পরিবর্তনের ভাবনা আলেসান্দ্রোর

বুধবার সকাল পৌনে দশটা নাগাদ যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন সংলগ্ন মাঠে খাইমে সান্তোস কোলাদোরা যখন অনুশীলনে নামলেন, তখন গনগনে রোদ।

Advertisement

শুভজিৎ মজুমদার

শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৪:০৪
Share:

জুটি: মার্তি ক্রেসপির সঙ্গে আলোচনায় কোলাদো। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

ইস্টবেঙ্গল কোচ আলেসান্দ্রো মেনেন্দেস গার্সিয়ার রণকৌশলের সঙ্গে আশ্চর্য মিল প্রকৃতির!

Advertisement

বুধবার সকাল পৌনে দশটা নাগাদ যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন সংলগ্ন মাঠে খাইমে সান্তোস কোলাদোরা যখন অনুশীলনে নামলেন, তখন গনগনে রোদ। শেষ পর্বে ঝমঝমিয়ে নামল বৃষ্টি। সঙ্গে ঠান্ডা হাওয়া। রোদ-বৃষ্টির লুকোচুরির মতোই স্পেনীয় কোচের অনুশীলন। কখনও মনে হবে আজ, বৃহস্পতিবার সাদার্ন সমিতির বিরুদ্ধেও কোলাদোকে প্রথম একাদশে রাখবেন না তিনি। ডার্বির মতো মার্কোস খিমেনেস দে লা এসপারাকেই শুরু থেকে খেলাবেন। কিছুক্ষণ পরেই দেখা গেল, কোলাদোকে সামনে রেখে জয়ের সরণিতে ফেরার মহড়ায় ব্যস্ত।

রক্ষণে কখনও মার্তি ক্রেসপির সঙ্গে বোরখা গোমেস পেরেস। কখনও আবার মেহতাব সিংহের সঙ্গে মার্তি বা বোরখা। এখানেই শেষ নয়। লালরিনডিকা রালতেকে দেখা গেল কাশিম আইদারার জায়গায় খেলছেন। অর্থাৎ, দুই স্টপারের সামনে। বাঁ-প্রান্তে খেলালেন সদ্য যোগ দেওয়া হোয়ান মেরা গঞ্জালেস।

Advertisement

চার ম্যাচে সাত পয়েন্ট নিয়ে কলকাতা প্রিমিয়ার লিগ টেবলে চার নম্বরে ইস্টবেঙ্গল। সমসংখ্যক ম্যাচে তিন পয়েন্ট নিয়ে সবার শেষে সাদার্ন সমিতি। তা সত্ত্বেও লাল-হলুদ শিবির উদ্বিগ্ন মহম্মদ আল আমনাকে নিয়ে। প্রাক্তন ইস্টবেঙ্গল তারকাকে রোখার মহড়ায় বারবার রণকৌশল বদল করলেন আলেসান্দ্রো। বুধবার বিকেলে সই করানো হল ষষ্ঠ বিদেশি হোয়ান। নথিভুক্ত করানো হল রক্ষণের অন্যতম ভরসা বোরখাকেও। বিশেষ ক্লাসও নিলেন স্প্যানিশ কোচ। অনুশীলনের পরে হোয়ান বলছিলেন, ‘‘প্রতিপক্ষের অনেক তথ্যই আমাদের কাছে রয়েছে। ভিডিয়ো সেশনে তা নিয়ে কোচ আমাদের সঙ্গে আলোচনাও করেছেন।’’ আলেসান্দ্রোর সহকারী জোসেপ ফেরে (কোকো) খোলাখুলি বলে দিলেন, ‘‘আমাদের রক্ষণ যদি পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলতে পারলে। তা হলে কোনও সমস্যা হবে না।’’

