ওজন মাপার মেশিনগুলোর উপর দাঁড়াতে আমার খুব নার্ভাস লাগে। দুঃখের ব্যাপার হল, আজকাল সব পাঁচতারা হোটেলের বাথরুমে ও রকম একটা মেশিন লোকানো থাকে। আর এক রাউন্ড হট চকোলেট ফাজ খেয়ে এতটাই অনুতাপে ভুগি যে, ওগুলোর উপর দাঁড়াতেই হয়। তবে কলকাতায় হোম ম্যাচ খেলার সময় ব্যাপারটা আলাদা। এখানে আর্দ্রতা এত বেশি যে, প্রচুর জল খেলেও শরীরকে ক্লান্ত করে দেয়। মনে হয় ওজনটা যেন শুষে নেওয়া হচ্ছে।
কলকাতায় থাকলে তাই প্রচুর আইসক্রিম খাই। এর মধ্যেও অবশ্য ওজন মেপেছি। শনিবার সকালে, ব্রেকফাস্টের পর। যা দেখলাম, চোখ কপালে উঠে যাওয়ার মতো। বেশ ভয়েরও। গত একটা সপ্তাহে আমার ওজন প্রায় তিন কেজি কমে গিয়েছে!
আমার ঘামগ্রন্থি এমনিতেই দারুণ সচল। তার উপর এখন যোগ হয়েছে অধিনায়কত্বের চ্যালেঞ্জ। মাঝে মাঝে মনে হয়, নেতৃত্বের প্রভাবে ঘামগ্রন্থি এখন ক্যাসিনোর স্লট মেশিনের মতো কাজ করছে। শরীর থেকে গ্যালন গ্যালন জল বের করে দিচ্ছে। একটা টিমকে বহু বছর ধরে নেতৃত্ব দিতে দিতে কিছু পরিস্থিতি গা-সওয়া হয়ে যায়। কিন্তু ম্যাচ হারার যে হতাশা, সেটা কোনও দিন যায় না।
রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর কাছে হেরে শনিবার মহেন্দ্র সিংহ ধোনির মনের কী অবস্থা হতে পারে, আমি তাই বুঝতে পারছি। ১৯১-৬ ভাল স্কোর, কিন্তু জেতার মতো নয়। বেঙ্গালুরুর পিচ আর মাঠের বিচারে পঁচিশ রান মতো কম।
বল করার সময় ধোনির টিম বেশ তাড়াতাড়িই লোকেশ রাহুল আর এবি ডে’ভিলিয়ার্সকে ফিরিয়ে দিয়েছিল। তার পর পুণের সামনে এসে দাঁড়াল ভয়ঙ্কর বিরাট কোহালি। যাকে যোগ্য সঙ্গত দিয়ে গেল শেন ওয়াটসন। হ্যাঁ, বিরাট আর ওয়াটসন অসাধারণ ব্যাট করেছে। কিন্তু ম্যাচটা দেখতে দেখতে ধোনির জন্য খারাপ না লেগে পারবে না।
শুধু এই ম্যাচটা নয়। এমনিতেও চোট বা খারাপ ফর্মের ধাক্কায় বিধ্বস্ত ধোনি সব রকম বোলিং কম্বিনেশন নামিয়ে দেখেছে। ইশান্ত শর্মা, ইরফান পাঠান, অ্যালবি মর্কেল, মুরুগন অশ্বিন, মিচেল মার্শ— সবাইকে খেলিয়েছে। এই ম্যাচে নামিয়েছিল অশোক দিন্দা, আরপি সিংহ, থিসারা পেরেরা আর এক ওভারে রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে। তবু জিততে পারল না।
সব দেখেশুনে যা অনুমান করছি, সেটা খুব সহজ। আমি সব সময় সেটা মেনেও এসেছি। ব্যাপারটা হল— দল যত ভাল, ক্যাপ্টেনও ততটাই ভাল। পুণের এখন যা অবস্থা, তার জন্য অধিনায়ক ধোনিকে দোষ দেওয়া ভুল হবে। কারণ ও নিজের সেরা চেষ্টাটা করে গিয়েছে। অতীতে আমার এই ভাবনা আঁকড়ে থাকা নিয়ে আমার সমালোচকেরা অনেক কিছু বলেছেন। অনেকে তো এমনও বলেছেন যে, আমি ধোনির নিন্দা ছাড়া কিছু করি না। ভারতীয় দল জিতলে তার কৃতিত্ব নাকি ওকে দিতে চাই না।
যা একেবারেই সত্যি নয়। চেন্নাই সুপার কিংগসে ও যে সব প্লেয়ার পেয়েছিল, তাদের আবার ধোনির টিমে খেলান। দেখবেন, অধিনায়ক ধোনি পাল্টে গিয়েছে। রায়না, ব্র্যাভো, ম্যাকালাম, জাডেজা, এদের ফিরিয়ে আনলেই কিন্তু ধোনির ক্যাপ্টেন্সি অটোপাইলটে চলে যাবে। ক্যাপ্টেন ততটাই ভাল যত ভাল তার টিম— আমার এই বিশ্বাসটা এতে আরও বেশি করে প্রমাণ হয় না কি?
কেকেআরের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা খাটে। টিমের সাফল্যের জন্য আমি ওই ড্রেসিংরুমের সবার উপর নির্ভর করে থাকি। কেকেআর মানে শুধুই গৌতম গম্ভীর, মোটেও এমন নয়। বরং বলব, গৌতম গম্ভীর পুরোটাই কেকেআরের জন্য। সতীর্থদের সমর্থন ছাড়া আমার নেতৃত্ব বা স্ট্র্যাটেজি, সব মূল্যহীন। ক্লাব টিম, প্রথম শ্রেণির দল, ভারত বা এখন আইপিএল টিম, যাদেরই অধিনায়কত্ব করি না কেন, আমার মনোভাবটা একই থেকেছে।
আমার মনে হয় ভারতবর্ষে মাঝে মাঝে আমরা ভুলে যাই যে, ক্রিকেট একটা টিম স্পোর্ট। আর ভুলে গিয়ে কোনও একজনের উপর বড্ড বেশি ফোকাস করে ফেলি।
(দীনেশ চোপড়া মিডিয়া)
আজ আইপিএলে
কলকাতা নাইট রাইডার্স বনাম গুজরাত লায়ন্স, ইডেন, রাত ৮-০০
মুম্বই ইন্ডিয়ান্স বনাম সানরাইজার্স হায়দরাবাদ, বিশাখাপত্তনম, বিকেল ৪-০০