অভিষেকের ক্লাবে গন্ডগোল ফাইল ছবি
মাঠে এখনও বল গড়ায়নি। কোনও প্রতিযোগিতাতেও এখনও নামেনি দল। তার আগেই তৃণমূলের অন্যতম শীর্ষনেতা তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডায়মন্ড হারবার ফুটবল ক্লাবে শুরু হয়ে গেল অন্তর্কলহ। মরসুমের শুরুতে যাঁকে কোচ করে আনা হয়েছিল, সেই প্রাক্তন ফুটবলার কৃষ্ণেন্দু রায় নিঃশব্দে তাঁর দায়িত্ব থেকে সরে গিয়েছেন। ক্লাবের সঙ্গে এখন তাঁর আর কোনও যোগাযোগও নেই। অসমর্থিত সূত্রের খবর, ক্লাবের এক শীর্ষকর্তার সঙ্গে মনোমালিন্যের কারণেই নীরবে সরে দাঁড়িয়েছেন কৃষ্ণেন্দু।
গত ১৪ এপ্রিল, অর্থাৎ পয়লা বৈশাখের দিন বারপুজোর মাধ্যমে কলকাতা ময়দানে আত্মপ্রকাশ করে অভিষেকের ডায়মন্ড হারবার ফুটবল ক্লাব। নিজের লোকসভা কেন্দ্র ডায়মন্ত হারবার নিয়ে বরাবরই বাড়তি যত্নশীল অভিষেক। রাজ্যের অন্য ৪১টি লোকসভা কেন্দ্র থেকে তিনি ডায়মন্ড হারবারকে বরাবর আলাদাই করতে চেয়েছেন। যে কারণে কোভিডের সময় তাঁর ‘ডায়মন্ড হারবার মডেল’-এর উদ্ভব। একই ভাবে এলাকার তরুণ প্রজন্মকে টানতে অভিষেক এমপি কাপের পত্তন করেছিলেন। সেখানে অংশ নিত তাঁর লোকসভা কেন্দ্রের বিভিন্ন ক্লাব। সেই প্রতিযোগিতা থেকেই শুরু ডায়মন্ড হারবার ফুটবল ক্লাবের। যারা চলতি বছরে লিগও খেলছে প্রথম ডিভিশনে।
আইএফএ-র গভর্নিং বডির বৈঠকেই অভিষেকের ক্লাবের প্রথম ডিভিশনে খেলা নিশ্চিত হয়। প্রথম থেকেই দলের কোচ হিসাবে যুক্ত ছিলেন প্রাক্তন ফুটবলার কৃষ্ণেন্দু। মহেশতলার বাটানগর মাঠে ট্রায়াল, ফুটবলার নির্বাচন, দল তৈরি— সব কাজই তিনি কার্যত একার হাতে করেছেন। গোল বাধে রাতারাতি স্পেনের কিবু ভিকুনাকে কোচ করে আনার পর। তার পর থেকেই পরিস্থিতি বদলাতে থাকে। কৃষ্ণেন্দুর ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য— মোহনবাগানের প্রাক্তন কোচ ভিকুনাকে যে কোচ করে আনা হবে, সে ব্যাপারে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রাখা হয়েছিল কৃষ্ণেন্দুকে। ঘটনাচক্রে, ভিকুনার কোচিংয়ে মোহনবাগান আই লিগ পেয়েছিল।
ময়দানের বিভিন্ন সূত্রের খবর, ভিকুনা নিজে শহরে আসার আগে মুম্বইয়ের এক ‘বিশ্লেষক’কে ডায়মন্ড হারবার ফুটবল ক্লাবের দায়িত্ব নিতে পাঠান। তিনি এসে কিছু না বলেই কৃষ্ণেন্দুর দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন। কৃষ্ণেন্দু নন, দলকে বকলমে কোচিং করাতে থাকেন ওই বিশ্লেষক। বিদেশ থেকে তাঁকে বিভিন্ন নির্দেশ পাঠাতেন ভিকুনা। অনুশীলনের সময় সেগুলি অনুসরণ করতেন ওই বিশ্লেষক। কৃষ্ণেন্দু বুঝতে পারতেন না কোচ হিসাবে তাঁর ভূমিকা কী? কৃষ্ণেন্দুর হিতৈষীদের দাবি, ফুটবলাররা তত দিনে কৃষ্ণেন্দুর কোচিং দর্শনের সঙ্গে একাত্ম হয়ে গিয়েছিলেন। রাতারাতি অন্য এক জন এসে ‘দায়িত্ব’ নিয়ে নেওয়ায় তাঁরাও সমস্যায় পড়েন। প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশের দাবি, ক্লাবকর্তারা অনুশীলন দেখতে এলে ওই বিশ্লেষকের ‘দাপট’ নাকি বেড়ে যেত। তবে আনুষ্ঠানিক ভাবে কেউই তা স্বীকার করতে রাজি নন।
