জুটি: স্বামী সত্যব্রতের সঙ্গে ফুরফুরে মেজাজে সাক্ষী মালিক। টুইটার
রিয়ো অলিম্পিক্সে ভারতের প্রথম পদক এসেছিল তাঁর হাত ধরেই। ব্রোঞ্জ জিতে মেয়েদের কুস্তিকে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরেছিলেন তিনি। কিন্তু রিয়ো-পরবর্তী সময়টা সে রকম ভাল কাটেনি। বিয়ের পরে ধাক্কা খেয়েছিল পারফরম্যান্স। মাস কয়েক আগে জাতীয় কুস্তিতে চ্যাম্পিয়ন হয়ে কিছুটা সাফল্যের মুখ দেখেছেন। কোথায় সমস্যা হচ্ছে? সমস্যা কাটানোর রাস্তাই বা কী? চলতি প্রো-রেসলিং লিগে অংশ নেওয়া আর অনুশীলনের ব্যস্ততার মাঝে সময় বার করে একান্ত সাক্ষাৎকারে আনন্দবাজারের সব প্রশ্নের উত্তর দিলেন সাক্ষী মালিক।
প্রশ্ন: রিয়ো অলিম্পিক্সের পরে কী ভাবে বদলে গিয়েছে আপনার জীবন?
সাক্ষী মালিক: রিয়োর সাফল্যের পরে সবাই আমাকে চিনেছিল। আগে ক’জন চিনত? অলিম্পিক্সের পদক জেতার পরে সাক্ষী মালিক নামটা সবাই জানে। সবাই এখন আমাকে ভালবাসে। আশা করে, আমি আবার অলিম্পিক্স থেকে পদক জিততে পারব।
প্র: কিন্তু রিয়োর পরে তো আপনার পারফরম্যান্স সে রকম ভাল কিছু হয়নি। অনেকগুলো প্রতিযোগিতায় হারতে হয়েছে। কেন এ রকম হল বলে মনে হয়?
সাক্ষী: মানছি, রিয়োর পরে আন্তর্জাতিক মঞ্চে আমার পারফরম্যান্স সে রকম ভাল হয়নি। তার একটা কারণ অবশ্যই চাপ। এখন আমি রিংয়ে নামলেই লোকে ভাবে সাক্ষী নিশ্চয়ই পদক জিতবে। এত মানুষের প্রত্যাশা কিছুটা চাপ তো তৈরি করেই। তবে এর বাইরেও একটা কারণ আছে।
প্র: কী সেটা?
সাক্ষী: ভাগ্য বা দুর্ভাগ্য, যাই বলুন না কেন। ভাগ্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ সময় আমার সঙ্গে ছিল না। এশিয়ান গেমসে আমি শেষ দু’সেকেন্ডে হেরে যাই। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ০.৭ সেকেন্ডে। শেষ মুহূর্তে বাউট শেষ করতে পারছি না। হেরে যাচ্ছি। এই ব্যাপারটার ওপরে আমাকে নজর দিতে হবে। দেখতে হবে, শেষ দিকে যেন আর কোনও সমস্যায় না পড়ি। অনুশীলনেও এ ব্যাপারটা খেয়াল রাখছি।
প্র: জাতীয় কুস্তিতে তো আপনি আবার স্বমহিমায়। কোনও নতুন কৌশল নিয়েছিলেন?
সাক্ষী: না, সে রকম কিছু নয়। আমাদের অনেক উঠতি মেয়ে আছে, যারা ভাল করছে। ভবিষ্যতে ভাল করবে। তবে জাতীয় কুস্তিতে সেরা হওয়াটা কোনও সমস্যা নয়। সমস্যা হচ্ছে বিদেশে।
প্র: কাকে প্রেরণা হিসেবে দেখেন?
সাক্ষী: আমার স্বামী (সত্যব্রত কড়িয়ান) আমাকে সব সময় উৎসাহিত করে যায়। আমার কেরিয়ারের ওঠাপড়ায় সব সময় ওকে পাশে পেয়েছি। ও নিজেও কুস্তিগির, অর্জুন পুরস্কারপ্রাপক। তা ছাড়া আমার শ্বশুর (সত্যবান, যিনি অলিম্পিক্সেও নেমেছিলেন) কুস্তিগির ছিলেন। তিনিও সমানে আমাকে উৎসাহিত করেন।
প্র: সামনে কী লক্ষ্য রেখে এগোচ্ছেন?
সাক্ষী: এ বছরে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাই পর্ব আছে। তার পরে এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ। এই দুটো আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় নিজের সেরাটা দেওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছি। বিশেষ করে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে।
প্র: এখন আপনি প্রো-রেসলিংয়ে অংশ নিচ্ছেন। এতে আপনার লাভ কী হচ্ছে?
সাক্ষী: শুধু আমি কেন, অনেক ভারতীয় কুস্তিগিরই প্রো-রেসলিং থেকে লাভবান হচ্ছে। এই মঞ্চে আমরা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন, অলিম্পিক্স চ্যাম্পিয়নদের সঙ্গে লড়তে পারছি, অনুশীলন করতে পারছি। এতে এক জন কুস্তিগিরের মান বাড়তে বাধ্য।
প্র: পরের বছর টোকিয়ো অলিম্পিক্স। দেশ কি সাক্ষী মালিকের গলায় আরও একটা পদক দেখতে পাবে?
সাক্ষী: নিজেকে সেই লক্ষ্যেই তৈরি করছি। যে জন্য বিদেশে যত বেশি সম্ভব প্রতিযোগিতায় নামার চেষ্টা করব। বিভিন্ন শিবিরে যোগ দেব। যাতে অনুশীলনে বিভিন্ন ধরনের সঙ্গী পাই। যত জনের সঙ্গে লড়ব, তত বেশি করে নিজেকে উন্নত করতে পারব। তার পরে টোকিয়োয় পদক জেতার জন্য ঝাঁপাব। ওটাকেই আমি পাখির চোখ করছি।