ছবি: সংগৃহীত।
নৌকা, ধানের শিস, লাঙল। ভোটারদের বাছতে হবে যে কোনও একটি। ব্যালট পেপারে এই তিনটে ছাড়াও থাকবে আরও অনেক প্রতীক। গুরুত্ব তিনটেতেই। আওয়ামি লিগের নৌকা, বি এন পি'র ধানের শিষ, জাতীয় পার্টির লাঙল। ২২ ডিসেম্বর নারায়নগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন, নাসিকের নির্বাচন। তিন দলের প্রার্থীরা ঘরে ঘরে ঘুরছেন। ভোট চাইছেন একান্ত আন্তরিকতায়। বলছেন, যদি উন্নতি চাও আমাদের ভোট দাও। নির্বাচনী সভায় নেতাদের লম্বা-চওড়া ভাষণ। প্রার্থীর চেয়ে দল বড়। যে দলকে পছন্দ তাকেই ভোট। ইস্তেহারে নাসিকের উন্নতি কোথায় কীভাবে হবে তার প্রতিশ্রুতি। বিশ্বাস করা না করাটা ভোটারদের ব্যাপার। জাতীয় স্তরে কোন দল কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে দেখছে তারা। দলীয় শীর্ষ নেতৃত্বের বিচারটাও সারা। ভোট দেওয়াটা বাকি। আওয়ামি লিগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা, বি এন পির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া, জাতীয় পার্টির সর্বময় কর্তা হুশেইন মোহম্মদ এরশাদের ঠিকানা ঢাকা হলেও, নারায়নগঞ্জ নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। ভোট যত ক্ষুদ্র পরিসরেই হোক, জয় পরাজয়ের আঁচ থেকে রক্ষে নেই। দলের হার মানে, হার তাঁদেরও। জিতলে গৌরব। টেনশনে সবাই। পাঁচ বছর আগেও এমনটা ছিল না। ২০১১'তে ভোট হয়েছিল দল ছাড়াই। প্রার্থীরা লড়েছিলেন একা একা। হার-জিতের মান অপমান একাই মাথায় নিয়েছিলেন। ভোটাররাও জানত, চাওয়া পাওয়া ব্যক্তি নির্ভর। যাকে ভোট দিয়ে জেতাবে তাঁর কাছেই সব দাবি পেশ করতে হবে। ঠকালে কিছু করার নেই। কোনও দল দায় নেবে না। এটা ঘটত আকছার। ভাল ভাল কথা বলে ভোটারদের মন ভাঙিয়ে জয়, তারপর বেপরোয়া আচরণ। মানুষের কথা ভুলে নিজের আখের গুছোন।
সেটা আর চলবে না। দিন বদলেছে। রাজনীতির নিগড়ে বাঁধা নির্বাচন। পার পাওয়ার উপায় নেই। নিজের ইচ্ছেয় প্রার্থী হওয়া নয়, দল পছন্দ করলে, ভোট লড়ার ছাড়পত্র। নির্বাচনে নির্দল প্রার্থী হওয়ার সুযোগ আছে। সেটা আরও কঠিন। একা একা মনোনয়ন পেশ করা যাবে না। দরকার ৩০০ ভোটারের সমর্থন। তাদের স্বাক্ষর মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হবে। উটকো লোকের প্রার্থী হওয়ার প্রশ্ন নেই।
আরও খবর: ফেব্রুয়ারিতে হাসিনার দিল্লি সফর
২৪ নভেম্বর মনোনয়ন জমা দেওয়া শেষ। ৪ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রার্থীপদ প্রত্যাহারের সুযোগ ছিল। নির্বাচন প্রার্থীদের অনেকেই নাম তুলে নিয়েছেন। বুঝেছেন, সুবিধে হবে না। দলীয় প্রার্থীর সঙ্গে লড়া মানে বাহিনীর সঙ্গে একার যুদ্ধ। নাসিকে সাধারণ ওয়ার্ড ২৭, সংরক্ষিত ওয়ার্ড ৯। ভোটার ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৩৯২। অর্ধেক ভোটার মহিলা। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের চেয়ে এই নির্বাচনের বিধি নিয়ম অনেক কঠোর। ইউ পি ভোটেও দলীয় ব্যবস্থা কার্যকরী হয়। এখানে ভোটারদের স্বাক্ষরটা খুব জরুরি। ছাপ্পা ভোট যাতে আসল ভোটকে ছাপিয়ে না যায় তাই। আগের বারের চেয়ে ভোটার বেড়েছে পৌনে এক লাখ। ভোটে উদ্দীপনাও যথেষ্ট। আবেগে যাতে নিয়মের বাঁধ না ভাঙে সেদিকে সতর্ক নির্বাচন কমিশন।
ভোট কেন্দ্র ১৬৩, বুথ ১ হাজার ২১৭। ভোট গ্রহণের দায়িত্বে থাকবেন ১৬৩ প্রিসাইডিং অফিসার, ১ হাজার ২১৭ সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার, ২ হাজার ৪৩৪ পোলিং অফিসার। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দিন আহমেদ শক্ত হাতে তদারকি করছেন। রাজনৈতিক দলগুলো উদ্বেগে। নারায়নগঞ্জ পৌরসভা, কদমরসুল পৌরসভা, সিদ্ধিরগঞ্জ পৌরসভা ভেঙে নারায়নগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন তৈরি। বেড়েছে আয়তনে। বৃদ্ধি পেয়েছে গুরুত্ব। নাসিকের চেয়ারম্যান পদের দিকে সব দলের নজর। নির্বাচনে একটি ভোটও অমূল্য।