রফিকের গোলে লিগ শীর্ষে ইস্টবেঙ্গল

ছোটবেলায় কোচ সোদপুরের সমীর চট্টোপাধ্যায় মানসিক ভাবে ভাল জায়গায় নেই। বাড়িতে অভাব। রোজ নেশা করছেন। সমস্যা জানতে পেরেই কোচের বেড়ার বাড়ি নিজের খরচে পাকা করে দিচ্ছেন মহম্মদ রফিক।

Advertisement

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৪:০৫
Share:

উল্লাস: গোল করে মহম্মদ রফিক। বুধবার যুবভারতীতে। ছবি: সুমন বল্লভ

ইস্টবেঙ্গল ১ : গোকুলম ০

Advertisement

সহোদর এবং দেশোয়ালি— দুই যুযুধান ভাইয়ের লড়াই দেখতে শীতের রাতে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ভিড় জমিয়েছিলেন হাজার দশেক ইস্টবেঙ্গল সমর্থক।

যাঁদের মধ্যে গোকুলম এফসি-র কামো স্টিফেন বায়ি উঠে যাওয়ার পরে লাল-হলুদ জার্সি গায়ে নামলেন তাঁর ভাই বাজি আর্মান্দ। আর মহম্মদ আল আমনার দেশ সিরিয়ার খালেদ আল সালেহ চোট পেয়ে মাঠ ছেড়ে উঠে গেলেন দশ মিনিটের মধ্যে।

Advertisement

ফলে দুই ভাইয়ের লড়াইয়ের বদলে লাল-হলুদ সমর্থকরা দেখলেন বঙ্গসন্তান মহম্মদ রফিকের দর্শনীয় গোল। যার সুবাদে ডার্বি হেরে বিধ্বস্ত হওয়ার মাসের শেষেই লিগ টেবলে এক নম্বরে উঠে এল ইস্টবেঙ্গল। টানা চার ম্যাচ জিতে ছয় ম্যাচে ১৩ পয়েন্ট খালিদ জামিলের দলের।

ছোটবেলায় কোচ সোদপুরের সমীর চট্টোপাধ্যায় মানসিক ভাবে ভাল জায়গায় নেই। বাড়িতে অভাব। রোজ নেশা করছেন। সমস্যা জানতে পেরেই কোচের বেড়ার বাড়ি নিজের খরচে পাকা করে দিচ্ছেন মহম্মদ রফিক। মঙ্গলবার অনুশীলন সেরে কোচের সেই নির্মীয়মান বাড়ির ছবি দেখাচ্ছিলেন রফিক। বলছিলেন, ‘‘সমীরদা ভাল আছেন এখন।’’

নাটাগড়ের সেই মহম্মদ রফিক বুধবার রাতে এ বার বিপত্তারণ হলেন ইস্টবেঙ্গল কোচ খালিদ জামিলের। প্রথমার্ধের একদম শেষ দিকে মহম্মদ আল আমনার নেওয়া কর্নার গোকুলম এফসি-র লেফট উইঙ্গার ভিকি মিতেই হেড দিয়ে বক্সের বাইরে ফেলেছিলেন। সেই সেকেন্ড বলটা ধরার জন্য শিকারি বাঘের মতো বক্সের বাইরে ওঁত পেতে ছিলেন রফিক। বল পায়ে আসতেই কুড়ি গজের গোলার মতো শট। আর সেখান থেকেই ইস্টবেঙ্গলের এগিয়ে যাওয়া। লাল-হলুদ শিবিরের কোচ খালিদ জামিলকেও দেখা গেল গোলের পর তাঁর মুষ্টিবদ্ধ হাতটা অন্য হাতে ঠুকছেন। তার পরে ঘাড় ঘুরিয়ে গ্যালারিকে মেপে নিলেন এক বার। বাড়ি ফেরার সময় রফিক বলছিলেন, ‘‘আমার কাজ গোল করা। মাঠে নেমে সেটাই করার চেষ্টা করেছি।’’

গোকুলম এফসি কোচ বিনু জর্জ ইস্টবেঙ্গলের থেকে পয়েন্ট কাড়তে প্রতি-আক্রমণের রণনীতি নিয়ে নেমেছিলেন। ইস্টবেঙ্গল রক্ষণ প্রথমার্ধে বল পেলেই তুলে দিচ্ছিল প্লাজা কিংবা চার্লস-কে। এই সময় ইস্টবেঙ্গল না বাড়াতে পারছিল কোনও ফাইনাল পাস। না হচ্ছিল কোন পজিটিভ মুভ। এদুয়ার্দো, অর্ণবদের রক্ষণ থেকে তুলে দেওয়া লম্বা বল কেড়ে নিয়ে উল্টে ইস্টবেঙ্গল রক্ষণেই হানা দিচ্ছিলেন পরিবর্ত হিসেবে নামা ক্যামেরুনের ফ্রান্সিস আম্বানি। তাঁর ফ্রি-কিক বারে লেগে না ফিরলে শুরুতে পিছিয়ে যেতে পারত ইস্টবেঙ্গল।

খালিদ জামিল এ দিন ঘরের মাঠে শুরুতে আক্রমণে চার্লস ও প্লাজাকে রেখে শুরু করলেও এগিয়ে যাওয়ার পরেই দ্বিতীয়ার্ধে চার্লস-কে তুলে বাজি-কে নামানোর পরেই রক্ষণাত্মক হয়ে যাওয়ায় শেষ কুড়ি মিনিট দশ জনের গোকুলমকে পেয়েও গোল বাড়াতে পারেনি ইস্টবেঙ্গল। এই সময় কাতসুমিকে দৃষ্টিকটু ভাবে ফাউল করে লাল কার্ড দেখেছিলেন গোকুলম-এর রোহিত মির্জা। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গোল মিস করলেন চার্লস এবং প্লাজা। ব্রাজিলীয় চার্লস আবার কখনও কখনও এত নিচে নেমে আসছিলেন যে একা হয়ে যাচ্ছিলেন উইলিস প্লাজা।

এ দিন আই লিগ টেবলে এক নম্বরেই উঠে আসার সঙ্গে প্রথম বার লিগে কোনও ম্যাচে গোল না খেয়ে ড্রেসিংরুমে ফিরল ইস্টবেঙ্গল। সামনেই চারটি অ্যাওয়ে ম্যাচ। তার পরে ডার্বি। ইস্টবেঙ্গল কোচ বলছেন, ‘‘মণিপুরে নেরোকা-র বিরুদ্ধে খেলে এই অ্যাওয়ে পর্ব শুরু হবে। আমাদের সামনে তাই কঠিন লড়াই।’’

ইস্টবেঙ্গল: লুইস জেভিয়ার ব্যারেটো, প্রকাশ সরকার, অর্ণব মণ্ডল, এদুয়ার্দো ফেরেইরা, সালাম রঞ্জন সিংহ, কাতসুমি ইউসা (সুরাবুদ্দিন মল্লিক), মহম্মদ রফিক, মহম্মদ আল আমনা, লালডানমাউইয়া রালতে (ব্র্যান্ডন ভানলালরেমডিকা), উইলিস প্লাজা, চার্লস ডি’সুজা (বাজি আর্মান্দ)।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement