দাপট: লন্ডনে সেমিফাইনালে ওঠার পথে রজার ফেডেরার।ছবি: এএফপি
তরুণ প্রজন্মের প্রতিভাবান এক মুখ তিনি। আপ্রাণ লড়েছিলেন। কিন্তু পারলেন না রজার ফেডেরারকে হারিয়ে চমক দিতে। মঙ্গলবার হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর ফেডেরার হারিয়ে দিলেন জার্মানির আলেকজান্ডার জেরেভ-কে। যাঁকে টেনিসের নতুন বিস্ময় বলা হচ্ছে।
এটিপি ফাইনালসের সেমিফাইনালে পৌঁছলেন ফেডেরার। কিন্তু বেশ কষ্ট করেই জিততে হয়েছে জেরেভের বিরুদ্ধে। ফল ফেডেরারের পক্ষে ৭-৬ (৮-৬), ৫-৭, ৬-১। ‘ও টু এরিনা’-তে যথারীতি ভর্তি গ্যালারি ছিল ফেডেরারকে দেখতে। সারাক্ষণ তাঁরা প্রিয় তারকার জন্য গলা ফাটিয়ে গেল, রজারকে উৎসাহ দিয়ে গেল। জেরেভ দ্বিতীয় সেট জিতে অঘটন ঘটানোর সম্ভাবনা তৈরি করলেও শেষ পর্যন্ত ভক্তদের হতাশ করেননি ফেডেরার। মাঝেমধ্যে যদিও তাঁকে সেরা ছন্দে দেখা যায়নি।
ম্যাচের শুরুতে প্রথম সেটে দু’জনেই এলোমেলো খেলছিলেন। তখন তাঁদের দেখে একেবারেই সাবলীল মনে হচ্ছিল না। প্রথম সেটে কেউ কারও সার্ভিস ভাঙতে পারেননি। তবে জেরেভ দু’টো সেট পয়েন্ট বাঁচিয়ে টাইব্রেকারে নিয়ে যান। কুড়ি বছর বয়সি তৃতীয় বাছাই জেরেভ টাইব্রেকারে ঝড় তুলে ৪-০ এগিয়ে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে প্রত্যাবর্তন ঘটিয়ে ফেডেরার ৫-৪ করে ফেলেন। জেরেভ এক বার সেট পয়েন্টে এসেও নষ্ট করেন। ফেডেরার তাঁর তৃতীয় সেট পয়েন্টে সফল হন।
উনিশ বারের গ্র্যান্ড স্ল্যাম চ্যাম্পিয়ন ফেডেরার এর পর দ্বিতীয় সেটে প্রথম গেমেই জেরেভের সার্ভিস ভাঙেন। দেখে মনে হচ্ছিল, দ্রুতই ম্যাচের নিষ্পত্তি করে ফেলবেন তিনি। কিন্তু জেরেভ চতুর্থ গেমে পাল্টা ফেডেরারের সার্ভিস ‘ব্রেক’ করে ম্যাচে ফিরে আসেন। দ্বিতীয় সেটে সার্ভিস নিয়ে সমস্যায় ভুগতে থাকেন ফেডেরার। মাত্র ৪৩ শতাংশ সার্ভিস ঠিক হচ্ছিল তাঁর। দ্বাদশ গেমে গিয়ে তার ফল ভুগতে হয়। তৃতীয় সেট পয়েন্ট জিতে সেট জিতে নেন জেরেভ। তৃতীয় সেটে গিয়ে সেরা ছন্দ খুঁজে পান ফেডেরার। উল্টো দিকে জেরেভের খেলাতেও ভুল হতে থাকে। তিন বার জেরেভের সার্ভিস ভেঙে সেট এবং ম্যাচ জেতেন রজার।
ফেডেরারের এই জয় গুরুত্বপূর্ণ কারণ, জেরেভকে এখন উঠতিদের মধ্যে অন্যতম সেরা ভাবা হচ্ছে। ফেডেরারের মতো তথাকথিত বয়স্কদের জায়গা ছিনিয়ে নিয়ে যাঁরা কি না নতুন তারকা হিসেবে উঠে আসতে পারে। কিন্তু ফেডেরার বুঝিয়ে দিলেন, এখনও তাঁকে হারানোর মতো যোগ্যতা বা মানসিকতা তৈরি হয়নি জেরেভদের। গ্র্যান্ড স্ল্যাম তো দূরের কথা, এটিপি ফাইনালসের সেমিফাইনালেও কোনও অঘটন উপহার দিতে নারাজ ফেডেরার। এখনও নিজের টেনিস নিয়ে এতটাই মরিয়া তিনি।
যদিও ফেডেরারের বিরুদ্ধে জেরেভের রেকর্ড মোটেও খারাপ নয়। এর আগে চার বার সাক্ষাৎ ঘটেছিল দু’জনের। প্রত্যেকেই দু’টো করে ম্যাচ জিতেছিলেন। ফেডেরারের বয়স ৩৬, জেরেভের ২০। ষোলো বছরের ছোটদেরও সহজে ছাড়ার পাত্র নন ফেডেরার। এ বছরেই ফেডেরার হ্যালে হারিয়েছিলেন জেরেভকে। কিন্তু তার পরে মন্ট্রিয়লে বদলা নেন জেরেভ। লন্ডনে আবার ফেডেরার জিতলেন।
বরিস বেকার গ্রুপে আমেরিকার জ্যাক সক উইম্বলডন ফাইনালিস্ট মারিন চিলিচকে হারিয়ে দেন। হোটেলে ফায়ার অ্যালার্ম বেজে ওঠায় ভোর চারটের সময় ঘর ছেড়ে নীচে নেমে আসতে হয়েছিল তাঁকে। সক সেই কথা মনে করিয়ে দিয়ে বলছেন, ‘‘আমি লন্ডনে খেলতে ভালবাসি। দারুণ পরিবেশ। মনে হয় নিজের ঘরের মাঠেই খেলছি।’’
এটিপি ফাইনালসে রাউন্ড রবিন পদ্ধতিতে খেলা হয়। চার জন করে খেলোয়াড়কে নিয়ে দু’টি গ্রুপ রয়েছে। সেই দু’টি গ্রুপ থেকে সেরা দু’জন খেলোয়াড় যাবেন সেমিফাইনালে। প্রথম ম্যাচে সক-কে হারানো ফেডেরারই এই টুর্নামেন্টে ফেভারিট কারণ নাদালও চোটের কারণে সরে দাঁড়িয়েছেন। নোভাক জকোভিচ, অ্যান্ডি মারে, স্ট্যান ওয়ারিঙ্কাও কোর্ট থেকে অনুপস্থিত। প্রত্যেকেই চোট নিয়ে জেরবার। ৩৬ বছরে ক্লান্তিহীন শুধু তিনি। ছুটে চলেছে রজার-রথ।