দল বাছা নিয়ে সমস্যায় বিরাট কোহালি। ছবি: এএফপি
ভারতীয় দলের হোটেলের সামনেটায় গেলে গুলিয়ে যাবে, ম্যাচ কোথায় হচ্ছে? বার্মিংহাম না বেঙ্গালুরু? অটোগ্রাফ বা সেলফি শিকারিদের ভিতরে ঢোকার অনুমতি নেই। বাইরে একটা ব্যারিকেড করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রবল উৎসাহ নিয়ে সেখানেই ঠায় অপেক্ষা করে চলেছেন ভারতীয় ক্রিকেটভক্তরা।
বিরাট কোহালি, মহেন্দ্র সিংহ ধোনিদের দেখা পাওয়াও যাচ্ছে। ভারতীয় ক্রিকেটারেরা নিয়মিত ভাবেই বাইরে খেতে যাচ্ছেন দল বেঁধে। তখন দেদার অটোগ্রাফ বা সেলফি দিচ্ছেন তাঁরা।
এঁদের অনেককেই দেখা গেল এজবাস্টন ক্রিকেট মাঠে শনিবার এসে পড়েছেন। বিরাট কোহালিকে দেখা মাত্র ‘স্যা-চি-ন, স্যা-চি-ন’ স্টাইলে ‘বি-রা-ট, বি-রা-ট’ গর্জন শুরু হয়ে গেল। বিভিন্ন গেটে ঘুরে ঘুরে তাঁরা সেই গর্জন তুললেন। প্র্যাকটিস থেকে বেরিয়ে ড্রেসিংরুমে যাওয়ার আগে কোহালি অটোগ্রাফ, সেলফির আবদারও মিটিয়ে গেলেন। তখন আবার কোহালিকে নিয়ে গান গেয়ে উঠলেন ভক্তরা।
বরাবর পাকিস্তান ম্যাচ মানেই কোহালিকে বাড়তি ফোকাস করতে দেখা যায়। এ দিনও তার কোনও ব্যতিক্রম হল না। কোচ নিয়ে বিতর্ক দূরে সরিয়ে রেখে নেটে ব্যাট করলেন প্রায় পঁয়তাল্লিশ মিনিট। তার মধ্যে এক বার আচমকা বল লাফিয়ে হাতে লাগল। যদিও সেই আঘাত গুরুতর কিছু নয় বলে জানিয়ে গেলেন অটোগ্রাফ দেওয়ার ফাঁকেই।
তাঁকে নিয়ে এমন প্রাক-ম্যাচ উৎসবের আমেজের মধ্যেই অবশ্য বড়সড় এক সিদ্ধান্তের মুখে দাঁড়িয়ে ভারত অধিনায়ক। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পেস না স্পিন— কোনটাকে অস্ত্র করবেন? প্রস্তুতি ম্যাচে পেসাররা দারুণ বল করেছেন। মহম্মদ শামি, ভুবনেশ্বর কুমার, উমেশ যাদব, যশপ্রীত বুমরা— সকলে ফর্মে আছেন। আবার দুই স্পিনার অশ্বিন এবং রবীন্দ্র জাডেজা। এবং, ফর্মের বিচারে এক স্পিনার নিয়ে খেলতে হলে বসাতে হয় অশ্বিনকে।
এতটাই দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে দল যে, সাংবাদিক সম্মেলনে কোহালি স্বীকারও করে গেলেন, ‘‘সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে। সবাই ভাল বল করেছে। কাল ম্যাচের দিন এসে কন্ডিশন দেখে ঠিক করব।’’ মেঘলা আকাশ থাকায় অন্তত তিন পেসার খেলানোর দিকে পাল্লা ভারী। সেক্ষেত্রে শামি, বুমরার সঙ্গে ভুবনেশ্বর বা উমেশের মধ্যে এক জন খেলবেন। পাঁচ বোলারে খেলার কথাই ভাবছে ভারত। সেই নকশা মেনে এগোলে দুই স্পিনারকেই খেলানো হবে। অশ্বিন না জাডেজা, সেই কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার হাত থেকে রক্ষা পেতে পারেন কোহালি।
তবে পাঁচ বোলারে খেললে হার্দিক পাণ্ড্য না কেদার যাদব— কাকে খেলানো হবে তাও ঠিক করতে হবে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রত্যেকটি ম্যাচেই বড় রানের প্রবণতা দেখা গিয়েছে। এজবাস্টনে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের ম্যাচেও রান হয়েছে। সেই কারণে বোলিং মজবুত না করে নামলে ভুগতে হতে পারে। পাকিস্তানের বিদেশি কোচ মিকি আর্থারও বলে গেলেন, ‘‘আমাদের লক্ষ্য থাকবে ভারতকে অলআউট করা। যদি রান আটকে রাখার চিন্তা নিয়ে নামি, তা হলে ভুগতে হতে পারে।’’ অর্থাৎ, পাকিস্তানও পাঁচ বোলারে খেলার কথাই ভাবছে।
যুযুধান দুই দলই ধরে নিয়েছে, বোলারদের জন্য কঠিন সময় অপেক্ষা করছে। পাকিস্তান যেমন কোহালির বিরুদ্ধে সবচেয়ে সফল জুনেইদ খান-কে প্রথম একাদশেই রাখেনি। অথচ, বার্মিংহামে নেমেই বাঁ-হাতি জুনেইদ উত্তপ্ত কথাবার্তা বলে স্লেজিং চালু করে দিয়েছিলেন। কোহালির বিরুদ্ধে জুনেইদের সাফল্য চার বছর আগে ঘটেছিল বলে সেই পরিসংখ্যানকে খুব গুরুত্ব দিতে চায়নি তাঁর দল। ভারতের বিরুদ্ধে বরাবর সফল শোয়েব মালিকের ক্ষেত্রে যদিও এমন ভাবনা নেই। তাঁরও সাফল্য অনেক আগে এলেও পুরনো রেকর্ডের ওপর আস্থা রাখছে দল।
সানিয়া মির্জার স্বামী এবং মহম্মদ হাফিজকে বাদ দিলে পাকিস্তান দলটা তারুণ্যে ভর্তি। পাক বোর্ড চাইছে, ২০১৯ বিশ্বকাপের দিকে তাকিয়ে নতুন প্রজন্মের দল গড়ে তুলতে। সেই কারণেই সরফরাজ আমেদ-কে অধিনায়ক করে তরুণ দল পাঠানো হয়েছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে। মিসবা-উল-হক, শাহিদ আফ্রিদি-র মতো কোনও তারকা এই দলে নেই। ভারত-পাকিস্তান শেষ ম্যাচ হয়েছিল অ্যাডিলেডে ২০১৫ বিশ্বকাপে। সেই দলের মাত্র দু’জন বার্মিংহামে আছেন। দলের ন’জন ক্রিকেটার এই প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলবেন। ভারত সেখানে তারুণ্য নয়, অভিজ্ঞতার ওপর ভর করে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দল গড়েছে। এজবাস্টনের মহারণ তাই অভিজ্ঞতা বনাম তারুণ্যেরও!