Euro Cup 2020

EURO 2020: ইউরোর ইতিহাসে কি সেরা দিন, সম্মোহিত ফুটবলবিশ্ব

খেতাবের অন্যতম দাবিদার শক্তিশালী ফ্রান্সকে হারিয়ে ইউরোর অন্যতম বড় অঘটন ঘটিয়েছে সুইৎজ়ারল্যান্ড।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০২১ ০৮:০২
Share:

হর্ষ-বিষাদ: টাই-ব্রেকারে ব্যর্থ হয়ে হতাশ এমবাপে। তাঁর শট আটকে উত্থান সোমেরের (ডান-দিকে)। ছবি রয়টার্স।

বিশ্বের ‍‘সুন্দর খেলা’ ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থা ফিফা নব্বই দশকের শুরুতে এনেছিল স্লোগানটা- ‍‘গো ফর গোলস’। তার আক্ষরিক প্রয়োগ দেখা গেল সোমবার রাতে! ইউরো কাপের প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে।

Advertisement

দু’টি ম্যাচে গোল হল ১৪টি। ছিটকে গেল গত বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স ও রানার্স ক্রোয়েশিয়া। খেতাবের অন্যতম দাবিদার শক্তিশালী ফ্রান্সকে হারিয়ে ইউরোর অন্যতম বড় অঘটন ঘটিয়েছে সুইৎজ়ারল্যান্ড। দু’ম্যাচে মুঠো মুঠো বিনোদন ছড়িয়ে। বাদ যায়নি টাইব্রেকার মারতে এসে তারকা ফুটবলার কিলিয়ান এমবাপের পেনাল্টি নষ্ট করে অশ্রুপাতের মুহূর্ত, পল পোগবার দুরন্ত গোল কিংবা আত্মঘাতী গোলের লজ্জাজনক পরিস্থিতিও। সবই ঘটেছে একই রাতে দুই খেলায়।

তাই ফুটবল পণ্ডিতেরা সোমবারের রাতকে আখ্যা দিচ্ছেন, ‍‘ম্যাজিক মানডে’ (জাদুময় সোমবার) হিসেবে। প্রশ্ন উঠছে, ইউরোয় এটাই কি সবচেয়ে বেশি ফুটবল-বিনোদনে পূর্ণ রাত? স্পেন কোচ লুইস এনরিকের মন্তব্য, ‍‘‍‘ফুটবলার ও কোচ হিসেবে প্রচুর স্মরণীয় ম্যাচে সাক্ষী থেকেছি। কিন্তু সোমবার রাতের ম্যাচে সমস্ত মুহূর্তের কোলাজ উপহার হয়ে ফিরে এসেছে। বহুদিন মনে থাকবে। এখনও পর্যন্ত এটাই আমার জীবনের সেরা ম্যাচ।’’

Advertisement

কোপেনহাগেনে প্রথমে স্পেন বনাম ক্রোয়েশিয়া, বুখারেস্টে ফ্রান্স বনাম সুইৎজ়ারল্যান্ডের ম্যাচের ফল যে ভাবে এগিয়েছে নির্ধারিত নব্বই মিনিটে, তাতেও কত মিল! প্রথম ম্যাচে শুরুতে ০-১ পিছিয়ে গিয়ে স্পেনের ৩-১ এগিয়ে যাওয়া। তার পরে শেষ ১০ মিনিটে দুরন্ত প্রত্যাবর্তন ঘটিয়ে ক্রোয়েশিয়ার ৩-৩ করা। দ্বিতীয় ম্যাচেও ঠিক একই ব্যাপার। প্রথমে ফ্রান্স ০-১ পিছিয়ে যায়। তার পরে ৩-১ এগিয়ে যায় দিদিয়ে দেশঁর দল। শেষ ১০ মিনিটে আবার সুইসদের ৩-৩ করে ম্যাচে ফেরা। তফাত এটাই যে, প্রথম ম্যাচে ৩-৩ করেও অতিরিক্ত সময়ে ম্যাচ থেকে হারিয়ে যাওয়ায় স্পেনের কাছে ক্রোয়েশিয়া হেরেছে ৩-৫। আর দ্বিতীয় ম্যাচে ১২০ মিনিটেও খেলার মীমাংসা না হওয়ায় তা টাইব্রেকারে গড়ায়। সেখান থেকে চোখের জলে বিদায় গত বার ইউরোয় রানার্সদের।

