ইডেনে ফেরার লড়াই আজ

রোজ বাঁচাবেন না বিরাট, চিন্তা সেটাই

ট্রেডমিলের স্পিড অ্যা়ডজাস্ট করার সময় দেখা গেল মেশিনে ফুটে উঠছে ৮। ষাট ছুঁইছুঁই বয়স হলেও এখনও এত ভাল ফিটনেস যে, চল্লিশ মিনিট ওই ৮ রেখেই দৌড়বেন।

Advertisement

গৌতম ভট্টাচার্য

মুম্বই শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৬ ০৪:২০
Share:

দু’টিতে, জুটিতে। টি-২০ বিশ্বকাপ সেমিফাইনালের আগের দিন ওয়াংখেড়ের প্র্যাকটিসে ধোনি ও কোহালি। ছবি: উৎপল সরকার।

ট্রেডমিলের স্পিড অ্যা়ডজাস্ট করার সময় দেখা গেল মেশিনে ফুটে উঠছে ৮। ষাট ছুঁইছুঁই বয়স হলেও এখনও এত ভাল ফিটনেস যে, চল্লিশ মিনিট ওই ৮ রেখেই দৌড়বেন।

Advertisement

যাঁরাই অল্পস্বল্প ট্রেডমিল করেন তাঁরা জানবেন, একটা বয়সের পর ৮ ম্যানেজ করা একেবারেই সহজ নয়। সমস্যা হল, দিলীপ বলবন্ত বেঙ্গসরকরের সাহস আজকের মতো এই জিমেই সীমাবদ্ধ!

মুম্বই ক্রিকেট সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্ট তিনি। বকলমে সর্বেসর্বা। কোথায় বিশ্বকাপ সেমিফাইনালের আগের দিন ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে নিরন্তর টহল দেবেন তা নয়। তাঁকে আবিষ্কার করা গেল বান্দ্রা কুর্লা কমপ্লেক্সে। মেরিন ড্রাইভের ধারে ওয়াংখেড়ে যদি রাজারহাট হয়, বান্দ্রা কুর্লা হল বেহালা। ‘‘পাগল হয়ে যাচ্ছি আমি। সম্ভব হচ্ছে না মাথা
ঠিক রাখা,’’ বললেন তিনি। প্রতিদ্বন্দ্বীরা যে রবার্টস-মার্শাল-হোল্ডিংয়ের চেয়েও মারাত্মক— বৃহস্পতিবারের টিকিটপ্রার্থী!

Advertisement

কলকাতায় ভারত-পাক ম্যাচের আগের রাতেও সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বা অভিষেক ডালমিয়ার হোয়াটসঅ্যাপ রাত তিনটে অবধি খোলা ছিল বলে শোনা গিয়েছে। এখানে কিন্তু কর্মকর্তারা জাস্ট আত্মগোপনে। সেক্রেটারি পিভি শেট্টিকেও কাল থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। পরে দেখলাম পাশে গারওয়াড়ে ক্লাব হাউসের ছ’তলার ঘরে কিছু সাঙ্গোপাঙ্গ নিয়ে তিনি কাতর আশ্রয়ে। ফোন ধরছেন, তবে অন্য নম্বরে। বিচিত্র কী যে, কাল রাত্তিরে রবি শাস্ত্রী বলছিলেন, ‘‘একটা লোকের ফোন পাচ্ছি না! আরে ভাই আমি তো দশটা টিকিট কিনব। কমপ্লিমেন্টরি চাই না। কী অবস্থা, তাতেও পাচ্ছি না!’’

কোহালিরা এক একজন বিশ্বকাপ সেমিফাইনালের টিকিট পাবেন মাত্র তিনটে করে। অথচ মুম্বই এমন শহর, যেখানে প্রত্যেকেরই বন্ধুবান্ধব রয়েছে। ব্যবসায়িক যোগাযোগ রয়েছে। তিনটেতে পোষায় কী করে? বত্রিশ হাজারের স্টেডিয়ামে টিকিটের এই করুণ অভ্যন্তরীণ ছবি দেখতে
দেখতে মনে পড়ে গেল সাতাশির বিশ্বকাপে ওয়াংখেড়ের সেমিফাইনালে বিদায়ের পর তখনকার ভারত অধিনায়কের মন্তব্য।

