অ্যাডিলেডেই বুঝে যাই টেস্ট ক্যাপ্টেন হওয়ার ক্ষমতা রাখি

ক্রিকেটার থেকে টেস্ট ক্যাপ্টেন হয়ে ওঠা, ধোনির কাছে ক্যাপ্টেন্সি শিক্ষা, অধিনায়কত্বের রাস্তায় ফুল ও কাঁটা আর ক্রিকেট জীবনের দর্শন নিয়ে বিরাট কোহালি বিসিসিআই ওয়েবসাইটকে দিলেন এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকার। তারই কিছু অংশ তুলে ধরা হল। ক্রিকেটার থেকে টেস্ট ক্যাপ্টেন হয়ে ওঠা, ধোনির কাছে ক্যাপ্টেন্সি শিক্ষা, অধিনায়কত্বের রাস্তায় ফুল ও কাঁটা আর ক্রিকেট জীবনের দর্শন নিয়ে বিরাট কোহালি বিসিসিআই ওয়েবসাইটকে দিলেন এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকার। তারই কিছু অংশ তুলে ধরা হল।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৬ ০৫:০৯
Share:

প্রশ্ন: ক্রিকেট শুরু করার সময় কখনও ভেবেছিলেন ২৭ বছর বয়সে ভারতীয় টেস্ট দলের ক্যাপ্টেন হবেন, যে দলটা বিশ্বের এক নম্বর?

Advertisement

কোহালি: সত্যিই ভাবিনি। দেশের টেস্ট টিমের ক্যাপ্টেন হওয়াটা তো বিরাট সম্মানের। টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া, তার পর সেই দলকে নেতৃত্ব দেওয়া, এর চেয়ে বড় পাওয়া আমার কাছে আর কিছু নেই। দেশের জন্য সাদা পোশাকে মাঠে নামছি, এটা ভাবলেই রোমাঞ্চ অনুভব করি। টেস্ট ক্রিকেট যে ভাবে একজন ক্রিকেটারের পরীক্ষা নেয়, তা আর কোনও ফর্ম্যাট নেয় না। এই ফর্ম্যাটে টিকে থাকতে হলে, অনেক দিন ধরে খেলতে গেলে যে ডিসিপ্লিন জীবনে আনতে হয়, সেটাও সহজ নয়। টেস্ট শুরুর তিন দিন আগে নিজের ঘরে মানসিক প্রস্তুতি থেকে শুরু করে টেস্টের শেষ পর্যন্ত সব কিছু ঠিকঠাক রাখাটা বেশ কঠিন। টেস্ট টিম হিসেবে দলকে ধারাবাহিক ভাবে সঠিক রাস্তায় চালিত করার দায়িত্বটাও তেমনই। এটা আমার কাছে গর্বের। আর এই দায়িত্বটা উপভোগও করি। চলার পথে ওঠা-নামা, সমালোচনা, নিন্দা এগুলো আমি খারাপ ভাবে নিই না। এগুলো বরং কঠিন চরিত্র তৈরি করতে কাজে লাগে।

প্র: নিজের বিশ্বাস ও লক্ষ্যগুলো টিমমেটদের মধ্যে ছড়িয়ে দেন কী ভাবে?

Advertisement

কোহালি: শুধু আমি নই। এ ক্ষেত্রে আমার ভূমিকাটা কম। আসলে টিম ম্যানেজমেন্টই এই কাজটা করে থাকে। রবি শাস্ত্রী ও এখনকার সাপোর্ট স্টাফের আগে ডানকান ফ্লেচার, জো ডস, ট্রেভর পেনিরা আমাকে সাহায্য করতেন। ওঁদের পর রবি ভাই, শ্রীধর, বাঙ্গাররা বিশ্বাসটা টিমের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজটা করতে শুরু করলেন। ক্যাপ্টেন আর কতটুকু করতে পারে? একা তো আর সে দল চালায় না। এই দলের তরুণ ক্রিকেটারদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস জোগানোর কাজটা ওরা অসাধারণ করেছে। ওদের ক্রিকেটার হয়ে উঠতে সাহায্য করেছে। এখন আমরা বিশ্বাস করি, আমরা নিজেদের সেরাটা দিতে পারলে জয় আসবেই। কিন্তু কখনওই নিজেদের সীমার বাইরে গিয়ে নয়। উঠে দাঁড়িয়ে লড়াই করার সাহস আছে আমাদের। আর হারলে কোনও অজুহাত ছাড়াই সেই হার মেনে নেব। আমাদের দলে এমন একটা বন্ধুত্বপূর্ণ আবহাওয়া আছে যে কখনও কোনও সমস্যার সমাধান করতে অসুবিধা হয় না। কারণ, কেউ কখনও কোনও কথা বলতে দ্বিধা বোধ করে না।

প্র: ধোনির কাছ থেকে টেস্ট ক্যাপ্টেনের ব্যাটন নিয়েছেন প্রায় দু’বছর হতে চলল। এই সময়ে কী শিখলেন? আর ক্রিকেটার থেকে ক্যাপ্টেনে পরিণত হওয়াটাই বা কী রকম?

কোহালি: এমএস ধোনির ক্যাপ্টেনসিতে খেলার সময় নিজের ব্যাটিং প্রস্তুতি নিয়ে পড়ে থাকতাম। তখন অত দায়িত্বও ছিল না। সবার সঙ্গে প্ল্যান নিয়ে কথা হত ঠিকই, কিন্তু সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায় ছিল না। সিদ্ধান্ত নেওয়াটা সত্যিই কঠিন কাজ। এর জন্য প্রচুর সাহস লাগে। ধোনির সিদ্ধান্ত নেওয়া দেখে আমি অনেক কিছু শিখেছি। সেগুলো ঠিক-ভুল যাই হোক না কেন, নিজেকে কনভিন্স করে সিদ্ধান্তটা নিয়ে এগিয়ে যাওয়াটাই হল ক্যাপ্টেনসি। ক্যাপ্টেন হওয়ার পর সেই বাড়তি দায়িত্বটা যখন আমার কাঁধে এসে চাপল, তখন আমার পারফরম্যান্সের উপরও তার প্রভাব পড়ল। আরও ভাল খেলতে শুরু করলাম। ক্যাপ্টেনকে শুধু নিজের নয়, অন্যের চাপও নিতে হয়। আমার কাছে এটা একটা সম্মানজনক কাজ। স্পেশ্যাল ব্যাপার।

প্র: ক্যাপ্টেন হিসেবে দলের সঙ্গে প্রথম কথা বলার দিনটার কথা মনে পড়ে?

কোহালি: অবশ্যই। ২০১৪-য় অ্যাডিলেডে। পজিটিভ, আগ্রাসী ক্রিকেট খেলার কথা বলেছিলাম। চতুর্থ দিন অস্ট্রেলিয়া তখনও ব্যাট করছে। ড্রেসিংরুমে সবাইকে বলি, ওরা আমাদের যত টার্গেটই দিক না কেন, আমরা কিন্তু মরিয়া চেষ্টা করব। ছেলেদের জিজ্ঞেস করলাম, ‘সবাই রাজি তো?’ সবাই বলল, রাজি। শেষ পর্যন্ত হেরে গেলেও টেস্টের বাকি সময় প্রত্যেকের মধ্যে যে পজিটিভ মানসিকতা দেখেছিলাম, তাতেই বুঝতে পেরেছিলাম, ক্যাপ্টেনসিটা আমি পারব।

প্র: হারটাকে আপনার দল কেমন ভাবে নেয়? হার থেকে ভাল কী শেখা যায়?

কোহালি: বাস্তবের কোথায় দাঁড়িয়ে আছি, হার থেকে এটা খুব ভাল বোঝা যায়। এই জায়গাটা থেকে উঠে আসার জন্য কী কী করতে হবে, হার থেকে সেটা বুঝে নেওয়া যায়। হার থেকে কেউ দূরে পালাতে চাইলে ব্যর্থতাটা বারবার ঘুরে ঘুরে আসবে। কিন্তু ড্রেসিংরুমে হার নিয়ে আলোচনা করলে নিজেকে আবার জয়ে ফিরিয়ে আনা যায়। গল-এ হারের পর আমরা আলোচনায় বসি। ঘণ্টা দু’য়েকের আলোচনা। সবাই মন-প্রাণ খুলে বলি, এখন কী করা দরকার। একে অপরকে মোটিভেট করার জন্য কী করতে হবে আমাদের। আমাদের দলে সবার কথার সমান গুরুত্ব আছে। কারণ, আমরা সবাই জানি নিজেদের দায়িত্বের প্রতি কতটা সৎ ও স্বচ্ছ্ব আমরা। হার জীবনের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা দিক। যা নিজেকে উন্নত করে তোলার পাঠটা পড়ায়।

প্র: আপনি বলেছিলেন, মাত্র কুড়িটা উইকেট পেলেই একটা টেস্ট জেতা যায়। তা আপনার দলের বোলিং অ্যাটাক নিয়ে আপনি খুশি?

কোহালি: শ্রীলঙ্কা সফর থেকেই আমাদের ফাস্ট বোলিং অসাধারণ। আমাদের ওরা জিতিয়েছেও। স্পিনাররা সব সময়ই ভাল করে। কিন্তু পেসাররা ভাল কন্ডিশন না পেয়েও ভাল পারফরম্যান্স দেখালে আমি বেশি খুশি হই। পরিশ্রমের ইচ্ছে আর কয়েক ঘণ্টা বেশি প্র্যাকটিসের প্রবণতাই ওদের চরিত্র তৈরি করে দেয়। ওদের মধ্যে যে আগুন আছে, সেটা ওরা বুঝতে শুরু করে দিয়েছে। এই ব্যাপারটাই ওদের মেরুদণ্ডকে আরও কঠিন করে তুলেছে। ওরা নিজেরাই নিজেদের ফিল্ড সাজিয়ে নিচ্ছে। কারণ, ওরা জানে কোথায় ওরা ব্যাটসম্যানকে আউট করতে চায়। আমার বিশ্বাস কয়েক বছরের মধ্যে এরাই ভারতীয় বোলিংয়ের কিংবদন্তি হয়ে উঠবে।

প্র: ক্যাপ্টেন বিরাট কোহালি সবার মনে কী ভাবে বেঁচে থাকবে? কী চান আপনি?

কোহালি: নিজের কাজে আমি সেরা হতে চাই। দুঃসময়ে সবার আগে আমি দলের পাশে দাঁড়াব। দলের উপর কোনও অনর্থক আক্রমণ, সমালোচনা এলে তার বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে দাঁড়াব। ক্যাপ্টেন হিসেবে এটাই আমার দায়িত্ব। আশা করি এই জার্নিটা সফল হবে। দলের দক্ষতা ও ইচ্ছাশক্তির উপর আমার যথেষ্ট আস্থা আছে। দলের প্রত্যেকের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement