তিন মাসও হয়নি তিনি ইংল্যান্ড কোচ হয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা আশা করেছিলেন, তাঁর হাত ধরেই ফের ‘থ্রি লায়ন্সের’ গর্জন দেখা যাবে বিশ্বফুটবলে। তিনিও বরাবর বলে এসেছিলেন ক্লাব ফুটবলের থেকেও তাঁকে বেশি তাতিয়েছে দেশের কোচ হওয়ার স্বপ্ন। কিন্তু সেই স্বপ্নের হটসিটই শেষ পর্যন্ত কাঁটা হয়ে উঠল। ‘লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু’ প্রবাদটার সারমর্ম এই মুহূর্তে বোধহয় হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন তিনি— ইংল্যান্ড কোচ স্যাম অ্যালার্ডাইস।
ইংল্যান্ডের এক বিখ্যাত সংবাদপত্রের স্টিং অপারেশনের ফাঁদে পড়ে স্বপ্নের হটসিট থেকে বরখাস্ত হলেন অ্যালার্ডাইস।
কী সেই ভিডিও? কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে বৈঠক করছেন অ্যালার্ডাইস। যেখানে তিনি বোঝাচ্ছেন, এফএ-র আইনের ফাঁক খুঁজে কী ভাবে সুবিধা নেওয়া যায়। দু’দফায় হওয়া বৈঠকে ইংল্যান্ডের ফুটবল ফেডারেশনের বিরুদ্ধে (এফএ) তাঁকে বিস্ফোরক মন্তব্যও করতে শোনা যায়। যেখানে ওয়েম্বলিকে ঢেলে সাজাতে এফএ-র টাকা খরচের সিদ্ধান্তকে কটাক্ষ করেন প্রাক্তন সান্ডারল্যান্ড কোচ।
অভিযোগ এখানেই শেষ হচ্ছে না। এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে চার লক্ষ ইউরোর চুক্তিও করতে দেখা যায় অ্যালার্ডাইস-কে। যার বিনিময়ে তিনি এফএ-র ট্রান্সফারের যাবতীয় নিয়ম সম্বন্ধে জানান। কী ভাবে এজেন্ট হয়ে আরও টাকা উপার্জন করা যায় তালিকায় সেটাও ছিল।
অ্যালার্ডাইসের নিশানা থেকে প্রাক্তন কোচ রয় হজসনও বাদ যাননি। ইংল্যান্ডের ইউরো বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে নিজের পূর্বসূরিকেই দায়ী করেন ‘বিগ স্যাম’। বলেন, ‘‘হজসন তো ফুটবলারদের ঘুম পাড়িয়ে দিত। এই কারণে ইউরোতে ইংল্যান্ড ঠিক করে খেলতে পারেনি।’’ হজসনের সহকারী ও প্রাক্তন ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড কিংবদন্তি গ্যারি নেভিলকেও খারাপ কোচের তকমা দেন তিনি। আইসল্যান্ডের বিরুদ্ধে মার্কাস র্যাশফোর্ডকে কেন নামানো হল না সেটা নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন তিনি।
ইন্টারনেটে যে ভিডিও ছড়িয়ে যাওয়ার পরে তোলপাড় পড়ে যেতে সময় লাগেনি। অবস্থা সামলাতে তড়িঘড়ি ময়দানে নামতে হয় এফএ কর্তাদের। এফএ চেয়ারম্যান গ্রেগ ডাইক বলেন, ঘটনার পুরোদস্তুর তদন্ত করা হবে। সময় নষ্ট না করে অ্যালার্ডাইসকে বৈঠকেও ডাকে এফএ। চাপে পড়ে কর্তাদের তিনি বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, তাঁর কোনও দোষ নেই। এটা সংবাদমাধ্যমের চাল। যে সংবাদপত্রের ওয়েবসাইটে তাঁর এই স্টিং অপারেশন বেরিয়েছে সেখানে আগেও অনেক কোচের বিরুদ্ধে এ রকম করা হয়েছে। কিন্তু তাতেও অ্যালার্ডাইস পার পেলেন না। এফএ নতুন ইংল্যান্ড কোচের কথা ভাবতে শুরু করে দিয়েছিল ঘটনার পরপরই। যে দৌড়ে এগিয়ে ছিলেন ক্রিস্টাল প্যালেসের কোচ অ্যালান পার্ডিউ। মঙ্গলবার অ্যালার্ডাইসকে এফএ কর্তারা ইস্তফা দেওয়ার কথাও বলেন এমন শোনা যাচ্ছে। এর পরই ইংল্যান্ড কোচের পদ থেকে ইস্তফা দেন তিনি।