সফল: ইস্টবেঙ্গলের তৃতীয় গোল করার পথে মার্কোস দে লা এস্পারা মার্তিন। যুবভারতীতে। নিজস্ব চিত্র
স্প্যানিশ সুলভ হাসি মুখে ম্যাচের শেযে গর্বিত ভঙ্গিতে আলেসান্দ্রো মেনেন্দেস বললেন, ‘‘মরসুমের শুরুতে বলেছিলাম শেষ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। আমার তো মনে হচ্ছে এখন খেতাবের লড়াইতে আমরাই ফেভারিট।’’
তার মিনিট পনেরো পরে হাওড়ার বাড়ি থেকে ফোনে পিয়ারলেস কোচ জহর দাস হাসতে হাসতে বললেন, ‘‘আমাদের হাতেই তো লিগের খেতাব রয়েছে। দুটো ম্যাচ জিতলেই তো আমরা চ্যাম্পিয়ন। গোল পার্থক্যেও আমরা এগিয়ে। ইস্টবেঙ্গল ফেভারিট হবে কী করে?’’
স্প্যানিশ বনাম বঙ্গ-কোচ দু’জনেই আশার প্রদীপের সলতে জ্বালিয়ে বসে আছেন যুবভারতীতে বৃহস্পতিবার ছোট ডার্বির ফল
দেখার পর। লিগ থেকে মহমেডান ছিটকে যাওয়ার পর খেতাবের লড়াই আটকে গিয়েছে গতবারের রানার্স পিয়ারলেস এবং ইস্টবেঙ্গলের বৃত্তে। দুটি ম্যাচ বাকি পিয়ারলেসের। তাদের প্রতিপক্ষ লিগ টেবলের একেবারে শেষে থাকা রেনবো এবং জর্জ টেলিগ্রাফ। আর ইস্টবেঙ্গলের খেলা বাকি কাস্টমসের সঙ্গে।
আজ শুক্রবার বারাসতে পিয়ারলেস বনাম রেনবো ম্যাচ। রেনবোর অবনমন প্রায় নিশ্চিত। তারা কতটা লড়াই দিতে পারবে সেটা নিয়েই প্রশ্ন। রেনবোর কোচ ইস্টবেঙ্গলের ঘরের ছেলে সৌমিক দে। তিনি যদি পয়েন্ট ছিনিয়ে নিতে পারেন আনসুমানা ক্রোমার কাছ থেকে, তা হলে হাসি ফুটবে লাল-হলুদ সমর্থকদের মুখে। কিন্তু রেনবোকে তো কার্যত গুরুত্বই দিচ্ছেন না পিয়ারলেস কোচ। মিনি ডার্বি টিভিতে দেখার পর ক্রোমাদের কোচে জহরের আত্মবিশ্বাসী মন্তব্য, ‘‘পিয়ারলেসকে কাল কেউ আটকাতে পারবে না। গোল পার্থক্যও বাড়িয়ে রাখার চেষ্টা করব। আমি একেবারেই চিন্তিত নই। বাকি দুটো ম্যাচ জেতার আত্মবিশ্বাস ছেলেদের আছে।’’ পিয়ারলেস আজ রেনবোকে হারাতে পারলেই ফের চলে যাবে লিগ টেবলের শীর্ষে এবং খেতাবের আরও কাছে। সে জন্যই আলেসান্দ্রো-সহ পুরো লাল-হলুদ শিবিরের নজর আজ থাকবে বারাসতে।
শেষ ম্যাচে কাস্টমসকে হারালেই যে তাঁরা চ্যাম্পিয়ন হতে পারবেন না, তাকিয়ে থাকতে হবে পিয়ারলেসের ফলের দিকে, সেটা ঘুরিয়ে মেনে নিয়েছেন লাল-হলুদের স্প্যানিশ কোচ। বলছিলেন, ‘‘মহমেডান অত্যন্ত শক্তিশালী দল। যথেষ্ট লড়াকু। এই ম্যাচটা জিতেছি। শেষ ম্যাচের জন্য অপেক্ষা করুন। তারপর দেখবেন কি হচ্ছে।’’ গড়াপেটা আটকাতে ইস্টবেঙ্গল বনাম কাস্টমস এবং পিয়ারলেস বনাম জর্জ টেলিগ্রাফ ম্যাচ একই দিনে এবং একই সময়ে দেওয়া হচ্ছে। সেটা ২৯ বা ৩০ সেপ্টেম্বর হতে পারে। পুলিশের সঙ্গে কথা বলে আজ সূচি প্রকাশ করবে আইএফএ।
এ দিন ম্যাচের পর দেখা গেল আর্থার কোসি, তীর্থঙ্কর সরকাররা মাঠে শুয়ে পড়েছেন। হতাশায়, লিগ খেতাব হারানোর যন্ত্রণায়। তবে দীপেন্দু বিশ্বাসের দলের সাহসী ফুটবল দেখে সাদা-কালো গ্যালারি অবশ্য হাততালি দিয়ে, পতাকা উড়িয়ে অভিবাদন জানিয়েছে। দলের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর দীপেন্দু অবশ্য বললেন, ‘‘সাতটা বাংলার ছেলে আজ খেলেছে মহমেডানে। বিরতির আগে দশ জন হয়ে খেলেও দুর্দান্ত ভাবে ফিরে এসেছিলাম আমরা। আক্রমণ থেকে সরে আসিনি। আমার প্রাপ্তি বাংলার এই ছেলেরা। সন্তোষ ট্রফিতে ওরা যদি বাংলাকে চ্যাম্পিয়ন করতে পারে তা হলে খুশি হব।’’
হিসাব বলছে দু’অর্ধের অতিরিক্ত সময় মিলিয়ে মোট ৫৩ মিনিট দশ জনে খেলেছে মহমেডান। সাফুল রহমানকে লালকার্ড দেখানোটা কতটা আইন মেনে, তা নিয়ে ম্যাচের পর জোর বিতর্ক। দীপেন্দু বললেন, ‘‘এক অপরাধে দুটো শাস্তি দেওয়া হয়েছে আমাদের।’’ প্রতিপক্ষ দশ জন হয়ে যাওয়ায় তাঁরা সুবিধা পেয়ে গিয়েছেন মানতে নারাজ ইস্টবেঙ্গল কোচ। গম্ভীর মুখ করে তিনি বলে দিলেন, ‘‘আমরা ৩-২ ম্যাচ জিতেছি এটাই শেষ কথা। কার্ড তো খেলার অঙ্গ।’’