দুরন্ত: চেন্নাইকে চূর্ণ করে ডুডু। শনিবার হ্যাটট্রিকের পরে ইস্টবেঙ্গল স্ট্রাইকার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
ইস্টবেঙ্গল ৭ • চেন্নাই এফ সি ১
ছয় বছর আগের এক উৎসবের বিকেল ফিরল শনিবারের যুবভারতীতে!
আই লিগে সে বার যেমন মশাল ব্রিগেড ছারখার করে দিয়েছিল বেঙ্গালুরুর অফিস ক্লাব হ্যালকে। সেই একই ছবি এ দিন। পার্থক্য শুধু, ২০১১-১২ মরসুমে ফল ছিল ৮-১। এ বার হয়েছে ৭-১।
সেই ম্যাচে লাল-হলুদ জার্সিতে রামধনু হয়েছিলেন টোলগে ওজবে। একাই চার গোল করেছিলেন ওই অস্ট্রেলীয়। এ দিন তাঁকে ছুঁলেন এক নাইজিরিয়ান—ডুডু ওমাগবেমি। বয়সের হার্ডল পেরিয়ে হ্যাটট্রিক-সহ চার গোল করে!
তীব্র চাপ আর সমালোচনায় বিদ্ধ হয়েও ডুডুর পাশে ধ্রুবতারা হলেন আল আমনা।
নব্বই মিনিটের পরতে পরতে এত উজ্বলতা, এত রং, ইতিহাসের স্মৃতি উসকে দেওয়ার মতো ঘটনা।
তবুও, দোল উৎসবের চার দিন আগে ইস্টবেঙ্গল গ্যালারিতে ওড়েনি আবির। খালিদ জামিলের ড্রেসিংরুমের মতোই গ্যালারিও সংযম দেখাল গোলের বন্যা দেখেও। অপেক্ষায় রইল, চোদ্দো বছরের ট্রফি জয়ের খরা কাটিয়ে পূর্ণিমার আলোর মাহেন্দ্রক্ষণের জন্য। যে মাধুরী এখনও মেঘে ঢাকা।
চেন্নাইয়ের ডিফেন্স তছনছ করে ডুডু, আল আমনা, গ্যাব্রিয়েল ফার্নান্ডেজরা গোলের পর গোল করছিলেন, আর ইস্টবেঙ্গল কোচ প্রতিবারই মাথা ছোঁয়াচ্ছিলেন স্টেডিয়ামের সবুজ ঘাসে। বোঝা যাচ্ছিল, খালিদ ভাগ্যের দোয়া চাইছেন তাঁর ঈশ্বরের কাছে। লিগ টেবলের যা অবস্থা তাতে সহজ অঙ্ক হল, খেতাব জিততে হলে ইস্টবেঙ্গলকে বাকি দুটি ম্যাচ জিততে তো হবেই, পাশাপাশি মিনার্ভা পঞ্জাবকে তাদের বাকি তিনটি ম্যাচের একটিতে হারতে হবে। তবেই হেড টু হেডে চ্যাম্পিয়ন হতে পারবে ইস্টবেঙ্গল। জয়ের ইচ্ছাশক্তির সঙ্গে সে জন্যই ভাগ্যটাও যে দরকার খালিদের! ম্যাচের পর তাই তাঁর মুখ থেকে বেরিয়েছে, ‘‘৭-১ গোল ফ্যাক্টর নয়। তিন পয়েন্টটাই আসল। খেতাব নয়, পরের ম্যাচের জয় নিয়েই শুধু ভাবছি।’’ ইস্টবেঙ্গলের পরের ম্যাচ শিলং লাজংয়ের সঙ্গে। পাহাড় বরাবরই লাল-হলুদের গাঁট। সিঁদুরে মেঘ-দেখা আল আমনারা সতর্ক হবেন, স্বাভাবিক।
