নায়ক: কলকাতা বিমানবন্দরে মেয়েকে নিয়ে ঋদ্ধিমান। ছবি সুদীপ্ত ভৌমিক।
প্রশ্ন: নয় নয় করে পঁচিশটা টেস্ট খেলে ফেললেন। এটাই কি জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিরিজ?
ঋদ্ধি: এটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ সিরিজ। অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের অন্যতম সেরা টেস্ট দল। যেখানেই যায় ভাল খেলে। এখানেও দারুণ খেলেছে। বেশ হাড্ডাহাড্ডি সিরিজ হয়েছে।
প্র: পুরো সিরিজে স্লেজিংয়ের ফোয়ারা চলল। আপনারা পাল্টা জবাব দিয়েছেন ওদের। এত আগ্রাসন, এত অশান্তি কখনও দেখেছেন? অভিজ্ঞতাটা কেমন?
ঋদ্ধি: আমি কিন্তু এই স্লেজিং ব্যাপারটা উপভোগ করেছি। আমার কাছে যদিও এটা নতুন কিছু নয়। অস্ট্রেলিয়ায় যখন খেলেছি, তখন পেয়েছি। ইংল্যান্ড সিরিজেও হয়েছে। আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটেও এ রকম হয়। কিন্তু সেটা অন্য রকম। এত তীব্র নয়।
প্র: ঘরোয়া ক্রিকেটে স্লেজিং যদি দশ হয়, তা হলে এই সিরিজে স্লেজিংকে কত দেবেন, ৮০-৯০?
ঋদ্ধি: এ ভাবে আলাদা করে রেটিং করব কী করে? দুই লেভেলে স্লেজিংয়ে মানসিকতা একদম অন্য রকম হয়। এ ভাবে নম্বর দিতে পারব না। তবে হ্যাঁ, এখানে তীব্রতা অনেক অনেক বেশি ছিল।
প্র: সিরিজে আপনার সতীর্থদের সঙ্গে স্মিথদের বাগ্যুদ্ধ হয়েছে বারবার। আপনাকে শুধু একবারই রাঁচীতে জস হেজ্লউডকে ধমক দিতে দেখা যায়। আপনার মতো শান্তশিষ্ট ছেলেও খেপে গেলেন কেন?
ঋদ্ধি: আমি আর এমন কী বলেছি? ওকে বলি যে, ‘যাও গিয়ে বোলিং করো’। এটা তো আর স্লেজিং নয়। ওর যেটা কাজ, ওকে সেটাই করতে বলেছি। আসলে হেজ্লউড বোলিং করার সময় সমানে কিছু না কিছু বলে যাচ্ছিল। বোধহয় আমাদের মনঃসংযোগ নষ্ট করার চেষ্টা করছিল। একটা সময় থাকতে না পেরে আমি বিরক্ত হয়ে ওকে এই কথা বলে দিই
প্র: রবীন্দ্র জাডেজাও বলেছেন, ধর্মশালায় ম্যাথু ওয়েড নাকি ওঁকে সমানে গালাগালি করে যাচ্ছিলেন?
ঋদ্ধি: বলতে পারব না, উল্টো দিক থেকে আমি কিছু শুনতে পাইনি। আমাকে কিন্তু ওয়েড কিছু বলেনি।
প্র: বিরাট কোহালি বলেছেন, অস্ট্রেলিয়ানদের সঙ্গে আর বন্ধুত্ব নয়। আপনিও কি একই কথা বলবেন?
ঋদ্ধি: এটা ওর ব্যক্তিগত ব্যাপার। আসলে বিরাট খুব রেগে গিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার কেউ বোধহয় বলেছে, আইপিএল খেলার জন্য ও শেষ টেস্টে খেলেনি। এটা ও মেনে নিতে পারেনি হয়তো। আমি বিরাটকে কখনও চোট লুকিয়ে খেলতে দেখিনি। আইপিএলের জন্য টেস্ট খেলবে না, হতেই পারে না। সে জন্যই ও খুব রেগে গিয়ে এই কথা বলেছে বোধহয়।
অজি স্লেজিং সামলে এ বার লক্ষ্য ঋদ্ধির আইপিএল।
প্র: এ বার তো আইপিএলে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের নেতৃত্বে খেলতে হবে আপনাকে। সদ্য ঘটনাগুলো সহজে ভুলে যাবেন কী করে?
ঋদ্ধি: এটা তো টিম ম্যানেজমেন্ট ঠিক করে দেবে। আমি আমার নিজের কাজটা করব। আমার জন্য যে ভূমিকা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হবে, তেমনই ভূমিকা পালন করব। তবে যা হয়ে গিয়েছে, হয়ে গিয়েছে। অতীতের দিকে আর ফিরে তাকিয়ে কী লাভ হবে? এ বার সামনের দিকে তাকাতে হবে সবাইকে।
প্র: এ রকম একটা সিরিজে একটা গুরুত্বপূর্ণ সেঞ্চুরি করেছেন, দুটো গুরুত্বপূর্ণ পার্টনারশিপে আপনার অবদান ছিল। এই পারফরম্যান্স নিয়ে কী বলবেন?
ঋদ্ধি: বিপদের সময় দলের জন্য করতে পারাটাই আমার কাছে বড় ব্যাপার। সে রবীন্দ্র জাডেজার সঙ্গে পার্টনারশিপ হোক বা চেতেশ্বর পূজারার সঙ্গে। দলের জয়টাই আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাই দুটো পার্টনারশিপই আমার কাছে সমান।
প্র: আর সেঞ্চুরিটাও করলেন কি না, এমএস ধোনির পাড়ায় গিয়ে?
ঋদ্ধি: সেঞ্চুরিটা তো করেছি খেলার মাঠে, বাইশ গজে। সে ধোনির পাড়ায়, না কার পাড়ায়, সেটা বড় কথা নয়।
প্র: আপনি নিজেই বলেছিলেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজে সেঞ্চুরিটার পর থেকেই আপনার কেরিয়ারের মোড় ঘুরে গিয়েছিল। রাঁচীর আর ওই সেঞ্চুরি দুটো পাশাপাশি রাখলে কোনটাকে এগিয়ে রাখবেন?
ঋদ্ধি: ওয়েস্ট ইন্ডিজেও দুঃসময় থেকে দলকে টেনে তুলেছিলাম আমি আর অশ্বিন। ওখানে ১২০-৫ হয়ে যাওয়ার পর শুরু করি আমরা। উইকেটেও ভাল বাউন্স ছিল ওখানে। সব সেঞ্চুরিই স্পেশ্যাল। তবে আমার কাছে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সেঞ্চুরিটাই সেরা।
আরও পড়ুন: বিরাট বিতর্ক থামছেই না
ঋদ্ধি: মনমরা তো ছিলই। তবে দল জেতায় আবার মেজাজে ফিরে আসে। ও দলকে সমানে সাপোর্ট করেছে। বাইরে থেকে ইনপুট দিয়েছে। যে দিন চোট লেগেছিল, সে দিনই বলেছিল পরের দিন হয়তো খেলতে পারবে না।
প্র: এ বার নিশ্চয়ই আইপিএল নিয়ে ভাবনা শুরু করবেন?
ঋদ্ধি: হ্যাঁ, এ বার আইপিএল নিয়ে ভাবনা শুরু হবে ঠিকই। তবে তার আগে কয়েকটা দিন ক্রিকেট থেকে দূরে থাকতে চাই। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে চাই।