ব্যর্থ: ডার্বি-হারের জেরে পদত্যাগ আলেসান্দ্রোর। ফাইল চিত্র
ডার্বিতে হারের পরে শঙ্কিত ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের সঙ্গে বিনিয়োগকারী সংস্থার বৈঠক নির্ধারিত ছিল বিকেল চারটেয়। সল্টলেকে তা শুরু হওয়ার চার ঘণ্টা আগেই লাল-হলুদের কোচের পদ থেকে সরে দাঁড়ালেন স্পেনীয় কোচ আলেসান্দ্রো মেনেন্দেস গার্সিয়া। ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে সরে দাঁড়ানোর কথা জানালেও, ডার্বি হারের জেরেই না কি নিজেই সরে গিয়েছেন কাশিম আইদারাদের হেড মাস্টার। ফলে আই লিগের মাঝপথেই নতুন কোচের সন্ধানে নেমেছেন কর্তারা।
নতুন কোচ হচ্ছেন কে? সভা চলার মধ্যে ইস্টবেঙ্গলের এক কর্তাকে বিদেশ থেকে ফোন করেছিলেন করিম বে়ঞ্চারিফা। শোনা যাচ্ছে, আলেসান্দ্রোর জায়গায় বিদেশি কোচই আনা হবে। কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করলেও এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বিনিয়োগকারী সংস্থাই। আজ, বুধবার কোচের নাম জানা যেতে পারে। অধিক রাতের খবর, গত মরসুমে আলেসান্দ্রোর সহকারী হিসেবে থাকা মারিয়ো রিবেরার সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে দায়িত্ব নেওয়ার জন্য। পাশাপাশি শোনা গিয়েছে, বেঙ্গালুরু এফসি-র প্রাক্তন কোচ অ্যাশলে ওয়েস্টউডও নাকি যোগাযোগ করেছেন বিনিয়োগকারী সংস্থার কর্তাদের সঙ্গে।
শনিবার খাইমে সান্তোস কোলাদোদের ম্যাচ রয়েছে কোয়েম্বত্তূরে, চেন্নাই সিটি এফসি-র সঙ্গে। সেই ম্যাচের তিন দিন আগে হঠাৎ-ই কোচ সরে দাঁড়ানোয় হতচকিত কর্তারা সমস্যায়। এই অবস্থায় কাকে কোচ করে আনলে দল ঘুরে দাঁড়াবে তা নিয়ে কর্তারা ধন্দে। স্বদেশী না বিদেশি, কার হাতে দায়িত্ব তুলে দেবেন তা ঠিক করতে দিন কযেক সময় নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন লাল-হলুদের শীর্ষ কর্তারা। আপাতত আলোচনায় ঠিক হয়েছে, চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধে দল নিয়ে যাবেন সহকারী কোচ বাস্তব রায়। ক্লাবের শীর্ষ কর্তা দেবব্রত সরকার বলে দিলেন, ‘‘কালই নতুন কোচ ঠিক করতে পারলে ভাল হত। কিন্তু তো সম্ভব নয়। যাঁরা আছে তাঁরা দু’একটা ম্যাচ চালাতে না পারলে এত দিন করলটা কী?’’ বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, পয়লা ফেব্রুয়ারি ইস্টবেঙ্গল-ইন্ডিয়ান অ্যারোজ ম্যাচের আগেই নতুন কোচ এসে যাবে লাল-হলুদে। আই লিগের বাকি ১১ ম্যাচে কোচিং করাবেন তিনি।
কেন হঠাৎ আলেসান্দ্রো পদত্যাগ করলেন? বিনিয়োগকারী সংস্থার চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (সিইও) সুব্রত নাগের দাবি, ‘‘আলেসান্দ্রো ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে ডার্বির আগেই সরতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমরা বারণ করেছিলাম। আজ কলকাতায় আসার পর ওর সঙ্গে কথা বলি। কাজ চালিয়ে যেতে অনুরোধ করেছিলাম। উনি রাজি হননি।’’ দুপুর বারোটা নাগাদ সল্টলেকের সেক্টর ফাইভের অফিসে বিনিয়োগকারী সংস্থার অন্যতম প্রধান কর্তার সঙ্গে বৈঠকের পর আলেসান্দ্রো কারও সঙ্গে কথা বলেননি। পরে নির্বিষ একটি বিবৃতিতে ক্লাবের ‘শুভ কামনা’ করেছেন। বলেছেন, ‘‘নতুন কোচের হাতে ক্লাব এগিয়ে যাবে আশা করি।’’ কিন্তু এসবই মোড়কে মাখানো পেদাশারি বিবৃতি।
কিন্তু ডার্বিতে হারের পরও যে মানুষটির গলায় ছিল প্রবল আত্মবিশ্বাস, তিনি হঠাৎ এ ভাবে সরে দাঁড়ানোর পিছনের আসল সত্যিটা কি? দুটি কারণ শোনা যাচ্ছে। এক) পরপর তিন ম্যাচে হারের পরে সদস্য-সমর্থকদের প্রবল চাপের মুখে সরে দাঁড়ানো ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না। কল্যাণীতে বিনিয়োগকারী সংস্থার দুই কর্তার হেনস্তার কথা মাথায় ছিল। তাঁর সঙ্গে সে রকম কিছু হোক চাননি তিনি। দুই) এই দল নিয়ে আর আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়া সম্ভব নয় সেটা বুঝে গিয়েছিলেন। তিনি চাননি, তাঁকে কেউ বরখাস্ত করুক।
ষোলো মাসের কোচিং জীবনে আলেসান্দ্রো কোনও ট্রফি দিতে পারেননি ইস্টবেঙ্গলকে। বার্সেলোনা ‘বি’ দলের কোচিং করিয়ে আসা কোচের সাফল্য বলতে দুটি ডার্বি জয় এবং আই লিগে একবার রানার্স। তাঁর কোচিংয়ে ৪২ টি ম্যাচ খেলে ২৪টিতে জিতেছে ক্লাব। এ বারের আই লিগে এখন সপ্তম স্থানে রয়েছে ইস্টবেঙ্গল। আট ম্যাচের তিনটিতে হার দুটি মাত্র জয়। এই অবস্থায় শতবর্ষ ছোঁয়া ইস্টবেঙ্গল কর্তারা নতুন কোচ এনে এবং কিছু স্বদেশী ফুটবলার এনে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। বিনিয়োগকারী সংস্থার কর্তা অবশ্য বললেন, ‘‘বোরখার জায়গায় একজন বিদেশিকে আনা হবে। অন্য বিদেশি বদলানোর ভাবনা নেই।’’ ক্লাবের শীর্ষ কর্তা অবশ্য বললেন, ‘‘নতুন কোচের উপরই আমরা সবকিছু ছেড়ে দেব। তিনিই ঠিক করবেন বিদেশি বদল করবেন কি না? তবে আমরা ভারতীয় কিছু ফুটবলার বেছে রেখেছি। তাদের নেওয়ার চেষ্টা চলছে।’’