‘‘শুনলে খুব তুচ্ছ মনে হতে পারে, কিন্তু আমার মতে এটাও হারের কারণ। আমাকে ম্যাচের সতেরোটা টিকিট জোগাড় করতে হয়েছিল ফ্যামিলি আর বন্ধুবান্ধবদের জন্য। খেলার দিনও টিকিট তুলেছি। ম্যাচের ফোকাস হয়তো কিছুটা নড়ে গিয়েছিল,’’ বলেছিলেন কপিল দেব। ভারতীয় টিম ডিরেক্টরের আর্তি শুনে মনে হল, ঊনত্রিশ বছর বাদেও কিছুই বদলায়নি। এখনও টিকিটের ব্যাপারে ম্যাচে অংশ নেওয়া ক্রিকেটাররাই পান সবচেয়ে কম গুরুত্ব।

সাতাশি বলতে গিয়ে মনে পড়ে গেল ঊননব্বইয়ের কথাও! ওটাও সেমিফাইনাল ছিল। নেহরু কাপের। তখন ভারত অধিনায়ক শ্রীকান্ত। সেটাও ভারত হেরে শেষ করে। বড় টুর্নামেন্টের নক আউট ম্যাচ মুম্বইয়ে খেলা আদৌ নিরাপদ নয়, এমন একটা কুসংস্কার যখন ডালপালা মেলে বেশ খানিকটা বেড়েছে, তখন আবির্ভূত
হয় ২ এপ্রিল ২০১১! বিশ্বকাপ ফাইনাল। তার পর থেকে আরব সাগর সংলগ্ন এই ভূখণ্ড মহেন্দ্র সিংহ ধোনি এবং টিম ইন্ডিয়ার জন্য আলাদা
ইঙ্গিত বহনকারী।

ওয়াংখেড়েতে ধোনিরা এ দিন প্র্যাকটিস করার সময় দেখা গেল প্রচণ্ড জোরে মাইক টেস্টিং চলছে। মিডিয়া ম্যানেজার দৌড়তে দৌড়তে গেলেন। আওয়াজটা বন্ধ করার জন্য। ধোনি-রাজে টিম নেট করার সময় কোনও শব্দবাজি ঘোরতর নিষিদ্ধ! এই নিয়ে কটকে বছরখানেক আগে ধোনি ক্ষোভে ফেটেও পড়েছিলেন।
বিশাল বিতর্ক হয়েছিল। তাই আজ সবাই এত তটস্থ।

যাক গে যাক মাইক বন্ধ হল। এ বার দ্বিতীয় উপদ্রব। মাঠে ঢুকে পড়েছেন নির্বাচক প্রধান সন্দীপ পাটিল, সঙ্গে আর এক সিলেক্টর বিক্রম রাঠৌর। নির্বাচকেরা ধোনির সঙ্গে গম্ভীর আলোচনায়— এই সব দৃশ্য ডোডো পাখির মতো বহু দিন বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে!

মুম্বই জনজীবনে যেমন ডাব্বাওয়ালা, ভারতীয় দলে তেমনই একা ধোনির শাসন। বুধবারের বাজারে অবশ্য দেখলাম, শাস্ত্রীকেও ডেকে নেওয়া হল আলোচনায়। বিষয়বস্তু বাইরে থেকেও আন্দাজ
করা সম্ভব!

যুবরাজের বদলে এগারোতে কে ঢুকবেন? ভারতীয় দলে বোর্ড সচিবের বেসরকারি হস্তক্ষেপে ঢোকা যুবি যে কত গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন, তিনি বাইরে যাওয়ার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে হাড়ে হাড়ে সবাই টের পাচ্ছে। ব্যাট না হয় অজিঙ্ক রাহানে করে দিতে পারেন। বল করবে কে? শাস্ত্রী ইঙ্গিত দিলেন। বোলিংয়ের কথা ভেবে পবন নেগিও অগ্রাধিকার পেতে পারেন। অথচগোটা বিশ্বকাপে যুবরাজকে দিয়ে ধোনি করিয়েছেন মাত্র ৩ ওভার! তা হলে তাঁর জায়গায় কার আসা উচিত— স্পেশ্যালিস্ট ব্যাট না বোলিং অলরাউন্ডার? দল নির্বাচন নিয়ে কুয়াশা এমনই বেড়েছে যে কেউ কেউ বলছেন, শিখরের জায়গায় অজিঙ্ক আর যুবির বদলে মণীশকে নিলে কেমন হয়? কেন জানি না মনে হচ্ছে, মাঠের বাইরে গিয়েও যুবরাজের মুখে হয়তো এক চিলতে হাসি।

ওয়াংখেড়ে পিচ যিনি এত বছর ধরে তৈরি করেন সেই সুধীর নায়েককে আশেপাশে দেখা গেল না। ধোনি-শাস্ত্রীকে সেই যে তিনি মাস ছয়েক আগে ওয়ান ডে উইকেট তৈরি নিয়ে চটিয়েছিলেন, তার মার্কশিট আসলে বেরোল এত দিন বাদে। নায়েককে এই ক’দিন ছুটিতে পাঠানো হল। উইকেট করেছেন ধীরাজ পারসানা। দলজিৎ সিংহও আশেপাশে ঘুরছেন। মাঠের হেড মালি অবশ্য কাউকে বলছিলেন, ঘূর্ণি পিচের কোনও নির্দেশ নেই। এটা ১৭০-১৮০-র ট্র্যাক। এর মানে কি ক্যানভাসে আবার তাঁর ব্যাটিং ভেসে উঠবে?

