রাত্তিরের নাগপুর যতই অ্যান্টি ক্লাইম্যাক্স হয়ে দাঁড়াক। শহরে ক্রিকেট কভার করতে আসা অতিথি ভারত-পাক সাংবাদিকেরা দৃশ্যটা আগাম কল্পনা করে অভিভূত হয়ে পড়ছেন!
এক স্টেডিয়ামে একই সময়ে তৃতীয় বিশ্বের তিন মহানায়ক! অমিতাভ বচ্চন, সচিন তেন্ডুলকর ও ইসলামাবাদ থেকে আসা ইমরান খান।
নাগপুর বিপর্যয়ের পরেও সৌরভ মনে করছেন, ইডেনে পাকিস্তান ধোনিদের সমস্যা হবে না। তাঁর ভবিষ্যদ্বাণীর কথা জেনেও ওয়াঘার ও-পারের মিডিয়া কিন্তু রাগছে না। বরঞ্চ প্রবল উষ্ণতার সঙ্গে সৌরভের নাম করছে। বলছে পাকিস্তানি আওয়ামের কাছে সৌরভ এত দিন পরিচিত ছিলেন লড়ুয়ে অধিনায়ক হিসেবে। যে স্পিরিটটা তারা পাকিস্তানি অধিনায়কের মধ্যে দেখতে চায়। কিন্তু হালফিল তাঁর পরিচিতি এক উদার ক্রিকেট সংগঠক হিসেবে। যাঁর পাকিস্তানকে কলকাতা আনার চেষ্টায় অভিভূত পাক সমাজ বলছে ভারতেই তো তা হলে কত লোক আছে যারা সীমান্তের কাঁটাতারে সন্দিগ্ধতায় বিশ্বাস করে না।
মঙ্গলবার দেখা গেল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের খুব গুরুত্বপূর্ণ সহায়তায় ভারতীয় বোর্ডে তুমুল লড়াই করে পাকিস্তানকে ইডেন এনে ফেলাতেই সৌরভ তাঁর উচ্চাকাঙ্খায় ইস্তফা দেননি। আরও এক পা এগিয়ে তিনি শনিবারের বিশাল ম্যাচের বাইরেও একটা ‘ম্যাচ’ আয়োজন করতে চাইছেন। নাগপুরে কিউয়ি স্পিনে হতমান ভারত বনাম পাংশু মুখের আফ্রিদি! নাকি মাঠের বাইরে হাইভোল্টেজ গ্ল্যামারের বাগান?
কোন ‘ম্যাচ’টা কাকে প্রদক্ষিণ করে ঘুরবে বলা খুব কঠিন?
ইডেনে সে দিন কত হাজার আন্তর্জাতিক রান আর উইকেটের সমারোহ ঘটবে, আন্দাজ করা কঠিন। সন্ধে সওয়া ছ’টায় সংবর্ধনা জানানো হবে দু’দেশের সেরা সাত ক্রিকেটারকে। সৌরভ চেয়েছিলেন বাছাই করা এগারো জনকে ইডেন টার্ফে নামাতে। যাঁদের ভারত-পাক ম্যাচের রেকর্ড সবচেয়ে ভাল। কিন্তু তাঁদের মধ্যে দাউদ ইব্রাহিমের বেয়াই জাভেদ মিয়াঁদাদের ভিসা জোগাড় করাটা গভীর স্পর্শকাতর সমস্যা। বাকিদের মধ্যে কপিল এবং কুম্বলে কভারেজের কাজে ব্যস্ত। আসতে পারবেন না। দ্রাবিড় আসবেন ফাইনালে।
তাই শেষমেশ সাত জন সংবর্ধিত হচ্ছেন। গাওস্কর, ইমরান, আক্রম, ওয়াকার, ইনজামাম, সচিন ও সহবাগ। রাতে সৌরভ বলছিলেন, ‘‘সহবাগের পাকিস্তানের সঙ্গে যা অসাধারণ রেকর্ড, তাতে ওকে রাখতেই হয়।’’
ইডেনের ঘাসে যখন এঁরা পা রাখবেন তখন কোনও না কোনও ভিআইপি বক্সে পাওয়া যাবে স্টিভ ওয় আর নাসের হুসেনকে। আর জায়ান্ট স্ক্রিনে অবধারিত দেখানোও হবে তাঁদের। প্রথম বল পড়ার আগেই ইডেন দর্শককে সম্মোহিত করে দেওয়ার মতো কম্বিনেশন।
