গোলের পথে ফোরলান। ছবি: উৎপল সরকার।
তাঁর বয়স ও পারফরম্যান্স নিয়ে আটলেটিকো দে কলকাতার কোচ জোসে মলিনার কটাক্ষের জবাবটা শেষ পর্যন্ত মাঠেই দিয়ে গেলেন দিয়েগো ফোরলান!
আর সেই জবাবের জোর এতটাই ছিল যে, মঙ্গলবারের ম্যাচ হেরে মিডিয়াকে এড়িয়ে একরাশ হতাশা আর রাগ নিয়ে স্টেডিয়াম ছেড়ে দ্রুত বেরিয়ে যান এটিকে-র স্প্যানিশ কোচ। ম্যাচের শেষ দিকে রেফারির সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ে মাঠ থেকে বেরিয়ে যেতে হয়েছিল তাঁকে। রেফারির রোষে পড়া, নির্বাসনের খাঁড়া এবং ফোরলানের গোল— সব মিলিয়ে এটিকে-র কোচিং করাতে এসে প্রথম বার মেজাজ হারাতে দেখা গেল হিউম-দ্যুতিদের কোচকে। সংগঠকরা শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির সিদ্ধান্তের কথা বলে বিতর্ক এড়ালেও যা খবর, তাতে আপাতত একটা ম্যাচ মাঠের বাইরে বসতে হবে মলিনাকে। ম্যাচ কমিশনার ও রেফারি রিপোর্ট দেওয়ার পর তা বাড়বে কি না, সেটা হয়তো জানা যাবে আজ বুধবার। তবে এ দিন মিডিয়ার সামনে এসে সহকারী কোচ বাস্তব রায় বলে দেন, ‘‘মলিনা এমন কিছু করেননি যাতে তাঁকে মাঠের বাইরে পরের ম্যাচে বসতে হবে।’’
ফোরলানের বয়স ও পারফরম্যান্স নিয়ে ম্যাচের আগের দিনই হিউমদের কোচ ব্যঙ্গ করেছিলেন। আর সেই উরুগুয়ে স্ট্রাইকারের গোলেই প্রথম হার হল কলকাতার। ফলে মলিনা এতটা-ই হতাশ ছিলেন যে, ড্রেসিংরুমে ফুটবলাররা ফেরার পরেও নাকি সে ভাবে কারও সঙ্গে কথা বলেননি। শুধু প্র্যাকটিসের কথা জানিয়েই ড্রেসিংরুম থেকে বেরিয়ে যান হাবাসের উত্তরসূরী। সাধারণত ম্যাচের পর দিন ফুটবলারদের বিশ্রাম দেন এটিকে কোচ। কিন্তু আজ তিরি-অর্ণবদের কোনও ছুটি নেই। যাঁরা ম্যাচ খেলেছেন, তাঁদের রিকভারি সেশন থাকছে। আর যাঁরা প্রথম একাদশে ছিলেন না, তাঁদের অন্য দিনের মতো প্র্যাকটিস রয়েছে। মলিনা এ দিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হননি। তবে তাঁর সহকারী বাস্তব দাবি করলেন, ‘‘আমরা গোলের সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারিনি। আর ওরা একটা সুযোগই কাজে লাগিয়ে জিতে গেল।’’ দেবজিৎ-জাভি লারা-বোরাহারা মাথা নীচু করে বেরিয়ে টিম বাসে উঠে পড়লেন। হিউম শুধু কয়েক মিনিটের জন্য দাঁড়ালেন মিক্সড জোনে। বললেন, ‘‘গোল নষ্টের খেসারত দিতে হল আমাদের। বিরতির পর অনেক গোলের সুযোগ পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারিনি।’’
গোলের পর ফোরলানকে দেখা যায়, হাতে ইংরেজির ‘পি’ এবং ‘এম’ মুদ্রা করে সতীর্থদের দিকে দৌড়ে আসতে। সেটা কি মলিনার জন্য কোনও ইঙ্গিত ছিল? মিক্সড জোনে এসে ফোরলান প্রশ্ন শুনে হেসে ফেললেন। তারপর বোঝালেন মলিনা নয়, পরিবারকে চেনাতে এটা করেছেন তিনি। বললেন, ‘‘পি মানে আমার স্ত্রী পাজ এবং এম হল আমার ছেলে মার্টিন। ওদের কথা মনে করেই আমি ওই মুদ্রা করেছিলাম।’’ আর গোলটা নিয়ে কী বলবেন? নিজের কৃতিত্বকে পিছনে রেখে একজন যোগ্য অধিনায়কের মতোই সোনার বলের মালিক বলে দিলেন, ‘‘আসলে এই ম্যাচটা খুবই কঠিন ছিল। আমরা তিন পয়েন্ট পেয়েছি এটাই আসল। সনি নর্ডিও খুব ভাল খেলেছে। ও ভাল প্লেয়ার।’’
কলকাতার বিপক্ষে খেললেও সনি নিয়ে আগের দিন থেকেই আবেগপ্রবণ ছিল শহর। এ দিন যখন সনি মাঠ ছেড়ে উঠে যাচ্ছেন, গ্যালারির একটা অংশকে দেখা যায় তাঁকে অভিনন্দন জানাতে। সনিকে উইঙ্গারে না খেলিয়ে এ দিন স্ট্রাইকারে খেলান মুম্বই কোচ আলেকজান্দ্রো গুইমারেস। হঠাৎ করে আপনার জায়গা পরিবর্তন কেন? সনি জানালেন, ‘‘কোচ এটা সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছেন। সবাই জানত আমি উইঙ্গারে খেলব। আমাকে আটকানোর জন্য সে ভাবে স্ট্র্যাটেজিও সাজানো হবে। হয়তো সেটা বানচাল করতেই কোচ এই স্ট্র্যাটেজি নিয়েছিলেন।’’
সনি-ফোরলান জুটিতেই এ দিন কলকাতা-বধ করলেন গুইমারেস। সঙ্গে মলিনাকেও যেন শিক্ষা দেওয়ার ঢঙে কোস্তারিকার বিশ্বকাপার বলে গেলেন, ‘‘ফোরলান আমার টিমের সেরা প্লেয়ার। এটা নিয়ে কারও কোনও সংশয় নেই তা হলে!’’