ক্লাব সূত্রের খবর, প্রথমে ঠিক ছিল, ভিকুনাকে টেকনিক্যাল ডিরেক্টর হিসাবে আনা হবে। কোচ থাকবেন কৃষ্ণেন্দুই। পরে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে ভিকুনাকেই প্রধান কোচ হিসাবে ঘোষণা করা হয়। বলা হয়, সহকারী হিসাবে থাকবেন কৃষ্ণেন্দু। গত ১ জুন শহরে আসেন ভিকুনা। এক দিন পরেই তিনি দলের কোচিংয়ের দায়িত্ব নেন।
ক্লাবের একটি সূত্রের দাবি, এক শীর্ষকর্তা কৃষ্ণেন্দুকে ‘অসম্মানজনক’ কিছু কথা বলেন। ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান এবং জাতীয় দলে খেলা প্রাক্তন ফুটবলার কৃষ্ণেন্দু তা মেনে নিতে পারেননি। তিনি তখনই ঠিক করেন, আর কোচিং করাবেন না। অনুশীলনে আসাও বন্ধ করে দেন। পরে ক্লাবের কেউ তাঁর সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করেননি বলে জানা গিয়েছে। ঘনিষ্ঠমহলে কৃষ্ণেন্দু জানিয়েছেন, সহকারী হিসাবে থাকতে তাঁর কোনও আপত্তি ছিল না। কিন্তু যে ব্যবহার তাঁর সঙ্গে করা হয়েছে, তা চূড়ান্ত অপমানজনক। তাই ক্লাবের সঙ্গে সম্পর্ক না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
বিষয়টি নিয়ে জানতে আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে যোগাযোগ করা হয়েছিল কৃষ্ণেন্দুর সঙ্গে। তিনি এ ব্যাপারে কোনও কথা বলতে রাজি হননি। শুধু বলেছেন, “ডায়মন্ড হারবার ক্লাব আমার হৃদয়ের খুব কাছের। সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় খুব ভাল উদ্যোগ নিয়েছেন। এই ক্লাবের সাফল্য কামনা করি।” ডায়মন্ড হারবার ফুটবল ক্লাবের কর্তা আকাশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। তিনি কথা বলার প্রতিশ্রুতি দিয়েও পরে আর ফোন ধরেননি। বিষয়টি নিয়ে ময়দানে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তা অস্বীকার করছেন না কেউই। তবে একইসঙ্গে তাঁরা জানাচ্ছেন, কৃষ্ণেন্দু ক্লাবে আসা বন্ধ করে দিলেও প্রকাশ্যে কিছু না-বলায় পরিস্থিতি তেমন কোনও জায়গায় যায়নি।
মরসুম শুরু হতে এখনও বেশ কিছু দিন বাকি। এখন দেখার, এই বিতর্কের প্রভাব ফুটবলারদের উপরে পড়ে কি না। কৃষ্ণেন্দুর সঙ্গে ক্লাব আলাপ-আলোচনায় যায় কি না, সেটাও দেখার। কারণ, কৃষ্ণেন্দু বলেছেন, সহকারী কোচ হিসেবে থাকতে তাঁর কোনও আপত্তি ছিল না।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।