ব্যাট হাতে বিস্ফোরণের সময়।
‘ক্রিকেট ফর হিরোজ’। নায়কদের জন্য ক্রিকেট। আর তাতে নায়ক হয়ে উঠলেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। তাঁকে নিয়ে লন্ডনের ঐতিহাসিক ওভালে তুমুল হইচই। ওভাল দর্শকের এমন গর্জন নাকি শোনা যায়নি সাম্প্রতিক অতীতে!
উপলক্ষ, ব্রিটিশ আর্মির আহতদের সাহায্যার্থে আয়োজিত চ্যারিটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। যে ম্যাচে ওভালের কুড়ি হাজার দর্শককে মাতিয়ে রাখলেন ধোনি। ৩৮ রান করলেও ‘ফিনিশার’ ধোনির ইনিংস দর্শকদের ভরপুর আনন্দ দেওয়ার পক্ষে ছিল যথেষ্ট। তিন বল বাকি থাকতে দলকে জিতিয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরার সময় যেমন জয়ধ্বনি শুনতে পেলেন ভারতীয় ওয়ান ডে ও টি-টোয়েন্টি ক্যাপ্টেন, ব্যাট করতে নামার সময়ও তাঁর নামের গর্জন শোনা যায় ওভাল গ্যালারিতে।
ধোনি ও বীরেন্দ্র সহবাগ— এই দুই ভারতীয়কেই এ দিনের এই ম্যাচে খেলতে দেখা যায় হেল্প ফর হিরোজ একাদশের হয়ে। শাহিদ আফ্রিদি, হারশেল গিবস, অ্যন্ড্রু স্ট্রসরা ছিলেন তাঁদের সতীর্থ। উল্টো দিকে বিশ্ব একাদশে ব্রেন্ডন ম্যাকালামের নেতৃত্বে ম্যাথু হেডেন, মাহেলা জয়বর্ধনে, গ্রেম স্মিথ, স্কট স্টাইরিস, ড্যানিয়েল ভেত্তোরিদের মতো ক্রিকেট নক্ষত্ররা। প্রাক্তন ইংরেজ তারকা অ্যালান ল্যাম্বের বাছা দু’দলের ম্যানেজাররাও এক একজন কিংবদন্তি। সুনীল গাওস্কর, মাইকেল হোল্ডিং, ডেভিড গাওয়ার ও গ্যারি কার্স্টেন। যাঁর সংস্থার চ্যারিটির জন্য এই ম্যাচ, তিনিও কম যান না, ইয়ান বোথাম। সব মিলিয়ে চাঁদের হাট।
জয়ের জন্য ১৫৮-র লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামেন ধোনিরা। জয়সূচক রান আসে তাঁর ব্যাট থেকেই। ইনিংসের শুরুতে ঝড় তোলেন সহবাগও। স্ট্রসের সঙ্গে ওপেনিং জুটিতে ৬ ওভারে ৬৩ তুলে ফেলে। তার পরই কয়েকটা উইকেট পরপর পড়ে যায় এবং ধোনি ব্যাট করতে নামেন। ওভালের গ্যালারিতে রব ওঠে ‘ধোওওওওনি... ধোওওওওনি... ধোওওওওনি’। টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নিলেও তাঁর জনপ্রিয়তায় যে এতটুকু ঘাটতি পড়েনি, তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ তো এটাই। এক ইংরেজ ক্রিকেট সাংবাদিক টুইট করেন, ‘‘ওভাল দর্শকদের এ ভাবে একসঙ্গে চেঁচাতে শুনিনি কখনও।’’
ক্রিজে তখন গিবস। ধোনি নামার পরই তিনি আউট হয়ে যান। তখন দশ ওভারে ৮২ দরকার হিরোজ একাদশের। ধোনির ‘দে ঘুমাকে’ শট প্রদর্শন শুরু আর ওভালে ওঠা জয়ধ্বনিতে প্রায় সারা লন্ডনের কেঁপে ওঠার উপক্রম। শেষ ওভার পর্যন্ত ম্যাচটাকে টেনে নিয়ে গিয়ে শেষে একটা বাউন্ডারি দিয়ে জয়ে পৌঁছে দেন দলকে। ম্যাচের সেরার খেতাব ধোনিকেই দেওয়া হয়।
এই ম্যাচ থেকে প্রায় তিন লক্ষ পাউন্ড উঠেছে বলে সংগঠকদের দাবি। এক ক্রিকেটপ্রেমী এ দিন স্ট্রসের প্রতিটি বাউন্ডারির জন্য হাজার পাউন্ড করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। প্রাক্তন ইংল্যান্ড অধিনায়ক অসাধারণ একটি ক্যাচও নেন ব্রায়ান লারাকে ফেরাতে। ১৬-র বেশি তুলতে পারেননি ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তি। তবে ধোনির থেকে বেশি রান করেন মাহেলা জয়বর্ধনে, ৪৮। যাঁকে ম্যাচের আগে টিভি ক্যামেরার সামনে লারা, হেডেনদের ইন্টারভিউ নিতেও দেখা যায়। খেলা শেষে প্রাক্তন ইংরেজ স্পিনার গ্রেম সোয়ান বলেই দিলেন, ‘‘উদ্দেশ্য যেমন ভাল, মস্তিও তেমন ভরপুর। বছর দুই পর মাঠে নেমে সেই মাঠ, সেই দর্শক, সেই ড্রেসিংরুমের রোমাঞ্চ অনুভব করলাম।’’
মাহি মহিমা। ছবি ফেসবুক ও টুইটার।