একাগ্র: লাল-হলুদের সমর্থকরাই অনুপ্রেরণা চিমার। এসসি ইস্টবেঙ্গল।
লাল-হলুদে তাঁর যোগদানের পর থেকেই সমর্থকদের উন্মাদনা তুঙ্গে। ওকোরি না হলেও তিনিও যে চিমা! ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড ম্যানেজার ওয়ে গুন্নার সোলসারের প্রাক্তন ছাত্র, ৩০ বছরের নাইজিরীয় স্ট্রাইকারকে ঘিরেই অষ্টম আইএসএলে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন শতাব্দী প্রাচীন ক্লাবের ভক্তেরা। তিনি কি পারবেন প্রত্যাশাপূরণ করতে? রবিবার গোয়া থেকে ভিডিয়ো কলে আনন্দবাজারকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে অকপট ড্যানিয়েল চিমা।
চিমা নামের মাহাত্ম্য: এসসি ইস্টবেঙ্গলে সই করার পর থেকেই চিমা ওকোরির নাম শুনছি। গণমাধ্যমে লাল-হলুদ ভক্তদের লেখা, ‘চিমার প্রত্যাবর্তন’ দেখেছি। বিশ্বাস করুন, সমর্থকদের ভালবাসায় আপ্লুত হলেও আমি খুব একটা আনন্দিত হইনি। কারণ, চিমা ওকোরি নিজের কাজ সাফল্যের সঙ্গে করেছিলেন বলেই সমর্থকেরা ওঁকে এখনও মনে রেখেছেন। আমার কাজ কিন্তু এখনও শুরু হয়নি। আশা করব, আমিও নিজেকে প্রমাণ করে সকলের মন জয় করতে পারব।
লাল-হলুদে সইয়ের নেপথ্যে: এসসি ইস্টবেঙ্গলে খেলার প্রস্তাব পাওয়ার পরেই এই ক্লাব সম্পর্কে রীতিমতো গবেষণা করেছিলাম। লাল-হলুদের অতীত গৌরব, সাফল্যের কাহিনি আমাকে আকৃষ্ট করেছিল। তা ছাড়া আমি সব সময়ই নিজেকে প্রমাণ করতে ভালবাসি। এ বার ভারতে সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়াই লক্ষ্য।
সোলসারের অবদান: আমার দেখা অন্যতম সেরা ম্যানেজার। ওয়ে গুন্নার সোলসারকে আমি বাবার মতো শ্রদ্ধা করি। ওঁর জন্যই আমি এই জায়গায় পৌঁছতে পেরেছি। নরওয়ের প্রথম ডিভিশন লিগে মলডে এফকে-তে খেলার সময় সোলসারের সান্নিধ্যে আসি। উনি দলটাকে একটা পরিবার হিসেবে দেখতেন। ওঁর কাছে পারফরম্যান্সই শেষ কথা। সব সময়ই চাইতেন প্রত্যেককে খেলার সুযোগ দিতে। কারও প্রতি কখনও পক্ষপাতিত্ব করতে দেখিনি। এক দিন অনুশীলনে সোলসার আমাকে বলেছিলেন, ‘‘চিমা যখন তুমি বিপক্ষের পেনাল্টি বক্সের মধ্যে ঢুকে পড়তে সফল হবে, তখন গোলে বল মারা ছাড়া অন্য কিছু ভাববেই না। যদি দেখো সরাসরি বল গোলে মারা সম্ভব নয়, তখনই সতীর্থদের পাস দেবে। এটা কখনও ভুলবে না।’’ নিয়মিত না হলেও যোগাযোগ রয়েছে ওঁর সঙ্গে। কোনও সমস্যায় পড়লেই সোলসারের দ্বারস্থ হই। ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের ব্যর্থতার জন্য যে ভাবে সোলসারকে কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছিল, তাতে খুব কষ্ট হচ্ছিল। শনিবার টটেনহ্যাম হটস্পারের বিরুদ্ধে ৩-০ জয়ের পরে খুব আনন্দ হচ্ছে।
ডার্বির ভাবনা: এই ম্যাচটা নিয়ে বাড়তি চাপ অনুভব করছি না। এর আগে আমি অনেক ডার্বি খেলেছি এবং দেখেছি। এই ধরনের ম্যাচে সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে একটা দল হিসেবে খেলা। ডার্বিতে ব্যক্তিগত কোনও লক্ষ্য না থাকাই ভাল। প্রত্যেকে যদি দলের কথা ভেবে খেলে, তা হলে জিততে সমস্যা হবে বলে মনে হয় না। সমর্থকেরা ডার্বিতে গোল করার জন্য আমাকে অনুরোধ করছেন। কিন্তু আমার কাছে দলের সাফল্যের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোনও কিছুই নয়।
লক্ষ্যে স্থির: সব সময় নিজেকে উজাড় করে দিতে হবে। প্রত্যেকটি ম্যাচেই নিজের খেলায় উন্নতি করতে হবে। কাউকে হতাশ করা চলবে না। তাই মাথা ঠান্ডা রেখে খেলা
খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সতীর্থদের প্রশংসা: করোনা অতিমারির কারণে হোটেলেই বন্দি থাকতে হচ্ছে। তার উপরে এখন আমাদের কোয়রান্টিন পর্ব চলছে। পরিবারের থেকে এত দূরে একা থাকাটা খুবই কষ্টকর। ক্লাব কর্তারা, সতীর্থরা সেই হতাশা অনেকটাই কাটিয়ে দিয়েছেন। আমরা এখন একটা পরিবারের মতো।
সমর্থকরাই অনুপ্রেরণা: ভারতের মাটিতে পা রাখার আগেই যে ভাবে লাল-হলুদ সমর্থকেরা আমার প্রতি ভালবাসা উজাড় করে দিয়েছেন, তাতে আমি আপ্লুত। এ বার আমার ফিরিয়ে দেওয়ার পালা। সমর্থকেরাই তো অনুপ্রেরণা। ওঁদের আস্থার মর্যাদা দেওয়াই মূল লক্ষ্য।