বিশ্বকাপের শেষ চারে ইংল্যান্ড। শনিবার কোটলায়।-পিটিআই
ইংল্যান্ড ১৭১-৪ (২০ ওভারে) শ্রীলঙ্কা ১৬১-৮ (২০ ওভারে)
অ্যাঞ্জেলো ম্যাথেউজ আপাদমস্তক বিরক্তিতে ব্যাটটা যখন মাঝমাঠে ছুঁড়ে ফেলে দিলেন, নয়াদিল্লির দক্ষিণ আফ্রিকা টিম হোটেলে কী চলছিল জানার উপায় থাকল না। তবে খোঁজ না নিয়েও এটুকু বোধহয় আন্দাজে লিখে দেওয়া যায়, টিম হোটেলের রুমে-রুমে টিভিতে ম্যাচটা চলছিল। আর কোনও এক আব্রাহম বেঞ্জামিন ডে’ভিলিয়ার্স হয়তো নিষ্ফলা আক্রোশে কিছু না কিছু ছুঁড়ে ফেলেছেন!
শনিবার রাতের পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথেউজ আর থাকলেন না। শনিবার রাতের পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এবি ডে’ভিলিয়ার্সও আর নেই।
লঙ্কার ট্র্যাজিক নায়ক শুধু যে তাঁর দেশকে কাপ-যুদ্ধে বাঁচিয়ে রাখতে ব্যর্থ হলেন তা নয়। ম্যাথেউজ একই সঙ্গে এবি-র কাপ ভাগ্যকেও শেষ করে দিয়ে গেলেন। শ্রীলঙ্কা যদি আজ জিতত, সেমিফাইনাল যাওয়ার একটা তবু সুযোগ পড়ে থাকত দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে। শ্রীলঙ্কাকে শেষ ম্যাচে হারালে এবি-রা চলে যেতেও পারতেন সেমিফাইনালে। কিন্তু আজকের পর আগামী সোমবার দু’টো টিমই কোটলায় মুখোমুখি হবে ঠিকই, কিন্তু দু’টোকেই তার পর দেশের ফ্লাইট ধরতে হবে। এবি-অ্যাঞ্জেলো দু’জনকেই।
এবিডি শেষ ম্যাচে কী করবেন, জানা নেই। চলতি বিশ্বকাপে তাঁর অসামান্য প্রতিভার শেষ বিচ্ছুরণ কোটলা দেখবে কি না, সময় বলবে। তবে দ্বীপপুঞ্জের অধিনায়কের বীরগাথা কিন্তু এ দিন দেখে রাখল কোটলা। হোক না তিনি আজকের বিপর্যস্ত নায়ক। কিন্তু কোটলার কাছে তিনি বন্দিত। আজ রাতের সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র। সে যতই কোটলা স্কোরবোর্ড জয়ী টিমের নাম ইংল্যান্ড দেখাক।
কোটলা স্কোরবোর্ড তো এটা দেখাবে না, দ্বীপপুঞ্জের সম্মান একক যুদ্ধে কী ভাবে শেষ ওভার পর্যন্ত টেনে নিয়ে গিয়েছিলেন ম্যাথেউজ। সে তো শুষ্ক কিছু সংখ্যা দেখাবে মাত্র। দেখাবে তিনি ৫৪ বলে অপরাজিত ৭৩। তিনটে বাউন্ডারি, পাঁচটা ওভার বাউন্ডারি। দেখাবে না, অ্যাঞ্জেলো যখন ব্যাট হাতে ক্রিজে নেমেছিলেন, তাঁর টিম সঙ্কটের কোন অতলস্পর্শী গহ্বরের উদ্দেশে অমোঘ যাত্রা শুরু করেছিল। তিন ওভারে মাত্র ১৫ রানের মধ্যে লঙ্কান টপ অর্ডার তো চলে গিয়েছিল ডাগআউটে। ডাগআউটের শরীরী ভাষা তখন যেন হতাশার হরেক সংজ্ঞা। স্কোরবোর্ড দেখাবে, আস্কিং রেটকে ক্রমশ নিজের বশে নিয়ে এসেছেন শ্রীলঙ্কান অধিনায়ক। দেখাবে না, ইনিংসের অর্ধেকটা হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট নিয়ে খেলে গিয়েছেন তিনি। দেখাবে না, সুযোগ পেলেই সামান্য স্বস্তির খোঁজে ফিজিওকে ডেকে নিয়েছেন। দেখাবে না, একটা প্রায় অকেজো পা নিয়েও দাঁতে দাঁত চেপে দু’রানের জন্য দৌড়েছেন। দেখাবে না, ব্যাট ছোড়ার পরক্ষণে যাবতীয় হতাশা, যাবতীয় বিরক্তি হজম করে নিজেই আবার ব্যাটটা তুলে নিয়েছেন পরম যত্নে। আজকের জন্য ওটা ব্যর্থ, ঠিক। কিন্তু কে জানে, অন্য কোনও যুদ্ধে এই ব্যাটটাই হয়ে উঠবে না শত্রু নিধনের চরম অস্ত্র!
ইংল্যান্ড ম্যাচটা জিতে গেল জো রুটের শেষ দিকে একটা অবিশ্বাস্য ক্যাচে। আর তাঁরই শেষ কয়েকটা ওভার পেসার লেলিয়ে দেওয়ার ধুরন্ধর স্ট্র্যাটেজিতে। নইলে দুই ইংরেজ স্পিনার আদিল রশিদ আর মইন আলিকে এমন মার মারছিলেন ম্যাথেউজ যে, আর একটা ওভার স্পিনারের হাতে গেলে রুটকে হেরে ফিরতে হত। প্রথমে থিসারা পেরিরা, পরে দাসুন শানাকা—দু’টো মোক্ষম জুড়ি মাঝে পেয়ে গিয়েছিলেন ম্যাথেউজ। এবং পেয়ে ইংল্যান্ডের দুই স্পিনারকে এমন মারলেন যে, কাপে থাকলেও তাঁদের আত্মবিশ্বাস কী দাঁড়াবে, বলা কঠিন। রশিদের একটা ওভার থেকে একুশ নিলেন ম্যাথেউজ-পেরিরা জুটি। মইন আলির এক ওভার থেকেও উঠল গোটা কুড়ি। ইংল্যান্ডের দুই স্পিনার চার ওভারে দিলেন ৬৩! ইংল্যান্ডের হার তখন প্রায় নিশ্চিত। ম্যাথেউজের ছক্কাগুলো তখন আর মাঠে থাকছে না। কোটলা স্ট্যান্ডে ধাক্কা খেয়ে ফিরে আসছে! এ সময় শানাকার ক্যাচ প্রায় জন্টি রোডসের কায়দায় নিলেন রুট। স্পিনার হঠিয়ে পেসার এনে অ্যাঞ্জেলোতেও রাশ টানলেন।
ইংল্যান্ড ইনিংস শেষের সময় রাসেল আর্নল্ডকে উত্তেজিত হয়ে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গিয়েছিল। লঙ্কার খারাপ ক্রিকেট দেখে তিনি উত্তেজিত। ম্যাচের পর তাঁকে আর কোথাও পাওয়া গেল না। আশা করা যায়, বিদায়ের কষ্টের মধ্যেও অন্তত একটা ব্যাপার তাঁকে শান্তি দেবে।
মাহেলা জয়বর্ধনে ছেড়ে দিয়েছেন। কুমার সঙ্গকারাও আর নেই। কিন্তু এত কিছুর পরে এখনও একজন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথেউজ আছে, যিনি সোনার লঙ্কার পুরনো স্মৃতি কখনও না কখনও ঠিক মনে পড়িয়ে দেবেন!
সংক্ষিপ্ত স্কোর: ইংল্যান্ড ১৭১-৪ (বাটলার ৬৬ ন.আ., রয় ৪২), শ্রীলঙ্কা ১৬১-৮ (ম্যাথেউজ ৭৩ ন.আ., কাপুগেদারা ৩০)