কিন্তু মঙ্গলবারের ঘটনাপ্রবাহ ম্যাচের বাইরে অন্য একটা অংশকে সংবর্ধনার চেয়ে বেশি আকর্ষণীয় করে দিয়েছে। সংগঠক হিসেবে যেন তাঁর ক্ল্যাসিকাল অফ ড্রাইভটাই মেরেছেন সৌরভ।
অমিতাভ বচ্চনকে রাজি করিয়েছেন জাতীয় সঙ্গীত গাইতে। দৃশ্যটা কল্পনা করা যাক। দু’দল সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে। এক দিকে পাকিস্তানের জাতীয় সঙ্গীত গাইছেন সেখানকার বিখ্যাত গাইয়ে শফকত আমানত আলি। ও দিকে ‘জনগণমন’ গাইবেন অমিতাভ। দুই ইনিংসের বিরতিতে দু’টি করে গান গাইবেন শঙ্কর মহাদেবন ও শফকত আমানত আলি।
সৌরভ চেয়েছিলেন লতা মঙ্গেশকরকে আনতে। ফোনে কথাও বলেন। কিন্তু অসম্ভব ক্রিকেটপ্রেমী লতা জানান, শারীরিক ভাবে তিনি অশক্ত। তাই আসতে পারবেন না। অমিতাভ দিল্লিতে বর্তমানে অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরীর প্রথম হিন্দি ছবির শুটিংয়ে ব্যস্ত। সেখান থেকেই সময় করে আসছেন। দিল্লি থেকে ফোনে প্রযোজক সুজিত সরকার বললেন, ‘‘শুক্রবার দুবাইতে মিস্টার বচ্চনের সঙ্গে আমিও প্রাইভেট জেটে যাচ্ছি একটা অ্যাওয়ার্ড ফাংশানে। পরের দিন দুপুরের মধ্যে হয় মুম্বই হয়ে বা দুবাই থেকে স্ট্রেট আমরা কলকাতায় আসছি।’’
সৌরভ বললেন, ‘‘মিস্টার বচ্চন আমাকে কনফার্ম করার জন্য একদিন সময় নিয়েছিলেন। তার পর শুধু জানিয়েছেন খেলা দেখে সে দিন বেশি রাতে মুম্বই ফিরে যাবেন। রোববার তাঁর নাতনি আরাধ্যার স্কুলে অ্যানুয়াল ডে রয়েছে। দাদু সেখানে থাকতে চান।’’
শাহরুখকেও ইডেনে খেলা দেখার জন্য সৌরভ আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। শুটিং থাকায় শাহরুখ আসতে পারছেন না। অবশ্য নিজের ব্যক্তিগত বক্সসমেত সে দিন মাঠে থাকবেন মুকেশ অম্বানীও। সচিন এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সৌরভ আমন্ত্রণ জানিয়েছেন নিজের বক্সে। ইমরান বসবেন আইসিসি বক্সে।
অমিতাভ কোথায় বসবেন? সম্ভবত ইমরানের কাছাকাছি কোনও বক্সে। পাক সাংবাদিকরা বলেই চলেছেন, ‘‘লাহৌরে একবার ক্যানসার হাসপাতালের জন্য টাকা তুলতে অমিতাভ এসেছিলেন। ওই শেষবার ইমরান আর ওঁকে একসঙ্গে দেখা গিয়েছিল। এ বার আবার সঙ্গে সচিন। ত্রহ্যস্পর্শ। গাঙ্গুলি পারেন বটে।’’
স্থানীয় একটা অভিব্যক্তি অবশ্যই ওঁরা জানেন না। মঙ্গলবার বেশি রাতে সৌরভ অবশ্য জেনে গিয়েছেন তিন মহাতারাকে একসঙ্গে নামিয়ে তিনি ইডেনের রাত মায়াবী করে দিতে পারেন। কিন্তু তাঁর নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াল উইকেট। কলকাতা যেন নাগপুর না হয়ে যায় সেটা নিশ্চিত করা। তা হলেই না মহাতারাদের আনা মায়াবী রাত আরও দীর্ঘস্থায়ী হবে।