উল্লাস: মরসুমের প্রথম ডার্বিতে মনবীরের গোলের পরে তাঁকে ঘিরে উৎসব কৃষ্ণদের। এটিকে-মোহনবাগান
আইএসএল
এসসি ইস্টবেঙ্গল ০ এটিকে-মোহনবাগান ৩
প্রথমার্ধে ১১ মিনিটের ব্যবধানে এটিকে-মোহনবাগান ৩-০ এগিয়ে যাওয়ার পরে যখন এসসি ইস্টবেঙ্গল গোলকিপার অরিন্দম ভট্টাচার্য মাঠ ছেড়ে উঠে যাচ্ছিল, তখন প্রথমে মনে পড়ল ৪৬ বছর আগের এক বিকেলের কথা।
১৯৭৫ সালের সেই বিকেলে আমাদের গোলকিপার ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায় ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে চার গোল খেয়ে উঠে যাওয়ার পরে পরিবর্ত গোলকিপার হিসেবে মাঠে এসেছিলেন প্রশান্ত মিত্র(মিলনদা)। আমরা তখন ছত্রভঙ্গ হয়ে গিয়েছি। এ দিন ২৩ মিনিটের মধ্যে বড় ম্যাচে এটিকে-মোহনবাগান ৩-০ এগিয়ে যাওয়ার পরে মনে হচ্ছিল, ফের পাঁচ গোল হয়ে যাবে না তো! তবে এসসি ইস্টবেঙ্গলের পরিবর্ত হিসেবে নামা গোলকিপার শুভম সেন যে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে গোলরক্ষা করল, বাকি ম্যাচে তাতে বড়সড় লজ্জার হাত থেকে রক্ষা পেল লাল-হলুদ শিবির।
হয়ত ওই সময়ে অরিন্দমকে তুলে ঠিকই করেছিলেন ইস্টবেঙ্গল কোচ ম্যানুয়েল দিয়াস। কিন্তু ০-৩ পিছিয়ে যাওয়ার পরে লাল-হলুদ অধিনায়ক অরিন্দম যে ভাবে খোঁড়াতে শুরু করল তা দেখে আমি অবাক। মনে পড়ছিল সেই ভাস্করেরই কথা। আশির দশকে লিগে একটা বড় ম্যাচে বল ধরতে গিয়ে হাঁটুর নিচে বড় ক্ষত হয়ে গিয়েছিল ওর। ও তখন লাল-হলুদে। আমরা বলছিলাম, শুশ্রূষা করিয়ে নে। ও দেখলাম যুবভারতীর মাটি তুলে ওই ক্ষতে ঘসে নিয়ে বলল, এটা বড় ম্যাচ রে। দলের মানসিকতায় ধাক্কা লাগবে। এই মনোভাবই ভাস্করকে অন্যদের চেয়ে আলাদা করেছে।
ম্যাচটায় এটিকে-মোহনবাগানের জেতারই কথা ছিল। প্রিভিউতেই লিখেছিলাম, এই রয় কৃষ্ণকে আটকাতে পারবে না এসসি ইস্টবেঙ্গল রক্ষণ। আর তা পারেওনি। হাবাসের সুবিধা হচ্ছে উনি আগের বারের দলটার সঙ্গে লিস্টন কোলাসো, জনি কাউকো, হুগো বুমোসকে অন্তর্ভুক্ত করে আক্রমণ ভাগকে আরও জোরদার করে ফেলেছেন। ভাস্কোর মাঠে তারই সুফল তুলল সবুজ-মেরুন। আর এসসি ইস্টবেঙ্গল কোচ ম্যানুয়েল দিয়াসের একে তো এটা প্রথম বছর। তার উপরে লগ্নিকারী ও ক্লাবকর্তাদের সমস্যায় ভাল দল হাতে পাননি। যাদের নিয়ে দল গড়া হয়েছে, তাদের অনেকেই লাল-হলুদ জার্সির ভার বইতে সক্ষম নয়। এরা কলকাতা লিগও জিততে পারবে কি না সন্দেহ।
এ দিন এসসি ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণে কোনও মার্কিং, কভারিং, নিখুঁত ট্যাকল দেখলাম না প্রথমার্ধে। ১২ মিনিটে রয় কৃষ্ণ যখন ডান পায়ের ফ্লিকে প্রথম গোল করছে, তখন ওকে ধরাই যায়নি। ১৪ মিনিটে অরিন্দম মনবীরের প্রথম পোস্টে নেওয়া শটে গোল খেয়ে বসল। আর ওখানেই ম্যাচটা থেকে মনঃসংযোগ বোধহয় হারিয়ে গিয়েছিল। আর ২৩ মিনিটে লিস্টন যখন তৃতীয় গোলটি করছে রক্ষণ থেকে বাড়ানো বল ধরে, তখন অরিন্দম এগিয়ে গিয়ে ঝাঁপিয়ে বলটা ধরার সময়ে সম্ভবত হোঁচট খেয়েছিল। এ ক্ষেত্রে দোষটা গোলকিপারের। কিন্তু গোলরক্ষক যখন গোল ছেড়েছে তখন সেই গোল কভার নেবে তো ম্যানুয়েলের দলের কোনও ডিফেন্ডার। সেটাও হয়নি। দেখেশুনে গোল করে যায় লিস্টন। গোল আরও বাড়ত। কৃষ্ণদের সুযোগ নষ্ট ও শুভমের গোলরক্ষা বড় লজ্জার হাত থেকে বাঁচিয়ে দিয়ে গেল এসসি ইস্টবেঙ্গলকে।
এটিকে-মোহনবাগান কোচ ৪-৩-৩ ছকে শুরু করে প্রথম ১০ মিনিট দেখলেন, বিপক্ষ কোচ কী রণনীতি নিয়েছেন। তার পরেই চকিতে ৩-৫-২ চলে গেলেন আক্রমণে। সামনে রয় কৃষ্ণ। তার সঙ্গে কখনও হুগো বুমোস। পিছনে জনি কাউকো। হুগো ও জনি মাঝেমধ্যেই জায়গা পরিবর্তন করে বিভ্রান্ত করছিল ফ্রানিয়ো পর্চেদের। সঙ্গে দুই প্রান্ত দিয়ে পালা করে উঠছিল প্রীতম-মনবীর, শুভাশিস-লিস্টন। এর থেকেই প্রথম গোল। মনবীরের থেকে বল পেয়ে প্রীতম ডানদিক থেকে যে বলটা কৃষ্ণের জন্য রেখেছিল, তা থেকে ফ্লিকে গোলটা অনবদ্য। কিন্তু সেই বল তাড়া করা বা বিপন্মুক্ত করার প্রয়াস দেখিনি লাল-হলুদ রক্ষণে। দ্বিতীয় গোলের সময়ে মনবীরকে ধরতেই পারল না বিকাশ জাইরু। আর শেষ গোলের সময় পরিস্থিতি কী হয়েছিল, তা আগেই বলেছি।
ভাবতে অবাক লাগে, এই বিদেশি কোচেরা এত ভুল করেন কী ভাবে? সবুজ-মেরুন জিতলে ভাল লাগে। কিন্তু বড় ম্যাচে ইস্টবেঙ্গলের এই হাল দেখে সমর্থকদের জন্য খারাপও লাগে। ওই ক্লাবে কোচিং করানোয় জানি ওঁদের আবেগ। তাই দ্বিতীয় দফার দলবদলের আগে গতবারের মতোই ভাল ফুটবলার খুঁজতে হবে লাল-হলুদকে দল পরিচালন সমিতিকে। না হলে ভাল ফলও হওয়া সম্ভব নয়।