যাঁর কথা বলছি, তিনি একটু দূরে একটা নেট থেকে আর একটা নেটে পরিক্রমা সারছিলেন। ধারাভির বস্তি থেকে জুহুর বাংলো যাঁকে নিয়ে এই মুহূর্তে একই রকম আলোড়িত। তিনি অবশ্যই বিরাট কোহালি!

জুহু ভিলে পার্লেতে এ দিন অমিতাভ বচ্চনের বাড়ির সামনে দুই তরুণীকে দেখলাম সেলফি তুলছেন। দেখে কিন্তু মনে হল, বাড়ির মালিক যে ভাবে এখন বিরাটে উচ্ছ্বসিত, যে ভাবে অস্ট্রেলিয়া ইনিংসের পর নিজের ব্লগে লিখেছেন ‘শতাব্দীর সেরা ইনিংস’— তাতে কোহালির সঙ্গে একটা নিজস্বী নিশ্চয়ই এই মুহূর্তে সোৎসাহে তুলবেন। বিরাট-ম্যানিয়া বলিউড তারামণ্ডলেও এমন ছড়িয়েছে যে, করিনা কপূর বলেছেন, ‘‘বিরাট কোহালি ব্যাট করার সময় নিজেকে ভারতীয় হিসেবে অসম্ভব গর্বিত লাগে।’’ এ দিন সেলিম খান বললেন, ‘‘সি কে নায়ডুর সময় থেকে ক্রিকেট দেখছি। মোহালির বিরাটের মতো এমন রূপকথার আশ্চর্য ইনিংস কখনও দেখিনি। সচিন এখনও ভারতীয় ক্রিকেটের অমিতাভ বচ্চন! কিন্তু কোহালি বলিউডের কোন মহাতারা, আর খুব অল্প দিনের মধ্যে আমরা জেনে যাব।’’ এমনকী বীরু সহবাগ! ভাষ্যকার হিসেবে যিনি হইচই ফেলে দিয়েছেন। তিনিও বলছেন, ‘‘সীমান্তে এখন আর ওরা গুলিতে ভয় পায় না। কোহালিতে পায়।’’

ভাষ্যকার সহবাগকে দেখে বেশ বোঝা যাচ্ছে, বাইশ গজে তাঁর আপাত অনাবিল স্টাইলের পেছনে কেমন প্রগাঢ় হোমওয়ার্ক থাকত। এখানে যেমন! কী বলবেন আগাম কিছু লাইন তৈরি করে আনছেন আর সেগুলো ব্যাপক সাড়া ফেলছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারাতে যিনি খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দিতে পারেন, সেই আশিস নেহরার যেমন তিনি নামকরণ করেছেন ‘নেহরাজি’। গোটা টিম তার পর থেকে ছত্রিশ বছরের পেসারকে নেহরাজি বলে ডাকছে। সহবাগইজম বলছে, ‘বসের বৌয়ের কথা আর মাঠে নেহরাজির জ্ঞান, দু’টোই কোনও প্রশ্ন না করে শুনবে।’

রবীন্দ্র জাডেজার নামকরণ করেছিলেন স্বয়ং ধোনি— স্যর জাডেজা। তেমনই জনপ্রিয় হয়েছে নেহরাজি। নামের মালিককে বুধবারের ট্রেনিংয়ে দেখলাম না। এমনিতে ভারতীয় দলের প্র্যাকটিস নীতি এখন হল, ট্র্যাভেলের দিন শুধু ট্র্যাভেল। পরের দিন ছুটি। তার পর ম্যাচের আগের দিন প্র্যাকটিস। তা হলে নেহরা নেই কেন? টিমের এক কর্তাব্যক্তি বললেন, ‘‘মানুষটা সতেরো বছর ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট খেলছে। নিজের শরীরটাকে ও এরোপ্লেনের মতো ট্রিট করে। কখন জ্বালানি ভরবে। কখন ডাঙায় থাকবে। কখন এয়ারপোর্ট থেকে উড়বে।’’

ফাইনালের আগে শেষ ধাপে আরও এক জনের দিকে টিম আকুল ভাবে তাকিয়ে। তিনি রোহিত শর্মা। গোটা টুর্নামেন্টে ভাল খেলেননি। কিন্তু সেমিফাইনাল-ফাইনালে খেলে দিলে কার মনে পড়বে, আগে কোথায় কী হয়েছিল? তিরাশির বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল, ফাইনালের ম্যান অব দ্য ম্যাচ মোহিন্দর অমরনাথ। কিন্তু কপিলের সেই মহাকাব্যিক ১৭৫ নট আউটের টানব্রিজ ওয়েলস বাদ দিয়ে বাকিগুলোতে ভারতীয় ম্যান অব দ্য ম্যাচের তালিকা ক’জনের মনে আছে? টিম হোটেলের বারে ভারতীয় টিম ডিরেক্টর বলছিলেন হোটেল কর্তাকে, ‘‘রোহিতটা যদি খেলে দেয় তা হলে আর কোনও চিন্তা থাকে না।’’ সবাই একটা কথা মনে মনে বুঝছে আর প্রমাদ গুনছে। যদিও সেটা অব্যক্ত যে— বিরাট সভ্যতা মোটেও রোজ রোজ রক্ষা করবে না!

টিমে আর একজনকে দেখে মনে হচ্ছে, মোহালি ব্যর্থতা ঝেড়ে ফেলে নীরবে ওয়াংখেড়ের জন্য তৈরি হচ্ছেন। ক্রিস গেইল বনাম তাঁর সংঘর্ষ এই ম্যাচে সবচেয়ে টিআরপিওয়ালা অংশ যদি না হয়, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তো নিশ্চয়ই। উপমহাদেশে ১০৯ টি-টোয়েন্টি ইনিংস খেলে গেইলের স্ট্রাইক রেট ১৫৪। গড় ৪৭। যা অসাধারণ বললে কম বলা হয়। কিন্তু রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বিরুদ্ধে গেইলের গড় কুড়ি হবে বলেও মনে হয় না।

ইমরান খান ক’দিন আগে কলকাতায় বসে বলছিলেন, ‘‘গত আট বছর আইপিএল খেলে খেলে ধোনি-কোহালিরা এত চাপ নেওয়া শিখেছে যে, বিরাট আস্কিং রেটও ওদের কাছে প্রেশার নয়।’’ এ দিন ড্রেসিংরুম গসিপ শুনছিলাম, কোন একটা ম্যাচে টিমের চার ওভারে জেতার জন্য ৬০ রান দরকার ছিল। কেউ কোনও টেনশন করেনি। ধোনি নাকি আড়মোড়া ভেঙে ওঠেন। বলেন, ‘‘যাই করে দিয়ে আসি।’’ করেও দেন।

ডারেন স্যামির ওয়েস্ট ইন্ডিজ ভবিষ্যদ্বাণী করার পক্ষে টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বদখত টিম। কখন কী করবে নিজেরাই জানে না। কোটলার নিউজিল্যান্ডের মতো আচমকা ভেঙে পড়তে পারে। আবার ইংল্যান্ডের মতো অকস্মাৎ চমকেও দিতে পারে। তেমন কোনও চাপও নেই ভারতের মতো যে, গোটা দেশ ২৪০ বল অপেক্ষার পর ডান্সিং শু পরে নাচার জন্য তৈরি। নাচের মঞ্চ তৈরি না হলে ১২৫ কোটি মানুষ মুহূর্তে মুমূর্ষু হয়ে পড়বে।

আর পনেরো-কুড়ি বছরের মধ্যে হয়তো টি-টেন বিশ্বকাপও ছড়িয়ে পড়বে ক্রিকেটলোকে। কিন্তু তার আগে পর্যন্ত এটাই ক্রিকেটের নিষ্ঠুরতম মঞ্চ! রবি শাস্ত্রী দীর্ঘনিঃশ্বাস-সহ বলছিলেন তাঁর বন্ধুকে, ‘‘জিতলে পয়লা এপ্রিল কলকাতায় তাজ বেঙ্গলে উঠছি। হারলে কোথাও যাওয়ার প্রশ্ন নেই।’’

ঠিকঠাক অনুবাদ করলে দাঁড়ায়, হারলে জীবন স্তব্ধ হয়ে যাবে! দেশবাসী যে ৩১ মার্চকে ক্যালেন্ডারে পাঁচ বছর আগের ২ এপ্রিল হিসেবে আগাম দেখে নিয়েছে!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement