কমিটি অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর্সের খসড়া প্রস্তাব। চিহ্নিত অংশে আই লিগকে গুরুত্ব।
ভারতীয় ফুটবলে খাতায়কলমে আইএসএলের গুরুত্ব সম্ভবত খর্ব হতে চলেছে। বস্তুত, আইএসএলের কোনও গুরুত্বই না থাকতে পারে। সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন আই লিগকেই দেশের ‘এক নম্বর লিগ’ হিসাবে স্বীকৃতি দিতে চলেছে। অন্তত ফেডারেশনের কাজকর্ম দেখার জন্য খসড়া সংবিধান দেখে তেমনই মনে হচ্ছে। ফেডারেশনের কাজকর্ম দেখার জন্য সুপ্রিম কোর্ট যে ‘কমিটি অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর্স’ (সিওএ) নিয়োগ করেছিল, তারা খসড়া সংবিধান জমা দিয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ আদালতে জমা দেওয়া ৭৭ পাতার সেই খসড়া সংবিধানে কোথাও আইএসএল-এর কোনও উল্লেখই নেই!
২০২১-২২ সালের আই লিগ চ্যাম্পিয়ন গোকুলম। ফাইল চিত্র
সিওএ-র তিন সদস্য সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি এআর দাভে, প্রাক্তন জাতীয় ফুটবলার ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায় এবং প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এসওয়াই কুরেশি মুখবন্ধ খামে তাঁদের প্রস্তাবিত সংবিধান জমা দিয়েছেন। আনন্দবাজার অনলাইনের হাতে সেই খসড়াটি এসেছে।
খসড়ার ১ নম্বর ধারার ৩৩ নম্বর পয়েন্টে বলা হয়েছে, ‘আই লিগই এআইএফএফ স্বীকৃত দেশের সব থেকে বড় লিগ।’ এর পর ৫৬ নম্বর পয়েন্টে সব থেকে বড় লিগের (সিনিয়র মোস্ট লিগ) ব্যাখ্যা দিয়ে লেখা হয়েছে, ‘এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সরাসরি যোগ্যতা অর্জনের জন্য ঘরোয়া লিগে উত্তরণ এবং অবনমন থাকা জরুরি। যে লিগে সেটা আছে, সেটাই দেশের সিনিয়র মোস্ট লিগ।’ ঘটনা হল, আইএসএলে কোনও অবনমন নেই। যা থেকে প্রকারান্তরে স্পষ্ট, দেশের সর্বোচ্চ আদালত নিযুক্ত সিওএ কোনও গুরুত্বই দিতে চাইছে না আইএসএল-কে।
খসড়া সংবিধানে ফেডারেশনের এগজিকিউটিভ কমিটির খোলনলচে বদলে ফেলার কথাও বলা হয়েছে। এখন ফেডারেশনের ১৭ জনের এগজিকিউটিভ কমিটিতে এক জন সভাপতি, এক জন সিনিয়র সহ-সভাপতি, চার জন সহ-সভাপতি, এক জন কোষাধ্যক্ষ এবং ১০ জন সদস্য রয়েছেন। সিওএ তাদের প্রস্তাবিত সংবিধানের ২৪ নম্বর ধারায় বলেছে, এগজিকিউটিভ কমিটি আট জনের হোক। এক জন সভাপতি, এক জন সহ-সভাপতি, এক জন কোষাধ্যক্ষ এবং পাঁচ জন সদস্য থাকুন। এই পাঁচ সদস্যের মধ্যে তিন জনকে প্রাক্তন ফুটবলার হতেই হবে। তাঁদের নির্বাচিত করার জন্য ‘প্লেয়ার্স কমিশন’ তৈরির কথাও বলা হয়েছে খসড়া সংবিধানে।
২০২১-২২ সালের আইএসএল চ্যাম্পিয়ন হায়দরাবাদ এফসি। ফাইল চিত্র
প্রসঙ্গত, গত ১৮ মে সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছিল, ফেডারেশনের পরবর্তী নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত সিওএ ভারতীয় ফুটবলের প্রশাসনিক দিক সামলাবে। বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি পিএস নরসিংহের বেঞ্চ বলেছিল, ‘‘ফেডারেশন এখন যে ভাবে চলছে, তা দেশের জাতীয় ক্রীড়ানীতির বিরোধী। ফেডারেশনের কাজ সন্তোষজনক নয়।’’
দিল্লি ফুটবল ক্লাব গত ১২ মে ফেডারেশনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল। তার আগে তারা দিল্লি হাই কোর্টেরও দ্বারস্থ হয়েছিল। দিল্লি ফুটবল ক্লাব সু্প্রিম কোর্টে তাদের আবেদনে বলেছিল, দিল্লি হাই কোর্ট তাদের আবেদন শোনেনি। এখন দেখার, সিওএ-র প্রস্তাবিত সংবিধান সুপ্রিম কোর্ট অনুমোদন করে কি না, নাকি তারা এই খসড়াতেও কোনও রদবদলের সুপারিশ করে। দেখার এ-ও যে, সুপ্রিম কোর্ট আইএসএলের গুরুত্ব খর্ব করা নিয়ে কোনও মন্তব্য করে কি না। বা ওই বিষয়ে তারা কোনও পরামর্শ দেয় কি না।