স্পেনের স্পোর্টিং খিখনের যুব দল থেকে উঠে আসা ২৫ বয়সি হোয়ানের কি বৃহস্পতিবার অভিষেক হবে? ডার্বির আগেই কলকাতায় চলে এসেছিলেন তিনি। যদিও সই না হওয়ায় মোহনবাগানের বিরুদ্ধে খেলতে পারেননি। এখন মাঠে নামার জন্য মুখিয়ে তিনি। হোয়ান বললেন, ‘‘সতীর্থেরা সাহায্য করায় দ্রুত দলের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছি। এই মুহূর্তে আমার একটাই লক্ষ্য, দলে সুযোগ পাওয়া।’’ জানিয়ে দিলেন, আক্রমণ গড়ে তুলতে দলকে সাহায্য করাই মূল লক্ষ্য। বললেন, ‘‘আক্রমণাত্মক মিডিয়ো হিসেবে খেলতে ভালবাসি।’’ কোচের মতো হোয়ানও চিন্তিত ঘরোয়া লিগের ক্রীড়াসূচি নিয়ে। বললেন, ‘‘অল্প দিনের ব্যবধানে অনেক বেশি ম্যাচ খেলতে হচ্ছে। বিশ্রামের সুযোগ কম।’’ তিনি হতাশ যুক্তরাষ্ট্র ওপেন থেকে রজার ফেডেরারের বিদায়েও। বললেন, ‘‘ফাইনালে নাদাল বনাম ফেডেরার দ্বৈরথ দেখার আশা অপূর্ণই থেকে গেল।’’ এর পরেই তিনি যোগ করেন, ‘‘নাদাল সব স্পেনীয় ক্রীড়াবিদের অনুপ্রেরণা।’’

যাঁকে নিয়ে লাল-হলুদ শিবিরে অস্বস্তি, সেই আমনা পুরনো দলের বিরুদ্ধে ম্যাচের আগে রীতিমতো স্মৃতিমেদুর হয়ে পড়েছেন। তিনি বলছেন, ‘‘গত মরসুমে ইস্টবেঙ্গলে ছিলাম। তাই কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ছি। কলকাতা লিগে ইস্টবেঙ্গলের সাফল্য দুর্দান্ত। অসংখ্য বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। প্রথমবার ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে ঘরোয়া লিগে খেলব।’’ যোগ করেন, ‘‘আমাদের কাছে এই ম্যাচটা অত্যন্ত কঠিন। চারটি ম্যাচের মধ্যে আমরা তিনটিতে ড্র করেছি। এগিয়ে থেকেও শেষ মুহূর্তে জয় হাতছাড়া করেছি। চেষ্টা করব নিজেদের সেরাটা দেওয়ার।’’

গত বছর মরসুমের মাঝপথেই চোটের জন্য আমনাকে ছেড়ে দেন আলেসান্দ্রো। তা সত্ত্বেও কোনও ক্ষোভ নেই। তিনি বলছেন, ‘‘ইস্টবেঙ্গল আমার হৃদয়ে। অনেক ক্লাবে আমি খেলেছি। কিন্তু ইস্টবেঙ্গলের খেলার অনুভূতিই আলাদা। তবে ম্যাচের নব্বই মিনিট আমি সাদার্নের ফুটবলার।’’

আমনার মতোই আবেগপ্রবণ সাদার্ন কোচ মেহতাব হোসেন। বলছিলেন, ‘‘জীবনের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছি। ইস্টবেঙ্গলের হয়ে দশ বছর খেলেছি। লাল-হলুদ জার্সির মাহাত্ম্য আমি জানি। যে কোনও পরিস্থিতিতে ঘুরে দাঁড়াতে পারে। তার উপরে ঘরের মাঠে খেলবে ওরা। ফলে কিছুটা এগিয়ে থেকেই শুরু করবে।’’ মেহতাবের দুশ্চিন্তা আরও বাড়িয়েছেন ওগবা কালু ও অসীম বিশ্বাস। হতাশ সাদার্ন কোচ বলছেন, ‘‘কালুর চোট রয়েছে। অসীমও খেলতে পারবে না একই কারণে। ইস্টবেঙ্গলের মতো দলের বিরুদ্ধে ভাঙা দল নিয়েই লড়াইয়ের চেষ্টা করব।’’

বৃহস্পতিবার কলকাতা প্রিমিয়ার লিগ: ইস্টবেঙ্গল বনাম সাদার্ন সমিতি (ইস্টবেঙ্গল, বিকেল ৩.০০)।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement