ঋষভকে দেখে মুগ্ধ ফারুক। ফাইল চিত্র
অভিষেক টেস্টে ঋষভ পন্থের সাহস দেখে উচ্ছ্বসিত ফারুক ইঞ্জিনিয়ার। ‘‘কত রান করেছে, সেটা আমি দেখছি না। খুব বেশি হয়তো করেনি, ঠিক আছে। কিন্তু আমার নজর টেনেছে ঋষভের মানসিকতা,’’ মোবাইল ফোনে বললেন ফারুক।
ভারতীয় উইকেটকিপারদের ইতিহাসে মহেন্দ্র সিংহ ধোনিদের পথিকৃৎ ফারুক ইঞ্জিনিয়ার। সেই যুগে প্রথম দেখিয়েছিলেন, শুধু কিপিং গ্লাভস নয়, ব্যাটিং গ্লাভস পরেও ম্যাচের নায়ক হতে পারেন উইকেটকিপার। সেই পরম্পরায় নতুন নাম দিল্লির ঋষভ পন্থ। যাঁর সম্পর্কে ফারুকের পর্যবেক্ষণ, ‘‘ছেলেটার মধ্যে ডাকাবুকো একটা মনোভাব রয়েছে। আইপিএলে ওর খেলা আমি দেখেছি। বেশ আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করতে পারে। ম্যাচউইনার। ওর আইপিএল ব্যাটিং দেখে আমি ভাবতাম, এই ছেলেটাকে কেন খেলাচ্ছে না ভারতীয় দল?’’ তার পরেই যোগ করছেন, ‘‘টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ম্যাচে নেমে যে দ্বিতীয় বলটাই ছক্কা হাঁকিয়ে দিতে পারে, তার মানসিকতা নিয়ে নিশ্চয়ই কোনও সন্দেহের অবকাশ নেই।’’
গত কাল যখন ব্যাট করতে নামেন ঋষভ, বল করছিলেন লেগস্পিনার আদিল রশিদ। তাঁর দ্বিতীয় বলটা ছিল গুগলি। কিন্তু সেই দ্বিতীয় বলই ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এসে সোজা গ্যালারিতে উড়িয়ে দেন ঋষভ। এ দিন আবার পাঁচটি শিকারও নিলেন তিনি। যা তাঁর উইকেটকিপিং দক্ষতা নিয়ে তৈরি হওয়া সংশয়কে কিছুটা দূর করবে। ‘‘লেগসাইডে প্রায় উড়ে গিয়েও তো দারুণ একটা ক্যাচ নিল দেখলাম (ক্রিস ওকসের ক্যাচ)। আমার মনে হয়, ভারত দারুণ এক প্রতিভা পেল,’’ বলে ফারুক যোগ করছেন, ‘‘তবে আমার একটাই পরামর্শ দেওয়ার আছে ওকে। একটু আগে উঠে পড়ছে। কিপার হিসেবে ওকে আরও নীচু হয়ে থাকতে হবে।’’
অভিষেকেই এক ইনিংসে পাঁচ ক্যাচ নিয়ে নজির ঋষভ পন্থেরও। এশিয়ার প্রথম উইকেটকিপার হিসেবে এই কৃতিত্ব অর্জন করলেন তিনি। রবিবার ট্রেন্ট ব্রিজে। ছবি: গেটি ইমেজেস।
ঋষভের সঙ্গে কখনও দেখা হলে তিনি এই পরামর্শই তাঁকে দিতে চান বলেও জানালেন ফারুক। সকালে কী ভাবে আউট হয়েছেন ঋষভ, দেখতে পারেননি। শুনে বললেন, ‘‘কিছুটা ভাগ্য খারাপই হবে তা হলে। আমি আশা করছিলাম, ও আরও বড় রান করবে। কাল শুরুটা তো খুবই ভাল করেছিল।’’ তাঁর প্রার্থনা, ‘‘এখনই ওই একটা আউট নিয়ে বেশি কাটাছেঁড়া করতে গিয়ে যেন ছেলেটার উপরে চাপ বাড়িয়ে না দেওয়া হয়। সকলের মনে রাখা দরকার কুড়ি বছরের একটা ছেলের টেস্ট অভিষেক হল। থিতু হওয়ার জন্য ওকে সময় দিতে হবে। রোম তো আর এক দিনে তৈরি হয় না। তা ছাড়া আমি বলব, অভিষেক টেস্ট হিসেবে দারুণ পারফরম্যান্স করেছে।’’ ভারতীয় ক্রিকেটে ধোনির উত্তরসূরি হিসেবে যাঁকে ভাবা হচ্ছে, সেই ঋষভকে অনেকে ফারুক ইঞ্জিনিয়ারের ঘরানার বলে মনে করেন। ফারুকের মতোই শক্তপোক্ত চেহারা। তাঁর মতো আগ্রাসী ব্যাটিং করতে পারেন। যা শুনে ফারুক নিজেও খুব ভিন্ন মত হতে পারছেন না। হাসতে হাসতে বলে ফেললেন, ‘‘ছেলেটাকে দেখে কিছুটা নিজের কথা মনে পড়ে যায় ঠিকই।’’
আর হার্দিক পাণ্ড্য? পাঁচ উইকেট নিয়ে এ দিনের নায়ক সম্পর্কে কী বলবেন? ‘‘আমার হার্দিককেও বেশ ভাল লাগে। ওর স্টাইল করা নিয়ে অনেক কথা-টথা হয়। কিন্তু সে সব দেখে কী হবে? এই প্রজন্মের ছেলে, কিছুটা ও সব তো করবেই। আমি মনে করি, হার্দিকের মধ্যে ভাল অলরাউন্ডার হয়ে ওঠার গুণ রয়েছে। বল হাতে পাঁচ উইকেট নিয়ে সেটা তো ও প্রমাণই করে দিল।’’
ঋষভের উত্থানে নতুন করে দাবি উঠতে বাধ্য যে, এ বার তাঁকে ওয়ান ডে বা টি-টোয়েন্টিতে নিয়ে আসা উচিত কি না। অনেকেই মনে করেন, সীমিত ওভারের ক্রিকেটে তাঁর আগ্রাসী ব্যাটিং আরও কাজে লাগতে পারে। ফারুক ইঞ্জিনিয়ার বলছেন, ‘‘অবশ্যই ঋষভের প্রতি যত্ন নিতে হবে। এমন রত্ন যেন হারিয়ে না যায়। তার জন্য ওকে খেলাতে হবে, সুযোগ দিতে হবে, উৎসাহ দিতে হবে।’’ তার মানে কি ধোনিকে বলার সময় হয়েছে যে, এ বার অবসরের চিন্তাভাবনা শুরু করো? না হলে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ঋষভের জায়গা কী করে হবে? ইঞ্জিনিয়ার বললেন, ‘‘ধোনি ভারতীয় ক্রিকেটকে অনেক কিছু দিয়েছে। ওকে সরানো হবে কি না, সেটা খুব ভাল করে ভেবে দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। চট করে তো আর এত বড় এক জন ক্রিকেটারকে বসিয়ে দেওয়া যায় না। তবে ঋষভকেও কিন্তু খেলানো দরকার। ওকে উৎসাহ দিয়ে যেতে হবে কারণ ঋষভই ভবিষ্যৎ।’’
সামনের বছর জুনে ইংল্যান্ডেই বিশ্বকাপ। টিম ম্যানেজমেন্ট ধোনিকে ধরেই দলের নকশা করছে। দ্বিতীয় উইকেটকিপার হিসেবে রাখা হচ্ছে দীনেশ কার্তিককে। ট্রেন্ট ব্রিজে তাঁর ছোট কিন্তু আত্মবিশ্বাসী ইনিংসের পরে ঋষভকে দলে নেওয়ার দাবি জোরাল হবে। ইঞ্জিনিয়ার যেমন বলে ফেললেন, ‘‘নতুন এক প্রতিভা পেয়েছি। তাকে ফুল হয়ে ফুটতে দিতে হবে।’’ ো