লিগের সাপ-লুডো নিয়ে চর্চা চলবে আরও দু’সপ্তাহ। কিন্তু এ দিনের পর যে আলোচনার তুফান উঠেছে তা হল, কোন জাদুকাঠিতে রাতারাতি বদলাল ইস্টবেঙ্গল? কোন রসায়নে শেষ পাঁচ ম্যাচ অপরাজিত থাকা চেন্নাই ভেসে গেল গোল-সুনামিতে? ইস্টবেঙ্গল কোচ বলছেন, ‘‘আমরা একটা দল হয়ে উঠতে পেরেছি।’’ আর খালিদের দলের ম্যানেজার মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যের মন্তব্য, ‘‘সবাইকে বোঝাতে পেরেছি, দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে, না জিতলে বাঁচা যাবে না।’’ ঘটনা হল, খালিদের দমবন্ধ করা অবিশ্বাসের ড্রেসিংরুমে মুক্ত হাওয়া এনে দিয়েছেন মনোরঞ্জন। কোচকে প্রকাশ্যে বিব্রত না করেও সমান্তরাল আর একটা ড্রেসিংরুম তৈরি করেছেন দলের ম্যানেজার। যেখানে সবাই মুখ খুলতে পারে।
গ্যালারিতে এ দিন ইস্টবেঙ্গলের কিছু ক্ষুব্ধ সমর্থক ক্লাব প্রশাসন-বিরোধী একটি ব্যানার লাগিয়েছিলেন। একটি বাংলা সিনেমার গানের আদলে তাতে লেখা, ‘‘দড়ি ধরে মারো টান /সরকার রাজ হবে খানখান/ ট্রফি যদি নাও পাই/ কাট মানি খাওয়া চাই।’’ খালিদের এ দিনের টিমে কোনও বঙ্গসন্তান খেলেননি। যাঁরা খেললেন, তাদের পক্ষে এই চারটি লাইনের সূক্ষ্মতা বোঝা সম্ভব নয়। তবুও এ দিন যে ফুটবল আল আমনারা খেললেন তাতে ছিল সূর্যের তেজ, আগুন এবং একই সঙ্গে অঙ্ক।
৪-২-৩-১ ফর্মেশনে টিম নামিয়েছিলেন খালিদ। শোনা যাচ্ছে, এই বদলটা আসলে মনোরঞ্জনের। ঘটনা যা-ই হোক, ডুডুকে বিপক্ষের চক্রব্যূহে একা না পাঠিয়ে পিছন থেকে পালা করে আনসুমানা ক্রোমা, আল আমনা আর ব্র্যান্ডন ফার্নান্ডেজরা তাঁর সঙ্গী হলেন। আর মাঝমাঠে সেকেন্ড বল ধরা বা কাড়ার জন্য নামানো হয়েছিল কাতসুমি আর কেভিন লোবোকে। আর তাতেই ছন্দ হারিয়ে ফেলল সুন্দররাজনের দল। ৩২ মিনিটের মধ্যেই ৩-০ হয়ে গেল। ৫৬ মিনিটের মধ্যে ডুডুর হ্যাটট্রিক। এর পর চেন্নাইয়ের মারহুর শরিফের ৫-১ করার গোল দাম পাবে কেন? পায়ওনি।
দক্ষিণের টিমকে লজ্জায় ডুবিয়ে এ বার পাহাড়মুখী ইস্টবেঙ্গল। শিলংয়েও মশাল জ্বলে কি না, তা জানতে অবশ্য দোল পেরিয়ে যাবে।
ইস্টবেঙ্গল: উবেইদ, মেহতাব সিংহ, গুরবিন্দর সিংহ, এদুয়ার্দো ফেরিরা, লালরাম চুলোভা (সালামরঞ্জন সিংহ), ইউসা কাতসুমি, কেভিন লোবো, আনসুমানা ক্রোমা, আল আমনা (জবি জাস্টিন), ব্র্যন্ডন ফর্নান্ডেজ (গ্যাব্রিয়েল যোশেফ), ডুডু ওমাগমেমি।