যা দেখে স্বভাবতই খুশি ইউরোর আয়োজকেরা। করোনা অতিমারি আক্রান্ত বিশ্বে যখন বিনোদন বড় কাচের জার থেকে হোমিয়োপ্যাথির শিশিতে আশ্রয় নিয়েছে, তখন এ রকম পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকা গোলের প্লাবন বওয়া সোমবার রাতের দুই ম্যাচ হাসি ফুটিয়েছে উয়েফা কর্তাদের মুখেও।

গত সপ্তাহে ইউরোয় চার ম্যাচে হয়েছিল ১৮ গোল। সেখানে সোমবার রাতে ২৪০ মিনিটে ১৪ গোলের পরে জাদুময় সোমবারের অস্তিত্ব জোরালো ভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার দিকেই এগোচ্ছে।

প্রাক্তন ইংল্যান্ড অধিনায়ক গ্যারি লিনেকার তাঁর টুইটে লিখেছেন, ‍‘‍‘ফুটবল-বিনোদনে পূর্ণ আমার দেখা সেরা দিন হয়ত এটাই। দু’টো অবিশ্বাস্য ম্যাচ হয়ে গেল। অথচ ফলাফলে অনেকটাই একে অপরের প্রতিফলন। অবিশ্বাস্য দৃশ্য।’’ স্পেন কোচ লুইস এনরিকের কথায়, ‍‘‍‘ফুটবলকে উপভোগ করো। এটাই হতে পারে শিরোনাম।’’

এখানেই থেমে যাননি এনরিকে। সাংবাদিক সম্মেলনে গিয়ে তিনি বলে এসেছেন, ‍‘‍‘মহাকাব্যিক ম্যাচের দুরন্ত সমাপ্তি হয়েছে।’’ কিন্তু ফুটবলে এক দল যখন বিজয় উৎসব করবে, তখন উল্টোদিকে থাকবেই বিয়োগান্তক আঁধার। সে ভাবেই হারের পরে ক্রোয়েশিয়ার নিকোলা ভ্লাসিচের বিলাপ, ‍‘‍‘বড় ইমারত গড়েছিলাম। কিন্তু তা হুড়মুড় করে ভেঙে ধূলিসাৎ হয়ে যায় অতিরিক্ত সময়ে দু’গোলের পরেই।’’

যোগ করেছেন, ‍‘‍‘৩-৩ করার পরে হৃদয়ে আশার আলো ঝিলিক দিয়েছিল। কিন্তু তার পরে দু’গোল হজম করার পরে আঁধার নেমে আসে।’’

ম্যাচে ১-৩ পিছিয়ে থেকেও নির্ধারিত সময়ে শেষ পাঁচ মিনিটে নাটকীয় ভাবে মিস্লাভ অরসিচ এবং মারিয়ো পাসালিচের অনবদ্য গোলে সমতা ফিরিয়ে দ্বৈরথকে অতিরিক্ত সময়ে নিয়ে গিয়েছিল ক্রোয়েশিয়া। তার পরে নাটকীয় ভাবে জোড়া গোল করে জয়ের শিরোপা ছিনিয়ে নেওয়া স্পেনের। এ ভাবে বিদায় নিতে হলে এই বিলাপ স্বাভাবিক।

ফুটবল রোমান্টিসিজমে পূর্ণ স্পেন কোচ এই ফুটবল-বিনোদনের রাত যে চেটেপুটে উপভোগ করেছেন, তা তাঁর কথায় স্পষ্ট। বলে দিয়েছেন, ‍‘‍‘এ রকম উত্তেজনার রোলার কোস্টারে দুলতে থাকা ম্যাচ আরও একটা সামনে পড়লেও মাঠে নেমে পড়ব। কিন্তু আমার পরিবার ও ভক্তেরা একই মনোভাব দেখাবেন কি না, তা বলতে পারি না।’’

বুখারেস্ট ফ্রান্স বনাম সুইৎজ়ারল্যান্ড ম্যাচের পরতে পরতেও ছিল উত্তেজনা। দিদিয়ে দেশঁর দল প্রথমার্ধে ০-১ পিছিয়ে থেকেও দ্বিতীয়ার্ধে চালকের আসনে বসে পড়ে করিম বেঞ্জেমা ও পল পোগবার দুরন্ত গোলে ৩-১ ফলের পরে। কিন্তু নাটক তখনও বাকি ছিল। দুই সুইস ফুটবলার হ্যারিস সেফেরোভিচ এবং মারিয়ো গ্যাভ্রানোভিচ গোল করে ম্যাচকে নিয়ে গিয়েছিলেন অতিরিক্ত সময়ে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement