নজরে: এই যন্ত্রের সাহায্যেই করা হচ্ছে তুষারপাত। রয়টার্স
বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রকোপে গত কয়েক বছর ধরে বাড়ছে জাপানের রাজধানী টোকিয়োর গ্রীষ্মকালীন তাপমাত্রা। বর্তমানে জুলাই মাসে টোকিয়োর গড় তাপমাত্রা থাকছে ৯৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সঙ্গে প্রবল আর্দ্রতারও সমস্যা। যা কখনও কখনও ৮০ শতাংশেরও উপরে চলে যায়। ফলে হিটস্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাচ্ছে টোকিয়োতে।
টোকিয়োয় আগামী বছরে জুলাই-অগস্টে গরমের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হবে অলিম্পিক্স। সেই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করার জন্য অভিনব পদ্ধতি আনছেন আয়োজকরা। গ্যালারিতে নকল তুষারপাত। যা পরীক্ষামূলক ভাবে প্রয়োগ করা হল শুক্রবার ক্যানোয়িং-এর ইভেন্ট চলাকালীন। ৩০০ কেজির এই নকল তুষার দর্শকাসনের উপর থেকে নল দিয়ে স্প্রে করা হয়। গুড়ো বরফ ও জল দিয়ে তৈরি এই কৃত্রিম তুষার। যা ছড়িয়ে দেওয়া হয় দর্শকাসনের ১৫ মিটার জায়গা জুড়ে। পাঁচ মিনিট ধরে চলে এই প্রক্রিয়া। আয়োজকদের দাবি, এ ভাবে কৃত্রিম তুষারপাতের ফলে স্টেডিয়াম সংলগ্ন এলাকার তাপমাত্রা কমবে না। কিন্তু দর্শকদের স্বস্তি মিলবে গরমের হাত থেকে। টোকিয়ো ২০২০ অলিম্পিক্সে আয়োজক কমিটির সিনিয়র ডিরেক্টর তাকা ওকামুরা বলেছেন, ‘‘অলিম্পিক্সের সময় গরমের প্রকোপ কমাতে নানা পদক্ষেপ করা হচ্ছে। এটা তার মধ্যে একটি। এর ফলে পরিবেশের মাপমাত্রা কখনও কমানো যাবে না। কিন্তু কৃত্রিম তুষারপাত হলে দর্শকেরা কিছুটা স্বস্তি তো পাবেনই।’’ তিনি যোগ করছেনন, ‘‘হঠাৎ তুষারপাতের মতো অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হলে দর্শকদের মধ্যে কিছুটা মজা যেমন আসবে, তেমনই ক্লান্তি সরিয়ে চনমনেও হয়ে যাবেন তাঁরা।’’
জানা গিয়েছে, ক্যানোয়িং ইভেন্টে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করার আগে সম্প্রতি খোলা আকাশের নীচে অনুষ্ঠিত টোকিয়োর একটি জলসায় এই কৃত্রিম তুষারপাত ঘটিয়ে ফল পেয়েছিলেন আয়োজকরা। তার পরেই অলিম্পিক্স আয়োজক কমিটির চোখ পড়ে এই যন্ত্রে। শুক্রবার ক্যানোয়িং ইভেন্ট চলাকালীন দেখা যায়, দর্শকাসনের পাশে একটি ট্রাক দাঁড়ানো। তার মধ্যেই ছিল ‘স্নো মেশিন’। যন্ত্রের সামনে নল। পিছনের দিকটায় একটি অংশে বরফ গুড়ো করে ঢোকানো হচ্ছে। ৩০০ কেজি বরফ গুড়ো করে জলের সঙ্গে মিশিয়ে সংশ্লিষ্ট যন্ত্রে প্রয়োগের জন্য নিযুক্ত ছিলেন ১৫০ জন স্বেচ্ছাসেবক। তবে কৃত্রিম এই তুষারপাত ঘটানোর যন্ত্র বিভিন্ন স্টেডিয়ামে বসাতে কত খরচ হবে, সে ব্যাপারে কিছু বলতে রাজি হননি ওকামুরা। তবে জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে নানা পরীক্ষামূলক পদক্ষেপ করা হচ্ছে।
ক্যানোয়িং ইভেন্টে সি ফরেস্ট ওয়াটারওয়ে এলাকায় ছিল দর্শকাসন। কৃত্রিম এই তুষারপাতের আগে সেখানকার তাপমাত্রা ছিল ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তুষারপাত হয়ে যাওয়ার পরে দর্শকেরা স্বস্তিতেই ইভেন্ট উপভোগ করেছেন। অলিম্পিক্স আয়োজকদের তরফে আর এক কর্তা তোমোআকি মাতসুমোতো বলেন, ‘‘প্রথম বার এই কৃত্রিম তুষারপাতের পদ্ধতি প্রয়োগ করা হল খেলার মাঠে। তবে এখনই এ ব্যাপারে আগাম কিছু মন্তব্য করার সময় আসেনি। ভবিষ্যতে এই যন্ত্র ব্যবহার করতেই পারি আমরা।’’ যদিও প্রশ্ন উঠছে, দর্শকদের গায়ে তুষার পড়লে তাঁদের অস্বস্তি হতে পারে কি না? এবং, মাঠের মধ্যে খেলোয়াড়দের গরম থেকে রক্ষা করার কী প্রক্রিয়া থাকবে?
চার বছর আগে রিয়ো অলিম্পিক্সে গরমের জন্য ম্যারাথন চলাকালীন অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। এ বার ম্যারাথন ইভেন্ট শুরু হবে সকাল ছ’টায়। এ ছাড়াও ২৬ মাইল দীর্ঘ পথ রাঙিয়ে দেওয়া হবে রজন দিয়ে। যার ফলে অতিবেগুনি রশ্মি প্রতিফলিত হবে। এতে ওই পথে মাটি থেকে উঠে আসা তাপ কমবে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।