এক দিকে বিশাল মাপের নতুন জায়ান্ট স্ক্রিন।
অন্য দিকে বৃষ্টির প্রভাব থেকে মাঠকে বাঁচাতে স্বচ্ছ আউটফিল্ড কভার।
স্পনসরদের ব্র্যান্ডিংয়ে আরও রঙিন হয়ে ওঠা ইডেনে ডিজে-র জগঝম্প।
এবং আরও কিছু।
আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ‘পাঁচতারা’ সাজে সাজতে চলেছে বাঙালির প্রিয় ইডেন গার্ডেন্স।
ইডেনকে ‘ফাইভ স্টার ভেনু’ বানানোর পরিকল্পনায় সিলমোহর দেওয়া হল বুধবার সিএবি-র এক ‘শীর্ষবৈঠকে’। যদিও সেই বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন দুই শীর্ষকর্তা যুগ্মসচিব সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় ও কোষাধ্যক্ষ বিশ্বরূপ দে। প্রথমজন মুম্বইয়ে এনসিএ কমিটির বৈঠকে। দ্বিতীয়জন আদালতে পেশার কাজে ব্যস্ত। তাঁদের ছাড়াই ইডেনকে আধুনিকতায় মোড়ার পরিকল্পনা প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গেল। সিএবি প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ও অপর যুগ্মসচিব অভিষেক ডালমিয়ার নেতৃত্বে।
কী ভাবে ‘পাঁচতারা’ মোড়কে মোড়া হতে চলেছে ইডেনকে?
সভায় উপস্থিত কর্তারা বলছেন, প্রথমত, বিধানসভা ভবনের দিকে ‘ই’ ব্লকে যে ইলেকট্রনিক্স স্কোরবোর্ড রয়েছে, তার খোলনলচে বদলে ফেলে বিশাল সাইজের এলইডি স্ক্রিন বসানো হবে। যাতে খেলার স্কোর ও লাইভ ছবি ছাড়াও ভেসে উঠবে চলতি ম্যাচের বিভিন্ন মুহূর্ত নিয়ে সেরা ফেসবুক-টুইটার পোস্ট। সাড়ে তিন কোটি টাকার বিনিময়ে যে স্কোরবোর্ড বসিয়ে দেওয়ার কাজটি করবে প্রাক্তন টেস্ট ক্রিকেটার ব্রিজেশ পটেলের সংস্থা। উল্টোদিকে থাকবে আরও একটি এলইডি স্ক্রিন।
সম্প্রতি ইডেনের ঘাসের নীচের অংশে ‘কোরিং’ করে জলনিকাশি ব্যবস্থার সংষ্কার করা হয়েছে। তার উপর বৃষ্টি থেকে বাঁচাতে ইডেনের আউটফিল্ডকে স্বচ্ছ কভার দিয়ে ঢেকে ফেলা হবে। বৃষ্টির পর রোদ উঠলে যাতে ঢাকা অবস্থাতেও তার তাপ ঘাসে এসে পড়ে সে জন্যই স্বচ্ছ কভার। ৬৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে এই কভারের স্পনসর একটি একটি ব্যাঙ্ক ও এক ইস্পাত সংস্থা।
কী ভাবে ‘পাঁচতারা’ মোড়কে মোড়া হতে চলেছে ইডেনকে
১) এক জোড়া এলইডি জায়ান্ট স্ক্রিন। যাতে ভেসে উঠবে সোশ্যাল মিডিয়ার ‘পোস্ট’।
২) বৃষ্টির হাত থেকে ইডেনের আউটফিল্ডকে বাঁচাতে মাঠজোড়া স্বচ্ছ কভার।
৩) ক্লাব হাউসের সব ফ্লোরে ও ভিআইপি অঞ্চলে ওয়াই-ফাই বা ওয়্যারলেস ইন্টারনেট অ্যাকসেস।
৪) নেমিং রাইট হোল্ডারদের ব্র্যান্ডিংয়ে ইডেনে আরও রঙের ছোঁয়া। নতুন, আধুনিক সাজ।
৫) অস্থায়ী ড্রেসিংরুম। একই দিনে ছেলে ও মেয়েদের টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনাল ইডেনে হবে বলে।
ইডেনের ‘নেমিং রাইট হোল্ডার’-দের জন্য টেন্ডার নোটিসের ড্রাফট নিয়ে কথা বলতে বুধবার সিএবি-তে এসেছিলেন আইনজীবী ঊষানাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। যারা এই বরাত পাবে, তাদের ব্র্যান্ডিংয়ে ইডেন আরও রঙিন হয়ে উঠবে বলে শীর্ষকর্তাদের ধারণা। নবসাজে সজ্জিত ইডেন মাতাতে আইপিএলের মতো টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও থাকবে ডিজে ও তার হাজারো ওয়াটের গমগমে জগঝম্প।
বিশ্বসেরা স্টেডিয়ামগুলিতে যে রকম ব্যবস্থা রয়েছে, সে রকমই ইডেনের ক্লাব হাউস ও ভিআইপি-দের অঞ্চলকে পুরোপুরি ওয়াই-ফাই বা ওয়্যারলেস ইন্টারনেট জোন করার পরিকল্পনাও তৈরি। শুধু বিশ্বকাপেই নয়, সারা বছর ইডেনের ক্লাব হাউস ওয়াই-ফাই জোন হয়ে থাকবে, এমনই পরিকল্পনা রয়েছে।
আইসিসি-র প্রতিনিধিরা মহিলা ক্রিকেটারদের জন্য যে অস্থায়ী চেঞ্জিং রুম তৈরির পরামর্শ দিয়েছেন, তা দুই স্থায়ী ড্রেসিং রুমের পাশে ‘বি’ ও ‘এল’ ব্লকের লাগোয়া অঞ্চলে তৈরি করা হবে বলে ঠিক হলেও, তাতে স্থায়ী ড্রেসিংরুমের মতো জায়গা ও সবরকম সুবিধা দেওয়া যাবে কি না, তা নিয়েই প্রশ্ন। ফেব্রুয়ারিতে আইসিসি-র দল ফের পরিদর্শনে আসবে। তার মধ্যে এই ড্রেসিংরুম তৈরির কাজ শেষ করতে হবে।
ইডেনের ‘পাঁচতারা’ পরিকল্পনার মধ্যেও যেন তাই কাঁটার মতো বিঁধছে এই অস্থায়ী ড্রেসিংরুম তৈরির কঠিন কাজ।