দ্বিমুকুট জিতে ইস্টবেঙ্গল। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।
একটা মাঠে তিন দিনে চোদ্দোশো রান।
অন্য মাঠে, দুশো রানের লক্ষ্যবস্তু তুলে দেওয়া হল পঁচিশ ওভারেরও কমে।
স্থানীয় ক্রিকেটে বৃহস্পতিবার ইস্টবেঙ্গলের দ্বিমুকুট জয় অবাক ঘটনা নয়। ইস্টবেঙ্গল গত বার চতুর্মুকুট পেয়ে শেষ করেছিল। পি সেন ট্রফির ম্যাচে এ দিন লক্ষ্মীরতন শুক্ল যে ভাবে অসুস্থতা থেকে প্রত্যাবর্তন ঘটিয়ে মোহনবাগানের হয়ে ৭৪ বলে ১১২ নটআউট থেকে গেলেন, তাতেও আশ্চর্যের কিছু নেই। ব্যাটে লাগলে বাংলা অধিনায়ক এ রকমই খেলেন।
প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলার বোলারদের হল কী? যা অবস্থা, মাঠে ক্রিকেটের একটা প্রজাতিই খেলছে। যার নাম ব্যাটসম্যান!
ইডেনে এএন ঘোষ ফাইনালের শেষ দিন ছিল আজ। সেখানে কালীঘাটকে চার উইকেটে হারিয়ে মরসুমের দ্বিতীয় ট্রফি তুলে নিয়ে গেল ইস্টবেঙ্গল। প্রথম ইনিংসে কালীঘাটের ৪৬৮-র জবাবে ৪৪২ তুলেছিল ইস্টবেঙ্গল। এ দিন নির্ধারিত ৪৫ ওভারের দ্বিতীয় ইনিংসে ২৩১ তোলে কালীঘাট। যার উত্তরে ২৬০-৬ তুলে জিতে যায় ইস্টবেঙ্গল। অর্থাৎ, তিন দিনে চোদ্দোশো রান! কালীঘাট অধিনায়ক মনোজ তিওয়ারি আবার সেঞ্চুরি ( ১২৩ ন:আ:) করলেও ম্যাচ বাঁচাতে পারেননি। পার্থসারথি ভট্টাচার্যর (৮৬), অনুষ্টুপ মজুমদার (৪২ ন:আ:) এবং অধিনায়ক শুভজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের (৪৩) দাপটে রান তুলে দেয় ইস্টবেঙ্গল। পরে ইস্টবেঙ্গল ক্রিকেটাররা বলে গেলেন, টিমের সংস্কৃতিই এমন সাফল্যের কারণ। যে সংস্কৃতিতে তারকাপ্রথাকে না গুরুত্ব দিয়ে খেলানো হয় সমান প্রতিভার ক্রিকেটারদের। বছরের পর বছর ধরে রাখা হয় একই টিম যা এনে দেয় পরের পর ট্রফি। অনুষ্টুপ তো বলেও গেলেন, ‘‘আমাদের একজন ভারতের প্লেয়ার, আর এক জন ক্লাবস্তরের ব্যাপারটা এমন নয়। এটাও সাহায্য করে।’’
কিন্তু ইস্টবেঙ্গল-সংস্কৃতির চেয়েও বেশি আলোচনা চলল, তিন দিনে চোদ্দোশো ওঠা নিয়ে। নাগাড়ে বোলারদের বেধড়ক পিটুনি খাওয়া নিয়ে। এমনকী অশোক দিন্দার মতো বাংলার সিনিয়র পেসার এ দিন ৯ ওভারে ৭৩ দিয়ে গেলেন। দু’ইনিংস মিলিয়ে ১৬৪ দিয়েছেন দিন্দা। উইকেট দু’টো। কেন এমন হাল? দিন্দা রাতে বলছিলেন, ‘‘আরে, টি টোয়েন্টিতেও তো আড়াইশো ওঠে কুড়ি ওভারে। তবে হ্যাঁ, গরমে সব সময় ব্যাটসম্যানের অ্যাডভান্টেজ। কারণ তাকে ব্যাটিংয়ের সময়টুকু ছাড়া মাঠে থাকতে হচ্ছে না। বোলারকে হচ্ছে।’’ দিন্দাকে এ দিন চার পা দৌড়ে বল করতে দেখা যায়। বাংলার সিনিয়র অফস্পিনার সৌরাশিস লাহিড়ী কালীঘাটের হয়েই নেমেছিলেন। বলছিলেন, ‘‘এটা মানছি যে বোলাররা বেশ খারাপ করছে। যা অবস্থা, প্রত্যেকটা বলে বোলারকে নির্ভুল থাকতে হবে। সেটা হচ্ছে না।’’
যার পিছনে পিচও অনেকাংশে দায়ী। এএন ঘোষে ম্যাটের উইকেট মোটামুটি বোলারদের বধ্যভূমি। স্পাইক পরে নামা যাচ্ছে না, গতিও কমছে। আবার সল্টলেকের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে মোহনবাগান বনাম সম্মিলিত জেলা একাদশের পি সেন ম্যাচটা যে উইকেটে হল, সেটা ব্যাটসম্যানরাই বললেন পাটা। আর জেলা একাদশের তোলা ২০২-৯ তুলতে লক্ষ্মী নিলেন মাত্র ২৩ ওভার!