চিন্তা কমতে পারে লাল-হলুদের। ইমামি ইস্টবেঙ্গলের পক্ষে সবচেয়ে বড় সমস্যা হল, তাঁদের বিদেশিরা এখনও ফিট নন। পাশাপাশি, দলের ফুটবলারদের মধ্যে সঠিক বোঝাপড়া গড়ে ওঠেনি। দল গঠন করতে অনেক দেরি হওয়াই যে এর প্রধান কারণ, তা আগে বার বার বলেছেন কনস্ট্যান্টাইন।
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক কী হতে পারে দুই প্রধানের প্রথম একাদশ:
এটিকে মোহনবাগান: বিশাল কাইত (গোলকিপার), শুভাশিস বসু, ফ্লোরেন্তিন পোগবা, আশিস রাই, প্রীতম কোটাল, লিস্টন কোলাসো, হুগো বুমোস, কার্ল ম্যাকহিউ, আশিক কুরুনিয়ান, জনি কাউকো এবং মনবীর সিংহ।
ইমামি ইস্টবেঙ্গল: কমলজিৎ সিংহ (গোলকিপার), লালচুংনুঙ্গা, কারালাম্বোস কিরিয়াকু, জেরি লালরিনজুয়ালা, মহম্মদ রাকিপ, তুহিন দাস, অনিকেত যাদব, আলেক্স লিমা, অমরজিৎ সিংহ, এলিয়ান্দ্রো/হিমাংশু জাংরা এবং ভিপি সুহের।