একদিন যে হবে, জানা ছিল। কিন্তু এতটা হবে, বোঝা যায়নি।
ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের টিকিট নিয়ে যে হাহাকার পড়ে যাবে, ম্যাচটা ইডেন পাওয়ার পর থেকেই বোঝা যাচ্ছিল। কিন্তু ম্যাচ টিকিট নিয়ে যে এমন ঝড় উঠবে, ভেঙে তছনছ করে দেওয়া হবে টিকিট কাউন্টার, প্রায় হাতাহাতি লেগে যাবে, এতটা বোঝা যায়নি।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে এগারোটা নাগাদ ক্লাবহাউসের বাইরে প্রচুর লোক দেখা গেলেও প্রথমে টের পাওয়া যায়নি। তখন পাকিস্তান টিম ঢুকছে, মনে করা হয়েছিল আফ্রিদিদের দেখতেই ওই ভিড়। কিন্তু পরে দেখা যায়, জমায়েতের কারণ অন্য। এঁরা অসংখ্য টিকিট-বুভুক্ষু, যাঁরা কি না বুধবার থেকে একবার মহমেডান মাঠ, একবার ইডেন কাউন্টার ঘুরছেন। আর সব জায়গায় ব্যর্থ হয়ে ক্লাবহাউসের সামনে জড়ো হয়েছেন। আসলে ভারত-পাক মহাযুদ্ধের টিকিট যে আর পাঁচটা ম্যাচের মতো কাউন্টার থেকে বিক্রি হচ্ছে না, অনলাইন পাওয়া যাচ্ছে, জানতেন না অনেকেই। তা-ও সংখ্যাটা নগণ্য, মাত্র হাজার ছয়েক টিকিট। পাকিস্তান টিমকে দেখামাত্র এঁরা বিক্ষোভ শুরু করে দেন। পাকিস্তান টিম নিয়ে এমনিতেই নিরাপত্তার কড়াকড়ি চলছে। তার মধ্যে জনতার আক্রোশ দেখে রীতিমতো ত্রস্ত হয়ে পড়ে পুলিশ। ডাবল ব্যারিকেড পড়ে যায় ক্লাবহাউস গেটের দু’দিকে।
পুলিশি হস্তক্ষেপে তখনকার মতো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও পরে আবার ঝামেলা লেগে যায়। এ বার সিএবি সদস্যরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। দু’টো ব্যাপার নিয়ে ঝামেলা লাগে। অনেক সদস্য রোদে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষার পর নেতাজি ইন্ডোর কাউন্টারে গিয়ে দেখেন, টিকিট শেষ। কিছু সদস্য আবার সিএবির সদস্যপদ পুনর্নবীকরণ করাতে এসে শোনেন, সেটা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বারবার এঁরা ঢুকে পড়তে থাকেন সিএবি কর্তাদের ঘরে। চাপ দিতে থাকেন টিকিটের জন্য। কর্তারাও বলতে থাকেন, সম্ভব নয়। সব মিলিয়ে বিশ্রী পরিস্থিতি তৈরি হয়ে যায়।
তবে টিকিট-চাহিদার উগ্রতম নিদর্শন শহর দেখল এ দিন দুপুরে। যে সংস্থা টিকিট বন্টনের দায়িত্বে ছিল, তারা অপেক্ষারত সদস্যদের বলে দেয় টিকিট শেষ! অথচ লাইনে তখনও দাঁড়িয়ে প্রায় তিনশো টিকিট-প্রার্থী। টিকিট শেষ শোনার পর তাঁরা এতটাই ক্ষিপ্ত হয়ে পড়েন যে, কোনও কোনও ক্রিকেটপ্রেমী অস্থায়ী টিকিট কাউন্টার পর্যন্ত ভেঙে ফেলেন! প্রায় হাতাহাতির পর্যায়ে যা চলে যায় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফের নামতে হয় পুলিশকে। প্রায় দু’ঘণ্টা বন্ধ রেখে শেষ পর্যন্ত চালু হয় বন্টন প্রক্রিয়া।
আর টিকিটপ্রার্থীদের ঘিরে সিএবি কর্তাদের বেহাল অবস্থার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যেন চলছে ব্ল্যাকে টিকিট বিক্রি। পাঁচশো টাকার টিকিট চলছে আড়াই হাজার, ক্লাবহাউস লোয়ার টিয়ারের দর পনেরো থেকে কুড়ি! বিভিন্ন ক্লাব, সিএবি স্বীকৃত সংস্থা, ধর্মশালা থেকে আসা দর্শক, আইসিসি, ভারতীয় বোর্ড, স্পনসর, পুলিশ, দমকল বিভাগ, কর্পোরেশন সংরক্ষিত সব টিকিট বাদ দিলে সিএবির হাতে এমনিতেই টিকিট বাড়ন্ত। টিকিট বণ্টন শুরু হওয়ার পর থেকে কর্তাদের মোবাইল এমন বাজা শুরু হয়েছে যে, বাধ্য হয়ে কেউ কেউ গোপন নম্বর ব্যবহার করছেন। গোটা দিন টিকিটের আশায় সিএবির বিভিন্ন ঘরের দরজায় টোকা পড়ছে। কর্তারা তাঁদের এক ঘর থেকে আর এক ঘরে পাঠিয়ে সাময়িক স্বস্তির ব্যবস্থা করছেন। শোনা যাচ্ছে ভারতীয় টিম পাঁচশো টিকিট চেয়েছে। কেউ কেউ বললেন, পাকিস্তানও ছাড় পায়নি। টিমের কাছাকাছি যাঁরা থাকতে পারছেন, ফাঁক পেলেই আফ্রিদিদের কাছে টিকিট চাইছেন!
আসলে শুধু তো ক্রিকেট নয়। আগামী শনিবার ক্রিকেটের সঙ্গে বিনোদনের ককটেলও তো থাকবে। অমিতাভ বচ্চন থেকে ইমরান খান, সচিন তেন্ডুলকর— কে বাদ যাচ্ছেন? সিএবি বলছে, লোকের চাহিদা তাই উন্মত্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে। বলা হচ্ছে, সাম্প্রতিকে একমাত্র কেকেআর বনাম সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের পুণে ওয়ারিয়র্স ম্যাচে এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছিল। কেউ কেউ আবার তুলনা টানছেন অতীতের হিরো কাপ ফাইনালের সঙ্গে। যে কর্পোরেট বক্সের জন্য দশ বছরের ভাড়া বাবদ তিরিশ লক্ষ পায় সিএবি, মাত্র দু’টো ম্যাচের জন্য (ভারত-পাকিস্তান ও বিশ্বকাপ ফাইনাল) কত টাকায় বিক্রি হচ্ছে জানতে চান? মাত্র চল্লিশ লক্ষে! আর কিনেছেন কে?
কেন, মুকেশ অম্বানী!