‘লগান’ ছবির কাচরাকে মনে পড়ে? যাঁর দুরন্ত স্পিনের হদিশ পায়নি ব্রিটিশ বাহিনী। এক্কেবারে সিনেমার সেই চরিত্রই এ বার বাস্তবের পাতায়। শঙ্কর সজ্জন। বয়স ১৮। শঙ্করের হাতের দুটো পাতা একেবারে তালু থেকে ঘুরে গিয়েছে। আর এটাই প্রায় অপ্রতিরোধ্য করে তুলতে পারে সজ্জনকে।
আফগান ক্রিকেটারদের অনুশীলনের সময় তাঁকে বল করতে দেখা যায়। সেই সময়ই সবার চোখে পড়েন তিনি। শঙ্করের প্রতিবন্ধকতা হার মেনেছে মনের জোরের কাছে। আফগান ক্রিকেটার রশিদ বলেন, সজ্জনকে খেলতে তাঁদের অসুবিধা হয়েছে কয়েকবার অনুশালীনের সময়ও।
শঙ্কর অত্যন্ত দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা এক তরুণ। কর্নাটকের ইয়াদগির জেলার কৃষক পরিবারে জন্ম। এত ছোটবেলায় মাকে হারিয়েছেন যে, মায়ের স্মৃতিটাও নেই।
অনটন ছিল শঙ্করের ক্রিকেট খেলতে আসার পথে বিশাল বাধা। তার মধ্যে যে ছেলেকে প্রায়ই শুনতে হয়েছে শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কথা।
আফগান ক্রিকেটার রশিদ খান ছাড়াও শঙ্করের জীবনের অন্যতম অনুপ্রেরণা অনিল কুম্বলে। বাড়ির পাশের মাঠে ছোট থেকে খেলতেন। ‘কন্নড়’ পত্রিকায় স্পিনারদের জন্য একটা বিজ্ঞাপন দেখেন তিনি। তারপরই বেঙ্গালুরুতে ব্রিজেশ পটেল ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে যোগ দেন তিনি। অনিলই বলেছিলেন, ‘‘এই ছেলে অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠার ক্ষমতা রাখে। দেশের সর্বত্রই এমন প্রতিভা রয়েছে। খুঁজে আনতে হবে।’’
তবে লড়াই ছিল মারাত্মক। ‘ক্রোমোজোম ইমব্যালেন্স’-এর জন্য হাতে ঠিক ভাবে কিছু ধরতেও পারে না আর পাঁচ জনের মতো। অন্যান্য শারীরিক সমস্যাও হয়। কিন্তু তা নিয়েও স্পিনে ভেলকি দেখাচ্ছেন তিনি।
আফগান তারকাদের সঙ্গে অনুশীলনে সাহায্য করাটা তাঁর জীবনে অন্যতম একটা ভাল লাগা, জানিয়েছেন শঙ্কর। আর বলেছেন, আর পাঁচ জনের সঙ্গে অনুশীলন করতে কখনও কোনও সমস্যা হয়নি। আর তিনি নিজেকে আলাদা করে কিছু ভাবতেও চান না, সংবাদ সংস্থাকে এমনটাই বলেন শঙ্কর।
শঙ্কর ‘অনিল কুম্বলে স্পিন হান্ট’ ২০১৫ সালে ৩০০০ জন প্রতিযোগীর মধ্যে নির্বাচিত হন। মাত্র ২১ জন সুযোগ পেয়েছিলেন। সেই থেকেই বেঙ্গালুরুর অ্যাকাডেমিতে অনুশীলন। স্বপ্ন একটাই, ভারতের জাতীয় দলে খেলার।
কর্নাটকে স্টেট ক্রিকেট অ্যকাডেমিতে ফিফথ ডিভিশনে ক্রিকেট খেলার সঙ্গে সঙ্গে শঙ্কর মাল্টিন্যাশনাল একটি সংস্থায় ছোট একটা কাজ করেন। পরিবারের প্রত্যেকের পাশে দাঁড়াতে চেষ্টা করছেন। আর একই সঙ্গে স্নাতক স্তরের পড়াশোনা করছেন।
বি এস চন্দ্রশেখরকেই আদর্শ বলে মনে করেন শঙ্কর। স্পিনের গতিতে অন্য দেশের ক্রিকেটারদের মনে ভয় ধরাতে চান সজ্জন।