অপ্রতিরোধ্য: ফরাসি ওপেনে যথারীতি সেই ছবি। বিজয়ী নাদাল ট্রফি কামড়াচ্ছেন। রবিবার প্যারিসে। এপি
অবিশ্বাস্য! চোখের সামনে দেখেও যেন বিশ্বাস করতে পারছি না। পনেরো বছরের মধ্যে ১২টা গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতছে এক জন, তাও এ রকম দাপটে! আমিও একটু-আধটু টেনিস খেলেছি, গ্র্যান্ড স্ল্যামে সেরা খেলোয়াড়দের মুখোমুখি হয়েছি, সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, ক্লে কোর্টে রাফায়েল নাদালের মতো কোনও খেলোয়াড় জন্মায়নি।
নাদালকে বলা হয় ‘ওয়াল’। দেওয়ালের মতো তো যত জোরে ওর দিকে বল মারবে তত জোরে তোমার দিকে বল ফিরে আসবে। রবিবারের ফাইনালে নাদালের প্রতিদ্বন্দ্বী অস্ট্রিয়ার দমিনিক থিমকে দেখে আমার সে রকমই মনে হচ্ছিল। চার সেটের লড়াইয়ে নাদাল শেষ পর্যন্ত ৬-৩, ৫-৭, ৬-১, ৬-১ জিতলেও থিম অসাধারণ খেলেছে। বিশেষ করে প্রথম সেটে সাতটা গেমে এত তীব্রতা, এত নাটক ছিল, ফাইনালের প্রতিটা দর্শক বোধহয় সিট ছেড়ে উঠে পড়েছিল নাদাল-থিমের ওই সময়ের লড়াই দেখতে দেখতে। একেবারে সর্বোচ্চ পর্যায়ের টেনিস দেখাল দুই খেলোয়াড়।
দ্বিতীয় সেটে সার্ভিস ভেঙে থিম যে ভাবে সেট দখল করে নিল সেটা খুব বেশি দেখা যায়নি নাদালের বিরুদ্ধে। অবশ্য থিমের ওই প্রতিরোধের পরেই ম্যাচটা ঘুরে যায়। নাদাল একেবারে অন্য রূপে ফিরে আসে। তার পরে দুটো সেটে একেবারে নিখুঁত টেনিস দেখলাম সর্বকালের সেরা ক্লে কোর্ট খেলোয়াড়ের। এক জন সত্যিকারের চ্যাম্পিয়ন ঠিক সময়ে নিজের খেলাকে পাল্টে ফেলতে পারে। নাদাল যেটা করল ওই সময়।
থিমের আগ্রাসন দেখে নাদাল বুঝে গিয়েছিল বয়সে আট বছরের ছোট প্রতিপক্ষকে হারাতে হলে ওকেও পাল্টা আগ্রাসন দেখাতে হবে। যে জন্য বেস লাইনের অনেক কাছাকাছি খেলছিল নাদাল। যাতে থিমের শট অনেক তাড়াতাড়ি র্যাকেটে পেতে পারে। বিশেষ করে ব্যাকহ্যান্ড। ওই সময় ওকে নেটেও বেশ কয়েক বার উঠে আসতে দেখা গিয়েছিল। যেটা ওর আগ্রাসী টেনিসেরই সবচেয়ে বড় প্রমাণ।
গত কয়েক মরসুমে চোট-আঘাতে সমস্যায় পড়েছিল নাদাল। চলতি মরসুমেও তিনটে প্রস্তুতি প্রতিযোগিতার একটাতেও জিততে পারেনি। শুধু রোম ওপেন ছাড়া কোনও ট্রফি পায়নি। যেটা আগে খুব কমই দেখা গিয়েছে ওর কেরিয়ারে। তাই অনেকে ভেবেছিলেন নাদালের দাপট হয়তো এ বার অতটা থাকবে না ওর কাছে ঘর-বাড়ি হয়ে ওঠার মতো ফরাসি ওপেনে। কিন্তু নাদাল প্রতিযোগিতার শুরু থেকেই দেখিয়ে গিয়েছে ক্লে কোর্ট মানেই ওর সাম্রাজ্য। সেখানে অন্য কারও শাসন চলার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। তাই প্রবল প্রতিরোধে পড়ার পরে নাদালের ওই একটা চালে থিম মাত হয়ে গেল। টিভিতে দেখছিলাম প্রথম দু’সেটে নাদালের আনফোর্সড এররের সংখ্যা ছিল ২২। তৃতীয় সেটে সেটা পাঁচও গড়ায়নি। এতেই বোঝা যায় কতটা নিখুঁত খেলেছে ওই সময় নাদাল। চ্যাম্পিয়নরা তো এ ভাবেই ফিরে আসে। পরের দুটো সেট ৬-১, ৬-১ জিতে ম্যাচও দখল করে নিতে নাদালের আর সমস্যা হয়নি।
অবশ্য থিমকে কিছুটা ক্লান্তও লাগছিল। বৃষ্টির জন্য ফরাসি ওপেনের ম্যাচগুলো ক্রমশ পিছিয়ে যাওয়ায় টানা চার দিন ধরে খেলতে হল ওকে। তাও আবার নোভাক জোকোভিচকে পাঁচ সেটে ছিটকে দেওয়ার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই নামতে হয়েছিল ফাইনালে। তাই ক্লান্তি চেপে বসাটা স্বাভাবিক। থিম ক্লে কোর্টে যে রকম খেলছে তাতে বলা যায়, ছেলেটার ফরাসি ওপেন জেতার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সেটা হয়তো নাদাল অবসর নেওয়ার পরে।
১২ নম্বর ফরাসি ওপেন এবং ১৮ নম্বর গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতার পরে নাদাল ফেডেরারের সর্বাধিক ২০টা গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের থেকে আর দু’ধাপ দূরে। অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন, এই নাদাল কি ফেডেরারের রেকর্ড ভাঙতে পারবে? আমি বলব, পারবে। যদি ও এ ভাবেই খেলে যেতে পারে, তা হলে আরও দু’-তিনটে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতা সম্ভব। তবে নাদালের এই রেকর্ড কোনও দিন কেউ ভাঙতে পারবে বলে মনে হয় না। টেনিসের ইতিহাসে ১২ বার ফরাসি ওপেন কেউ কোনও দিন জেতেনি। ২০০৫ থেকে প্যারিসে নাদাল যে দাপট দেখিয়েছে তার ধারে-কাছে আসাটাও বিরাট ব্যাপার। যদি কেউ পারেও ক্লে কোর্ট সম্রাটের মুকুট এক জনের মাথাতেই থাকবে— রাফায়েল নাদাল।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।