সচিনের সঙ্গে।
ভারত থেকে প্রথম বাস্কেটবলার যিনি এনবিএ-তে খেলছেন। এখন পর্যন্ত এনবিএ সামার লিগে ডালাস ম্যাভারিক্সের হয়ে গোটা পাঁচেক ম্যাচে কোর্টে নেমেছেন। বিশ্বের সব থেকে কঠিন লিগে খেলার অভিজ্ঞতা কেমন? কেমন করেই বা তিনি নিজেকে এই জায়গায় তুলে আনলেন? ৭ ফুট ২ ইঞ্চির দৈত্য সতনম সিংহ ভামরা ডালাস থেকে ই-মেল মারফত সাক্ষাৎকার দিলেন আনন্দবাজারকে।
প্রশ্ন: যুক্তরাষ্ট্রের এনবিএ-তে খেলা যে-কোনও বাস্কেটবলারের স্বপ্ন। ডালাস ম্যাভারিক্সে খেলার অভিজ্ঞতাটা কী রকম লাগছে?
সতনম: খুবই ভাল। প্রথম বার এনবিএতে খেলছি। অথচ আমার কলেজ বাস্কেটবল খেলার অভিজ্ঞতাও নেই। এত বড় বড় সব বাস্কেটবল প্লেয়ারের সঙ্গে কোনও দিন খেলব কল্পনাও করতে পারিনি। বিশেষ করে ডার্ক নোয়িটজকির সঙ্গে ট্রেনিং করতে পেরে খুবই গর্বিত। ও একজন কিংবদন্তি। ও নিজেও বিদেশি, তাই যুক্তরাষ্ট্রে বাস্কেটবলার হওয়ার চ্যালেঞ্জ কী, জানে।
প্র: পঞ্জাব মানেই হকি, ক্রিকেট, ফুটবল। যা আমাদের দেশের প্রচলিত খেলা। সেখানে বাস্কেটবলার হওয়ার ইচ্ছা হল কী করে?
সতনম: দশ বছর আগে টিভি চালিয়ে দেখেছিলাম একটা এনবিএ ম্যাচ হচ্ছে। খুব সম্ভবত এলএ লেকার্স বনাম মায়ামি হিটের ম্যাচ চলছিল। কোবি ব্রায়ান্টের খেলা দেখে দারুণ লেগেছিল। ন’বছর বয়সেই আমার উচ্চতা ছিল ৫ ফুট ৯ ইঞ্চি। এ রকম চেহারা ধরে রাখতে অনেক টাকা খরচ করেছেন বাবা। তা ছাড়াও আমার বাবা বাড়ির সামনে বাস্কেটবলের নেটও লাগিয়ে দিয়েছিলেন। ওখানেই আমার হাতেখড়ি। এ রকম একটা চেহারা পাওয়ায় এখন খুব ভাগ্যবান মনে হচ্ছে নিজেকে। তাই বাস্কেটবল দেখে মনে হয়েছিল আমার চেহারাটা এই খেলায় নাম করার জন্যই আদর্শ।
প্র: বাস্কেটবল বললেই সবাই ‘এনবিএ, এনবিএ’ করে। অন্য কোনও বাস্কেটবল লিগ বা টুর্নামেন্টের সঙ্গে এনবিএ-র পার্থক্য কী ?
সতনম: এখানে অনেক বেশি দ্রুত গতির খেলা হয়। সবাই খুব ফিজিকাল খেলা খেলে। বল নিয়ে দারুণ ব্যালান্স সবার।
প্র: আপনারও কি সেই শক্তি আর ব্যালান্স আছে?
সতনম: হ্যা, আমার শক্তি আছে। ব্যালান্সটার উপরে কাজ করছি। আমার ব্যালান্সটা একটু দুর্বল কারণ আমার হাঁটুতে অস্ত্রোপচার হয়েছে। তার সঙ্গে গোড়ালিতেও সামান্য চোট ছিল। আমার কোচেরা একটাই পরামর্শ দিচ্ছেন। ব্যালান্সটা আরও ভাল করো।
প্র: আপনার উচ্চতা এখন ৭ ফুট ২ ইঞ্চি। ওজন ২৯০ পাউন্ড। এই চেহারা ধরে রাখার রহস্য কী?
সতনম: সাধারণত যে ট্রেনিংগুলোয় হার্ট মাসল ভাল হয় (সাঁতার, স্কিপিং, দৌড়) সেগুলোই করি। নিজের মুভমেন্টগুলোর উপর কাজ করার চেষ্টা করি। আমি সেন্টার পজিশনে খেলি তাই শক্তিটা সব সময় লাগে। তবে দম বাড়াতে আরও বেশি করে অনুশীলন করতে হয়।
প্র: আপনি ফ্লোরিডার আইএমজি অ্যাকাডেমি থেকে ট্রেনিং নিয়ে এনবিএর নজরে এসেছিলেন। ওই ট্রেনিং কতটা সাহায্য করেছে?
সতনম: কেনি ন্যাট ও ড্যানিয়েল বার্তোর কোচিংয়ে অনেক উন্নতি করেছি। দু’জনেই আমাকে খুব খাটতে বলেছিলেন। আমাকে এনবিএ ড্রাফ্টের জন্য চেষ্টাও করতে বলেছিলেন। ওঁদের ধন্যবাদ দিতে চাই এত সাহায্য করার জন্য।
প্র: আপনি তো এনবিএতে প্রথম ভারতীয় হিসাবে খেলছেন। কিন্তু ভারতে এই খেলার ভবিষ্যত্ কী?
সতনম: এনবিএ-তে খেলার আগেও আমার স্বপ্ন ছিল ভারতে বাস্কেটবলকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। আমার লক্ষ্য হচ্ছে এনবিএতে বেশ কিছু বছর খেলা। আমি নিশ্চিত, পরের ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে অনেক ভারতীয়ই বাস্কেটবল খেলতে আগ্রহী হবে। নিজেকে ভাগ্যবান মনে করব যদি আমাকে দেখে ভারতীয়রা বাস্কেটবল খেলতে আগ্রহী হয়। আমার দেশে অনেক ভাল ভাল বাস্কেটবলার আছে। তারা ভাল কোচিং পেলে আমার মতো হাজারটা সতনাম তৈরি হবে।
প্র: ভারতীয় হয়ে আপনার নিশ্চয়ই ক্রিকেট ভাল লাগে?
সতনম: বাস্কেটবলই একমাত্র খেলা যেটা আমি খেলেছি। তাই ওটাই আমার একমাত্র পছন্দ। লেব্রন জেমস আর কোবি ব্রায়ান্ট আমার কাছে সব।